গুহার ভিতরে দিনের বেলা রাতের মতো অন্ধকার, কারণ গুহাটা উত্তরমুখী।
ইতিমধ্যে রাজাও পৌঁছে গেছেন; তিনি একটু দূর থেকে ঘোড়ার পিঠে চেপেই ঘটনাটা দেখবেন। আজ লোকের ভিড় নেই, কারণ শহরে ঢ্যাঁড়া পড়ে গেছে যে আর কোনও রাজপুত্র রাক্ষসকে মারতে আসবে না।
সুজন হাতে বল্লম নিয়ে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল গুহার দিকে। চারিদিক নিস্তব্ধ। পাখি নেই, তাই এই অবস্থা, না হলে সকালে পাখি না ডেকে পারে না।
এবার সুজন ঠাকুরের নাম জপ করে একবার সূর্যের দিকে তাকিয়ে বিরাট একটা দম নিয়ে সেই দম ছাড়ার সময় তার সমস্ত শক্তি দিয়ে এই নদিনে শেখা একটা ভয়ঙ্কর ডাক ছাড়ল। এই ডাকে রাজার ঘোড়া ভড়কে গিয়ে লাফ দিয়ে উঠেছিল, কিন্তু রাজা কোনও মতে তাকে সামলালেন।
এইবার এল সেই হুঙ্কারের জবাব–আর সেইসঙ্গে গুহা থেকে এক লাফে বাইরে রোদে এসে পড়ল যে প্রাণীটা, সেটা মানুষ না রাক্ষস না জানোয়ার, তা কেউই সঠিক বলতে পারবে না। বরং বলা চলে তিনে মিশে এক কিম্ভুতকিমাকার প্রাণী, যাকে দেখলে মানুষের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়।
সুজন হরবোলা কিন্তু আর কিচ্ছু দেখল না, দেখল শুধু প্রাণীটার যেখানে কলিজাটা থাকার কথা সেই জায়গাটা। সেটার দিকে তাগ করে সে প্রাণপণে চালিয়ে দিল তার হাতের বল্লমটা। তারপর আর তার কিছু মনে নেই।
.
জ্ঞান হয়ে চোখ খুলে সুজন প্রথমেই দেখতে পেল সেই মুখটা, যেটা আঁকা ছবিতে দেখে তার মনটা নেচে উঠেছিল।
শ্রীমতীর পাশেই রাজা দাঁড়িয়ে; বললেন: রাক্ষস মরেছে, তাই তোমার হাতেই দিলাম আমার মেয়েকে। আজ থেকে সাতদিন পরে বিয়ের লগ্ন। তোমার বাপ-মাকে খবর দিতে লোক যাবে ক্ষীরা গ্রামে। তারাও এখানেই থাকবে বিয়ের পর, আর তুমিও থাকবে।
আর আমার লেখাপড়া?
শ্ৰীমতী হেসে বলল, আমি বলেছি সে ভার আমার। পাঁচের নামতা দিয়ে শুরু–বিয়ের পরদিন থেকেই। আর যদ্দিন না দেশে পাখি আসছে তদ্দিন তুমি আমাকে পাখির ডাক শোনাবে।
তা হলে একটা কথা বলি?
বলো।
তুমি আর ঘরের মধ্যে বন্দি থেকো না।
না, আর কোনওদিন না।
আর তোমার হীরামনটাকে ছেড়ে দাও। খাঁচায় পাখি রাখতে নেই। ওরা আকাশে উড়তে পারে না; ওদের বড় কষ্ট হয়।
শ্ৰীমতী মাথা নেড়ে বলল, বেশ, তাই হবে।
সন্দেশ, বৈশাখ ১৩৯৩