আমার বলার আছে।
কী?
কালো পাথর।
আবার এসব কী?
মোহান্তজী।
অরুণেন্দু মুখার্জী।
আমার নাম লিখছ কেন?
অনুরাধা, তামাশা কোরো না।
অরুণেন্দু মুখার্জী।
অরুণেন্দু কাগজটা নিয়ে খাপ্পা হয়ে বলল, নিকুচি করেছে! বললুম– ভাবনাকে দিয়ে হবে না। ভাবনা দুষ্টুমি করছে। সে কাগজটা ফেলে দিতে যাচ্ছিল রাগ করে। কর্নেল তার হাত থেকে ওটা টেনে নিলেন। সবাই হেসে উঠল। অরুণেন্দু উঠে গিয়ে আলো জ্বেলে দিল।
সেই সময় ভাবনা হঠাৎ টেবিলের ওপর মাথা খুঁজে পড়ে গেল–অনুরাধার যেমনটি হয়েছিল। অবাক হয়ে মীনাক্ষী বললেন, ও কী! অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি ভাবনা? মঞ্জু, শীগগির জল নিয়ে আয়!
জল আনবার আগেই ভাবনা মাথা তুলে একটু হাসল। আস্তে হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠেছিল যেন।
অরুণেন্দু বিস্মিত দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যি বলছ?
সত্যি!
কিন্তু
কিন্তু কি?
তাহলে আমার নাম বারবার লেখার মানে কি? অরুণেন্দু ক্রুদ্ধস্বরে বলল।
আমি তো জানি না, কী লিখেছি!
অরুণেন্দু গুম হয়ে ভেতরে চলে গেল। মঞ্জুশ্রী হাসতে হাসতে বলল, অরুদা খুব চটে গেছে। কর্নেল, কাগজে কী লেখা হয়েছে, পড়ুন না আমরা শুনি?
কর্নেল প্রশ্নোত্তর গুলো পড়লেন। খুব হাসাহাসি পড়ে গেল। ডঃ রায় বললেন, অরুর চটে যাওয়ার কারণ আছে। ভাবনা তুমি নিশ্চয় দুষ্টুমি করছিলে।
ভাবনা সিরিয়াস হয়ে বলল, না মেসোমশাই! সত্যি বলছি, আমি জানি না কী লিখেছি। আমার হাত দিয়ে আপনা আপনি লেখা হয়ে গেছে।
সুমন বলল, যদি সত্যি অনুরাধার আত্মা এসে থাকে, তাহলে একটা ব্যাখ্যা দওয়া যায়।
মীনাক্ষী বললেন, কী ব্যাখ্যা?
অরুণেন্দু মোহান্তজীর চেলা। মোহান্তজীর নামের সঙ্গে তাই ওর নামটাও এসে যায়। অরুণেন্দু আর একটু ধৈর্য ধরলে পারতো। তারপর কী লেখা হচ্ছে বোঝা যেত কোথায় গড়াচ্ছে ব্যাপারটা।
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। এবার ওঠা যাক, ডঃ রায়। প্রায় নটা বাজে।
ভাবনাও উঠল। মীনাক্ষী বললেন, একটু দাঁড়াও, ভাবনা। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে সুশীলা।
ভাবনা বলল, থাক! আমি একা যেতে পারব।
কর্নেল বললেন, বরং আমি তোমাকে পৌঁছে দিতে পারি, ভাবনা।
বেশ তো! ভাবনা পা বাড়াল।
কর্নেল দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ ঘুরে বললেন, একটা কথা, ডঃ রায়! আপনার কি রিভলভার আছে?
ডঃ রায় চমকে গেলেন। কেন বলুন তো?
এমনি জানতে টাইছি।
ডঃ রায় বললেন, আছে। লাইসেন্সড আর্ম। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় গুণ্ডা ডাকাতদের খুব প্রতাপ। তাই রাখতে হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ একথা জানতে চাইছেন কেন?
