এতদিন আগের ঘটনা…
কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যে দুজনকে নিয়ে ঘটনা, তার মধ্যে একজন তো তোমার বেশ কাছের লোক ছিল বলে মনে হচ্ছে।
হুকিনস ফেলুদার দিকে চাইল। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে তার দৃষ্টিতে সংশয় ঘনিয়ে আসছে।
হোয়াট ডু ইউ মিন?
তোমার শেলফে আমি অনেকরকম জিনিসের মধ্যে একটা পিতলের গণেশ আর একটা আইভরির বুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি। ওগুলো কী করে পেলে জানতে পারি কি?
রন দিয়েছিল আমাকে ৷
রন মানে বোধ করি রঞ্জন।
ইয়েস। ওকে আমি রনও বলতাম, রনও বলতাম।
আই সি। এবার একটা কথা বলো—পিটারের হেলপ হেলপ চিৎকারের আগে তুমি ওদের কোনও কথা শোনোনি? ইন্ডিয়ান গডদের সামনে মিথ্যা কথা বলা কিন্তু মহাপাপ।
কী কথা বলছিল বুঝিনি—আই ওনলি হার্ড দেয়ার ভয়েসেস।
তার মানে ওরা বেশ জোরে কথা বলছিল?
পারহ্যাপস…পারহ্যাপস…
আমার কী বিশ্বাস জান?
হুকিনস আবার ফেলুদার দিকে দেখল।
হোয়াট?
আমার বিশ্বাস ওদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। পিটার দাঁড়িয়ে উঠেছিল, আর——
ইয়েস, ইয়েস। হুকিনস হঠাৎ বলে উঠল। আর ও রনকে আক্রমণ করতে যায়, আর টাল সামলাতে না পেরে জলে পড়ে যায়।
তার মানে পিটার তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী?
অফ কোর্স!
তোমাদের এই যে ক্যাম নদী, আমাদের দেশে এটাকে বলে কেন্যাল। এতে একটা লোক সাঁতার না জানলেও এত সহজে ডুবে যেতে পারে। –বিশেষ করে যখন তাকে একজন বাঁচাবার চেষ্টা করছে?
ডুবল যে সে তো চোখের সামনে দেখলাম।
তুমি এখনও সত্যি কথা বলছি না, মিস্টার হুকিনস। আই ওয়ান্ট দ্য ট্রুথ। আমি এত দূর থেকে এসেছি শুধু এই ট্রুথের সন্ধানে; পিটার কেন এত সহজে ডুবে গেল?
ছকিনসকে দেখেই বুঝতে পারছিলাম যে সে ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছে! এবার সে হঠাৎ ভেঙে পড়ে বলল, ঠিক আছে, আমি বলছি কেন পিটার ডুবে যায়। তার কারণ ও যখন জলে পড়ে তখন ওর জ্ঞান ছিল না।
জ্ঞান ছিল না?
ফেলুদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে হুকিনসের দিকে। তারপর চাপ স্বরে বলল, বুঝেছি। নৌকে বাইছিল রঞ্জন, তাই না?
ইয়েস।
তার মানে তার হাতে দাঁড় ছিল।
ইয়েস।
অর্থাৎ একটা অস্ত্র ছিল, যেটা দিয়ে সে পিটারকে আঘাত করে। তার ফলে পিটার সংজ্ঞা হারিয়ে জলে পড়ে যায়। অর্থাৎ সে কোনও স্ট্রাগলই করেনি। আর রঞ্জন যে তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিল সেটা একটা অভিনয়। অর্থাৎ রঞ্জনই পিটারের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
হুকিনস মাথা চাপড়ে বলল, আমি তোমাদের আঘাত দিতে চাইনি। তাই সত্য গোপন করছিলাম। রঞ্জনের জায়গায় আমি থাকলে আমিও ওরই মতো করতাম। পিটার ওকে অশ্রাব্য ভাষায় গাল দিচ্ছিল। বলছিল তোমার চামড়া সাদা হলে কী হবে, আঁচড় কাটলেই দেখা যাবে। নীচে কালো। ইউ আর নাথিং বাট এ ডার্টি ব্ল্যাক নেটিভ। এতে কার মাথা ঠিক থাকে বলো!
