রাইট। বলো।
তন্দ্রা প্যাকেটটা দেখে যেন লোভে পড়ে গেল। সে আমাকে শাসাতে থাকলটাকার ভাগ না দিলে পানিগ্রাহীর কানে তুলবে। তখন ওকথা ঠাট্টা ভেবেছিলুম। পরে ও্যখন সমানে ঘ্যানর-ঘ্যানর চালিয়ে গেল বুঝলুম ও সিরিয়াস। এক ফাঁকে একটা শাসানি চিঠি লিখে ফেলে রাখলুম দরজার পাশে।
সেই চিঠিটা–ডাইনী মেয়েরা!
হ্যাঁ। তাতেও বিশেষ ভয় পেল না তন্দ্রা। তখন সেই বহুরূপীটাকে ঠিক করলুম গোপনে।
আর মিস শান্তা কী করল?
খুব ভয় পেয়েছিল তো। একটু পরেই কেটে পড়েছিল প্রাণ বাঁচাতে। তাছাড়া পুলিসের খাতায় ওর দাগী নামও রয়েছে। দেখলুম, ভারতবাবুর মুখটা গম্ভীর। সব শালা খচ্চর! ভারতবাবু শান্তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল–ভাবা যায়?
তারপর?
সারা বিকেল তন্দ্রা আমাকে টাকা দাবি করতে থাকল। রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল। রাত সাড়ে নটায় শার্কের ওই কাণ্ডের পর বাংলোয় নিয়ে গেলুম ওকে–পালানোর ছলে। বললুম– ঠিক আছে–ভাগ দেব টাকার। কিন্তু তন্দ্রা প্যাকেটের অর্ধেক ভাগ দাবি করে বসল তখন। তন্দ্রার হিসট্রি আছে–সে ইচ্ছে করলে পুলিস বের করতে পারে। ও নানা ঘাটের জল খাওয়া মেয়ে। খুব সহজ নয়। জেদী। কুচুটে। খানকি তো বটেই। সেই সময় কথামতো কল্যাণী হাজির হলো। আমার প্ল্যান তো ওই গাড়োল পানিগ্রাহীদাটার মতো নয়। সিম্পল অ্যাণ্ড স্ট্রেইট। গাড়ির শব্দ হতেই পানিগ্রাহী এলেন তাহলে, এই বলে তন্দ্রা সিগারেটটা নিবিয়ে ফেলল। তক্ষুনি সবে ধরিয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণে সব টের পেয়ে গেল। ওর চোখের সামনে প্যাকেটটা নিয়ে গিয়ে দরজা খুললুম। কল্যাণীকে ওটা দিয়ে দরজা থেকেই বিদায় করলুম। তারপর দরজা বন্ধ করে দেখি ও রাগে ফুঁসছে। লাফিয়ে এসে আমার চুল ধরল– কাকে দিলে, কে ওই মেয়েটি?…রিয়েলি কর্নেল, ওই ঢ্যামনামি দেখে তখন মাথায় আগুন ধরে গেল। এমন ভাব দেখাচ্ছে, যেন আমার সাতপাকে বাঁধা বউ। ক্রমশ ও ক্ষেপে গেল। অকথ্য গালিগালাজ শুরু করল। আমার প্রেমও চায়, টাকাও চায়–সেক্সের ব্যাপারেও হিংসে, আবার টাকার ব্যাপারেও লোভ। তন্দ্রা– এই তন্দ্রাটা কী, আমি বুঝে উঠতে পারছিনে এখনও। শেষে ও করল কী জানেন?…বিশ্বাস করুন, ওকে স্রেফ মারধোর করে বেঁধে রেখেই সোজা কল্যাণীদের বাড়ি চলে যেতুম–কিন্তু হঠাৎ ও হাত বাড়িয়ে টেবিলে পড়ে থাকা আমার ছোরাটা তুলে নিল। আমার আর সহ্য হলো না। ছোরাটা কেড়ে নিয়ে ওর চুল ধরে বেডরুমে ঢোকালুম। তারপর… সুমন্ত দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল। … কিন্তু আমি সত্যি ভালবাসতুম ওকে। ও যে আমাকে স্রেফ টাকার লোভে ব্ল্যাকমেইল করে বসবে, আমি কল্পনাও করিনি।
সুমন্ত, প্লীজ!
বলুন।
তাহলে তুমি পোশাক বদলেছিলে–
রক্ত লেগে গিয়েছিল, তাই। ওভাবে পানিগ্রাহীদার কাছে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
ছোরাটা টেবিলে কোত্থেকে এল?
বেডরুম থেকে এনে রেখেছিলুম। বিছানায় রাখা ছিল বালিশের নিচে।
কেন এনেছিলে?
