ঠিক, ঠিক। শৰ্মাজী বললেন। এ-ও বোঝা যাচ্ছে আপনি মোহান্তজীকে কাল সকালে কালোপাথরের কথা বলার পর উনি ভয় পেয়েছিলেন তাই ওটা ফুলঝরিয়ার টিলা থেকে সরিয়ে পিট নং ৩৪৭-এ লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন। এ পর্যন্ত সব স্বচ্ছ।
এই সময় একজন পুলিশ অফিসার সঙ্গে কনস্টেবল সহ হন্তদন্ত হাজির হলেন। শৰ্মাজী বললেন, কী ব্যাপার মিঃ সিং?
সাব ইন্সপেক্টর সুরেশ সিং বললেন, স্যার! ভোলা আর রামুর ডেড বডি পাওয়া গেছে রেল লাইনের ধারে। গুলি করে মারা হয়েছে দুজনকে। দুজনেরই মাথার পেছনে দিকে গুলি লেগেছিল।
শৰ্মাজী লাফিয়ে উঠলেন। কী সাংঘাতিক কাণ্ড!
কর্নেল বললেন, লোকটা এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে, মিঃ শর্মা! ভোলা আর রামুর মুখ চিরকালের মতো বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু কে সে?
এখন জানি না আমরা। শুধু এটুকু জানি, দীপ্তেন্দুর উদ্ভাবিত মিশ্ৰধাতুর ফর্মুলা আর কালো বেদীটা সে হাতাতে চেয়েছিল। ভেবে দেখুন মিঃ শৰ্মা, এ দুটো জিনিস যে-কোনও ধনী দেশকে বিক্রি করতে পারলে কোটিপতি হয়ে যেত।
মোহন্তজীকে কবুল করাতেই হবে তাতে আমার ভাগ্যে যা ঘটে ঘটুক। বলে শর্মজী সদলবলে বেরিয়ে গেলেন বাংলো থেকে। ওঁদের জিপ দুটো সবেগে নেমে গেল উতরাইয়ের রাস্তায়।…
সন্ধ্যায় ডঃ রায় তার কোয়ার্টারের বারান্দায় বসে গল্প করছিলেন স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে। একটু পরে সুমন এসে গেল। তারপর এল ভাবনা। আড্ডা জমে উঠল। অরুণেন্দু নেই। ওর টো টো করে ঘোরা স্বভাব। মঞ্জুশ্রী পরিহাস করে বলল, অরুদা ভূত খুঁজতে গেছে। ভূত সঙ্গে নিয়ে তবে ফিরবে দেখে নিও।
গেটের কাছে লম্বা চওড়া একটা মূর্তি ভেসে উঠল আবছা আলোয়। ডঃ রায় বললেন, কে ওখানে? গম্ভীর গলায় সাড়া এল–আসতে পারি ডঃ রায়?
আরে! কর্নেল সাহেব! আসুন, আসুন! ডঃ রায় উঠে গিয়ে অভ্যর্থনা করে নিয়ে এলেন কর্নেলকে।
কর্নেলকে দেখে ভাবনা মুখ টিপে হেসে বলল, আজ মাছ ধরতে যাননি কর্নেল?
গিয়েছিলুম। আজ দুটো মাছ ধরেছি। কর্নেল হাসতে হাসতে বললেন। ইয়ে–একটা প্রয়োজনে এলুম ডঃ রায়। সকালে আপনার ঘরে টাইপরাইটার দেখেছিলুম। একটা জরুরী চিঠি টাইপ করা দরকার। প্লিজ যদি
ডঃ রায় বললেন, স্বচ্ছন্দে! আসুন, ভেতরে আসুন।
ডাইনিং-কাম-ড্রয়িংরুমের একপাশে টেবিলের উপর ছোট্ট টাইপরাইটার। কর্নেল চিঠি টাইপ করতে বসলেন। ডঃ রায় বললেন, আপনি কাজ সেরে নিন। আমরা বাইরে আড্ডা দিই।
কিছুক্ষণ পরে চিঠি টাইপ করে বেরিয়ে এলেন কর্নেল। ততক্ষণে পটভর্তি কফি আর স্ন্যাক্স এসে গেছে। মীনাক্ষীদেবী সবাইকে কফি পরিবেশন করলেন। কর্নেল বললেন, অরুণেন্দুবাবুকে দেখছি না!