তুমি ছাড়া এই ঘটনার সাক্ষী আর কেউ ছিল?
ইয়েস। ওনলি ওয়ান।
কে?
রেজিন্যাল্ড ।
রেজিন্যাল্ড ডেক্সটর?
আমরা দুজন একসঙ্গেই বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। সমস্ত ঘটনাই আমরা দুজন একসঙ্গে দেখি। পরে আমি রনকে বাঁচাবার জন্য বলেছিলাম পিটার রনকে আক্রমণ করতে গিয়ে জলে পড়ে যায়। এদিকে রেজিন্যাল্ড অনবরত সত্যি ঘটনাটা বলে বেড়াচ্ছিল। সৌভাগ্যক্রমে সকলেই জানত যে রেজিন্যাল্ড ইন্ডিয়ানদের ঘৃণা করে, তাই তার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। থ্যাঙ্ক গড ফর দ্যাট–রন ওয়জ সাচ এ নাইস বয়, সে জেনা্রাস, সে কাইন্ড।
এ ব্যাপারে তদন্ত হয়নি? ইনকুয়েস্ট হয়নি?’
হয়েছিল বইকী।
তুমি সাখকী দিয়েছিলে?
ইয়েস।
মিথ্যে সাক্ষী তো?
তা বটে। আই ওয়জ ডিটারমিনড টু সেভ রঞ্জন। সেও অবশ্য সাক্ষী দিয়েছিল। আমি যা বলেছিলাম, সেও তাই বলেছিল।
আর রেজিন্যাল্ড ? সে সাক্ষী দেয়নি?’
হ্যাঁ-এবং সে সত্যি ঘটনাই বলেছিল। তবে তার কথায় ভারতীয় বিদ্বেষ এত প্ৰকাশ পাচ্ছিল যে জুরি তার কথা বিশ্বাস করেনি। তারা রায় দিয়েছিল ডেথ বাই অ্যাক্সিডেন্ট।
ফেলুদা উঠে পড়ল।
থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার হুকিনস। আমার আর কোনও প্রশ্ন নেই।
হোটেলে ফিরলাম ডিনারের ঠিক আগে। রিসেপশন থেকে ঘরের চাবি নিচ্ছি, এমন সময় একজন কর্মচাবী ফেলুদার দিকে চেয়ে বলল, মিস্টার মিটার ?
ইয়েস।
তোমার একটি টেলিগ্রাম আছে।
ফেলুদা টেলিগ্রামটা নিয়ে খুলে পড়ল। পাঠিয়েছেন রঞ্জন মজুমদার। তিনি বলছেন- ক্যান রিকল এভরিথিং। রিটার্ন ইমিডিয়েটলি।
পারফেক্ট টাইমিং, বলল ফেলুদা। এখানের মামলা শেষ, কাল আমাদের রিটার্ন বুকিং, আর মিস্টার মজুমদারের স্মৃতি ফিরে এসেছে।
প্লেনেই ফেলুদা বলেছিল যে দমদম থেকে সোজা মিস্টার মজুমদারের বাড়ি যাব। আমরা কলকাতায় পৌঁছাচ্ছি। দুপুর একটা পাঁচে।
মনে গভীর উৎকণ্ঠা। রঞ্জনবাবু জানেন তিনি খুন করেছিলেন; এখন তিনি কী করবেন ?
আমাদের ফেরার তারিখ আর সময় আগে থেকেই জানা ছিল, তাই লালমোহনবাবুর গাড়ি এয়ারপোর্টে হাজির ছিল।
রোল্যান্ড রোডে পৌঁছে বুকটা ধক করে উঠল। রঞ্জনবাবুর বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি কেন?
গাড়ি থেকে নেমে গেটের ভিতর ঢুকতেই আমাদের চেনা ইনস্পেকট্টর মণ্ডল গম্ভীর মুখে এগিয়ে এলেন।
আজ সকাল আটটায় ব্যাপারটা ঘটেছে।
কী ব্যাপার? ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
মিস্টার মজুমদার খুন হয়েছেন। সকালে নাকি একজন সাহেব এসেছিল ওঁর সঙ্গে দেখা করতে। সে কে তা জানা যায়নি। আপনি কোনও এনকোয়ারি করবেন?