ঠিক আছে। কাজটা আমি নিচ্ছি। তবে এতে কত সময় লাগবে তা আমি বলতে পারছি না। আর ধরুন যদি বিলেত যেতে হয়?
তা হলে আপনার এবং আপনার অ্যাসিস্ট্যান্টের প্লেন ভাড়া আমি দেব, ওখানে হোটেলে থাকার খরচ আমি দেব, যে পাঁচশো ডলার আপনাদের প্রাপ্য তার টাকাটা আমি দেব। বুঝতেই পারছেন আমি এর পরিচয় পাবার জন্য কতটা আগ্রহী।
আপনার বাবা কি–?
মারা গেছেন। বিলেত থেকে ফেরার পাঁচ বছরের মধ্যেই। মা-ও মারা গৈছেন। দশ বছর। হল। আমার স্ত্রী বর্তমান। একটিই সন্তান আছে-আমার মেয়ে। সে বিয়ে করে দিল্লিতে রয়েছে। স্বামী আই. এ. এস; এই হল আমার কার্ড। এতে আমার নাম ঠিকানা ফোন নম্বর সবই পাবেন।
কার্ডটা দেখলাম। নাম-রঞ্জিন কে. মজুমদার; ঠিকানা-১৩ রোল্যান্ড রোড, ফোন– sbr-68の> ]
ফেলুদা বলল, আমি আপনার সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ রাখব। কোনও প্রয়োজন হলে আশা করি আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।
সম্ভব হলে নিশ্চয়ই করব?
ভদ্রলোক উঠে পড়ে বললেন, ছবিটা তা হলে আপনার কাছেই রইল।
হ্যাঁ। ওটার একটা কপি করে ওরিজিনালটা আপনাকে ফেরত দিয়ে দেব। ভাল কথা— আপনি কী করেন সেটা তো জানা হল না।
সরি। আমারই বলা উচিত ছিল। আমি চাৰ্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বি, কম পাশ করি সেন্ট জেভিয়ার্স থেকেই। লী অ্যান্ড ওয়াটকিনস হচ্ছে আমার আপিসের নাম।
থ্যাঙ্ক ইউ।
আসি তা হলে। গুড ডে।
অভিনব মামলা, ভদ্রলোকের গাড়ি চলে যাবার পর বললেন লালমোহনবাবু।
সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, বলল ফেলুদা। এমন কেস আর পেয়েছি বলে তো মনে পড়ে না।
একবার ছবিটা দেখতে পারি কি?
ফেলুদা ছবিটা জটায়ুকে দিল। ভদ্রলোক ভুরু কুঁচকে সেটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন, সাহেব না। ইন্ডিয়ান তা বোঝার কোনও উপায় নেই। এ কেস আপনি কীভাবে কনডাক্ট করবেন তা আমার মাথায় আসছে না।
আপনার মাথার প্রয়োজন নেই। ফেলুমিত্তিরের মাথায় এলেই হল।
০২. চাৰ্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মক্কেল
ফেলুদার একজন চাৰ্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মক্কেল ছিল, নাম ধরণী মুখার্জি। ফেলুদা টেলিফোনে তার সঙ্গেই যোগাযোগ করল। ভদ্রলোক বললেন, রঞ্জন মজুমদারকে খুব ভাল করে চেনেন, কারণ দুজনেই স্যাটার্ডে ক্লাবের মেম্বার। রঞ্জনবাবু কীরকম লোক জিজ্ঞেস করাতে ধরণীবাবু বললেন যে, তিনি একটু চাপা ধরনের লোক, বিশেষ মিশুকে নন, বেশিরভাগ সময় ক্লাবে চুপচাপ একা বসে থাকেন। ড্রিংক করেন—তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। রঞ্জনবাবু যে ছেলেবেলায় কিছুকাল বিলেতে ছিলেন সে কথাও ধারণীবাবু জানেন, কিন্তু তার বাইরে আর কিছুই বিশেষ জানেন না।