সুমন্ত জবাব দিল না।
সুমন্ত, কখন ছোরাটা বেডরুম থেকে এনেছিলে?
ঘরে ঢোকার পরই।
তখন মোমবাতি জ্বেলেছিলে?
না। একটু পরে সিগারেট ধরিয়ে জ্বেলেছিলুম।
তাহলে তোমার মাথায় খুনের মতলব ছিলই, সুমন্ত অস্বীকার করো না।
জানি না। যখন ওটা আনি, খুন করব বলে আনিনি। বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছে।
বিশ্বাস করলুম না–দুঃখিত, সুমন্ত। কারণ আমি যুক্তিবাদী।…কর্নেলের, কণ্ঠস্বর গম্ভীর হলো। তার চোখদুট জ্বলজ্বল করতে থাকল।…তুমি তন্দ্রার প্রথম রিঅ্যাকশন হোটেলে লক্ষ্য করার সঙ্গে সঙ্গে খুনের সিদ্ধান্তে এসেছিলে। প্রবীর বহুরূপীকে তুমি যা করতে বলেছিলে, তার পিছনে তোমার ওই সিদ্ধান্তের চাপ ছিল। ওই শো-বিজনেস! নিছক ভয় দেখিয়ে তাকে চুপ করানোর জন্য নয়। তন্দ্রা যে অত সহজে চুপ করবে না–কিংবা তখনকার মতো করলেও পরে সুযোগ মতো মিঃ পানিগ্রাহীর কাছে সব ফাঁস করে দেবে, এই ছিল তোমার ধারণা। তাকে তো তুমি ভালই চিনতে। তাই যখনই লক্ষ্য করলে যে তন্দ্রা তোমার অসহযোগী, তুমি তোমার অভিজ্ঞতা অনুসারে ধরে নিলে, তন্দ্রা বরাবর অসহযোগী থেকে যাবে–
ডাঃ পট্টনায়ক বলে উঠলেন, যতক্ষণ না সুমন্ত ওকে ক্যাশ অর কাইণ্ডস কোনও ভাগ দিচ্ছে।
ঠিক। সেটাই হচ্ছে তন্দ্রার রিঅ্যাকশন বা অসহযোগিতামূলক মনোভাবের প্রেমিস। তুমি একা সব হাতাতে চেয়েছিলে সুমন্ত। আধুনিক সমাজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লোভটাকার প্রতি লোভ, যে লোভ হাঙরের মতো প্রতিটি মানুষকে গ্রাস করে চলেছে, তার খপ্পরে তুমি আর তন্দ্রা অনেক আগেই পড়েছ। তাই যে মুহূর্তে এক ভাগীদারকে আচমকা মাথা তুলতে দেখলে, তুমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে। এই ভাগীদারটি কতখানি বিপজ্জনক হতে পারে, তাও জানা ছিল তোমার। সুতরাং তুমি একটি নাটকীয় মোডস অপারেণ্ডির পথ ধরলে। হাঙরের রাতের ঘটনা সকালে রটতে দেরি হবে না, সবাই জানবে কোনও মুখোশপরা খুনী দুজনকে তাড়া করে নিয়ে গিয়ে একজনকে খুন করেছে। তোমার অ্যালিবাই (অজুহাত) ভীষণ শক্ত–যেহেতু নিজেও তার সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছ, দৌড়ে পালিয়েছ। চমৎকার। পরিকল্পনা! তোমার পরিকল্পনার আরও চমকপ্রদ এবং যুক্তিসিদ্ধ অংশ হচ্ছে, তোমার পরবর্তী কার্যকলাপ। পরে তুমি টের পেলে যে প্রবীর হরবোলা হচ্ছে পরিকল্পনার একটা মারাত্মক দুর্বল গ্রন্থি। তাহলে কি প্রবীরকে সরাতে হবে? কিন্তু প্রবীরের পাত্তা কখন আবার কোথায় পাওয়া যাবে, ঠিক ছিল না। সে কাজ সময়সাপেক্ষ। সেই সময় তোমার মাথায় খেলে গেল আরেক প্রকল্প। মিঃ পানিগ্রাহীর ভারতকে ঢিট করার পরিকল্পনার মতো বিশাল আশ্রয়কক্ষ থাকতে কেন ফের খুনের ঝুঁকি নিতে যাওয়া? তাই তুমি মাল নিয়ে কেটে পড়লে না তক্ষুনি। পানিগ্রাহীর সহায়তায় খুনের দায় ভারতের ঘাড়ে চাপাবে ঠিক করলে। এতে পানিগ্রাহীর লাভ আছে–ভারতবাবু ঢিট হবেন। তুমি পানিগ্রাহীর সহযোগিতায় নামলে কোমর বেঁধে। তুমি থেকে গেলে।