প্লিজ! অন্যভাবে নেবেন না। কর্নেল দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে বললেন। যদি কিছু মনে করেন, অস্ত্রটা একটু দেখতে চাই। দেখার অধিকার আইনত আমার নেই। তবু জাস্ট এ রিকোয়েস্ট।
ডঃ রায় অবাক হয়ে দ্রুত ভেতরে গেলেন। মীনাক্ষী, মঞ্জুশ্রী সুমন উদ্বিগ্নমুখে কর্নেলের দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবনা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একটু পরেই ডাঃ রায় হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন। স্ত্রীকে বললেন, মিনু রিভলভারটা অন্য কোথাও রেখেছ নাকি? আমার ড্রয়ারে তো নেই ওটা। আলমারির লকারেও নেই।
মীনাক্ষী উদ্বিগ্নমুখে বললেন, সে কী! আমি তো কোথাও রাখিনি।
এস তো, ভাল করে খুঁজে দেখি। আশ্চর্য! ওটা যাবে কোথায়?
কর্নেল বললেন, ঠিক আছে! চলি ডঃ রায়। আমার ধারণা, আপনার রিভলভারটা চুরি গেছে। আপনি এখনই পুলিশে ফোন করে জানান।
বলে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। রাস্তায় পৌঁছে মৃদুস্বরে বললেন, ভাবনা, ওদিকে নয়। এদিকে এস।
ভাবনার মুখে হাসি ঝিলিক দিচ্ছিল। বলল, ওদিকে কেন? আমাদের বাড়ি তো উল্টোদিকে।
ওই গাছের পেছনে পুলিসের গাড়ি আছে। ওরা তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে।
ভাবনা বলল, এক সাহস হবে না করুর, আমি অনুরাধার মতো বোকা নই।
বোকা বুদ্ধিমানের ব্যাপার নয়, ডার্লিং! আজ সকাল থেকে অনুরাধার খুনীর হাতে একটা রিভলভার এসে গেছে। মরিয়া হয়েই এবার সে রিভলভার জোগাড় করেছে। ভোলা ও রামু তোরবেলা পুলিশের ভয়ে ট্রেনে চেপে কোথাও পালাবে। ভেবেছিল। সে ওদের গুলি করে মেরেছে।
গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টার মিঃ সিং কর্নেলকে নমস্কার করলেন। কর্নেল ভাবনাকে বললেন, যাও ডার্লিং! মিঃ সিং তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। সাবধানে থেক কিন্তু!
.
০৮.
বাংলোয় ফিরে কর্নেল ডিনারে বসেছেন, ডঃ কুসুমবিহারী রায় হন্তদন্ত এসে পৌঁছুলেন। মুখে স্বস্তির হাসি। বললেন, কি ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলুম বলার নয়। আসলে হয়েছিল কী, রিভলভারটা সবদিন সঙ্গে নিয়ে ঘুরি না। আমার টেবিলের ড্রয়ারেই থাকে। পরশুদিন অফিস থেকে ফিরে ওটা অন্যমনস্কভাবে টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছিলুম। আমার গিন্নি সেটা কখন তুলে আমার কোটের পকেটে রেখে দিয়েছিলেন। আর বলবেন না! ওঁর যা ভুলো মন!
কোটের পকেটে পাওয়া গেছে তাহলে?
হ্যাঁ, কোট তো সবদিন পরি না। হ্যাঁঙ্গারে ভোলা থাকে। গিন্নি
ঠিক আছে। পাওয়া গেছে যখন, আর কথা কী?
ডঃ রায় একটু ইতস্তত করে বললেন, কিন্তু হঠাৎ আপনি আবার রিভলভার চুরি যাওয়ার কথা ভাবলেন কেন, প্লিজ যদি সেটা বলেন ধাঁধা কেটে যায়?
কর্নেল একটু হাসলেন। আচ্ছা ডঃ রায়, আপনার রিভলভারে গুলি পোরা ছিল কি?
গুলি বের করে ড্রয়ারে রাখি। তবে পরশু গুলি বের করে রাখতেও ভুলে গিয়েছিলুম।