১৯৫২-তে সেন্ট জেভিয়ার্সে ইন্টারমিডিয়েটে কে কে ছাত্র ছিল তার হদিস পেতে ফেলুদার বিশেষ বেগ পেতে হল না। সেই ছাত্রদের তালিকায় খুব ভাল করে চোখ বুলিয়ে ফেলুদা বলল, এর মধ্যে একজনের নাম চেনা চেনা মনে হচ্ছে। যদ্দুর মনে হয়। ভদ্রলোক হোমিওপ্যাথি করেন। বাড়ি ফিরে এসে বলল, তোপ্সে, ডাক্তার হীরেন বসাকের নামটা ডিরেক্টরিতে বার করে ভদ্রলোকের টেলিফোন নাম্বারটা আমায় দে তো।
আমি দু মিনিটে কাজটা সেরে দিলাম। ফেলুদা সেই নম্বরে ফোন করে একটা অ্যাপায়েন্টমেন্ট চাইল। ডাক্তার ফেলুদার নাম শুনেই হয়তো পরদিন সকালেই সময় দিয়ে দিলেন–সাড়ে এগারোটা।
কেস কেমন যাচ্ছে খবর নিতে পরদিন সকালে লালমোহনবাবু এসেছিলেন। আমরা তাঁর গাড়িতেই ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম।
ওয়েইটিং রুমে ভিড় দেখেই বোঝা যায় ডাক্তারের পসার ভাল। ডাক্তারের সহকারী আসুন, আসুন বলে ফেলুদাকে একেবারে আসল ঘরে নিয়ে গিয়ে ঢোকাল; পিছন পিছন অবশ্য আমরা দুজনও ঢুকলাম।
ডাক্তার বসাক ফেলুদাকে দেখে হাসিমুখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
কী ব্যাপার? আপনার তো বড় একটা ব্যারাম-ট্যারাম হয় না।
ব্যারাম না, ফেলুদা হেসে বলল। একটা তদন্তের ব্যাপারে আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে এসেছি।
কী প্রশ্ন।
আপনি কি সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র ছিলেন?
হ্যাঁ, তা ছিলাম।
আমার আসল প্রশ্নটা হল—এই দুটি ছেলেকে কি চিনতে পারছেন?
ফেলুদা পকেট থেকে সেলোফেনে মোড়া ছবিটা বার করে ডাক্তার বসাকের হাতে দিল। এক দিনের মধ্যেই ছবিটার কপি করিয়ে নিয়ে আসল ছবিটা ফেলুদ রঞ্জনবাবুকে ফেরত দিয়ে এসেছে। ডাক্তার ভুরু কুঁচকে ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন, এদের মধ্যে একজন তো মনে হয় আমাদের সঙ্গে পড়ত। রঞ্জন। হ্যাঁ, রঞ্জনই তো নাম।
আমি বিশেষ করে অন্যজনের সম্বন্ধে জানতে চাইছি।
ডাক্তার ছবিটা ফেরত দিয়ে মাথা নেড়ে বললেন, অন্যটিকে কস্মিনকালেও দেখিনি আমি।
আপনাদের সঙ্গে সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়ত না?
ডেফিনিটলি না।
ফেলুদা ছবিটা আবার সেলোফেনে মুড়ে পকেটে রেখে দিল।
আপনি তা হলে বলছেন আপনার ক্লাসের অন্য ছেলেদের জিজ্ঞেস করেও খুব একটা লাভ নেই?
আমার তো মনে হয় বৃথা সময় নষ্ট।
তাও, আপনি একটা কাজ করে দিলে আমি খুব উপকৃত হব।
কী?
ফেলুদা পকেট থেকে সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্রদের তালিকাটা বার করে ডাক্তার বসাককে দেখাল।
এর মধ্যে কারুর বর্তমান খবর জানেন?
আমি বুঝলাম ফেলুদা সহজে ছাড়ছে না।
ডাক্তার তালিকাটার উপর চোখ বুলিয়ে বললেন, একজনের খবর জানি। জ্যোতির্ময় সেন। ইনিও ডাক্তার, তবে অ্যালোপ্যাথ।
কোথায় থাকেন বলতে পারেন?
হেস্টিংস। ঠিকানাটাও আপনি টেলিফোনের বইয়েতেই পেয়ে যাবেন।