মঞ্জুশ্রী হেসে উঠল। অরুদা ভূত ধরে আনতে গেছে। এখনই এসে পড়বে দেখবেন।
কথায় কথায় মোহান্তজীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ এল। তারপর দীপ্তেন্দুর ফর্মুলার কথা। ডঃ রায় বললেন, দীপ্তেন্দু গোপনে কী একটা রিসার্চ করছে, আভাস পেয়েছিলাম। কিন্তু খুলে কিছু বলেনি। ওর প্রতিভার পরিচয় পেয়েছি বহুবার। আমাকে যদি ব্যাপারটা বলত, গভমেন্ট থেকে ওর সেফটির ব্যবস্থা করতে পারতুম। বোকামি করে নিজের প্রাণটা খোয়ালো।
মীনাক্ষী বললেন, আর একটা প্রাণও গেল বোকামি করে। অরু কেন চেপে রেখেছিল, বুঝতে পারি না। তোমাকে জানিয়ে দিলেও তো পারত!
সুমন বলল, প্রেতশক্তিতে বিশ্বাস করতুম না। কিন্তু এখন করি। আমার ধারণা, অনুরাধা জানত, না কিছু। দীপ্তেন্দুর আত্মাই ওর হাত দিয়ে
মঞ্জুশ্রী বাধা দিয়ে বলল, শাট আপ! আবার আত্মা-টাত্মা আনা হচ্ছে? আবার কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যাবে, দেখবে।
এইসব আলোচনা হতে হতে অরুণেন্দু এসে গেল। কর্নেলকে দেখে সে বলল, আরে আপনি! কতক্ষণ?
কর্নেল একটু হেসে বললেন, অরণেন্দুবাবু মঞ্জুশ্রীর যদি আপত্তি হবে, আমি কিন্তু সিয়াসের ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী। আজ রাতে যদিও আকাশ পরিষ্কার! তবুও তিথিটা অমাবস্যার।
সুমন বলল, ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া! শুরু হোক তাহলে।
ডঃ রায় হাসতে হাসতে বললেন, আজ আমিও আসরে যোগ দিতে রাজি।
মঞ্জুশ্রী বলল, বাবা যদি পার্টিসিপেট করেন, আমার আপত্তি নেই।
অরুণেন্দু কঁচুমাচু মুখে বলল, কিন্তু মিডিয়াম কে হবে; তেমন কাউকে তো দেখছি না।
ভাবনা বলল, আমি হবো।
তুমি–
ভাবনা জোর দিয়ে বলল, দেখ না বাবা মিডিয়ামের উপযুক্ত কি না আমি। পরীক্ষা করে দেখতে দোষ কী? না হলে মঞ্জু তো আছেই।
মঞ্জুশ্রী আপত্তি করে বলল, আমি ওসবে নেই।
অরুণেন্দু একটু ভেবে বলল, ঠিক আছে। দেখা যাক।
সেদিনকার মতো ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল সবাই। দরজা জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে মোম জ্বালানো হল। ভাবনা বসল একদিকে, অন্যদিকে অরুণেন্দু, কর্নেল, ডঃ রায় মঞ্জুশ্রী, মীনাক্ষী ও সুমন।
অরুণেন্দু তার অভ্যাসমতো বক্তৃতা দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে কলম ও কাগজ দিল ভাবনাকে। তারপর বলল, আজকের আসরে আমরা গান্ধীজীর আত্মাকে চাইব। রেডি!
সে টেবিলে সংকেত করলে সবাই চুপচাপ গান্ধিজীর সম্পর্কে চিন্তা করতে থাকলেন। মিনিট দুয়েক পরে ভাবনার কলম কেঁপে উঠল। অরুণেন্দু আলতোভাবে কাগজটা টেনে নিয়ে লিখল, আপনি কি গান্ধীজী?
এরপর সে রাতের মতো প্রশ্ন ও জবাব যা লেখা হল, তা এই :
আমি অনুরাধা।
তোমাকে ডাকিনি। তুমি যাও।