পৃথিবীটাকে এবার আমি একদিন ধরে উলটে দেব।।
পারবেন না। এমন প্রাকৃতিক, গাণিতিক নিয়মে ফেলে দিয়েছেন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, পরস্পরের টানে কক্ষপথে ঘুরতেই থাকবে, ঘুরতেই থাকবে।
সব মানুষ আমি মেরে ফেলব।
ইমপসিবল প্রভু, ইমপসিবল। পিলপিল করে মানুষ জন্মাচ্ছে ছারপোকার মতো। ওষুধ বের করে ফেলেছে নানারকম। যত না মরছে, জন্মাচ্ছে তার বেশি। সব রক্ত-বীজের ঝাড়।
তাহলে কী হবে মহেশ্বর?
এক কাজ করুন। শয়তানের সঙ্গে আপনি একবার আলোচনায় বসুন। পৃথিবীটা উইল করে তাকেই দান করে দিন। শয়তান ছাড়া মানুষকে কেউ শায়েস্তা করতে পারবে না। অমৃতস্য পুত্ৰা বলে সেই দ্বাপর ত্রেতা থেকেই যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে। ও যেন দয়ালু জমিদারের অত্যাচারী মোসায়েবের ফল। প্রথম থেকে শাসন করেননি পিতা, পুত্রেরা সব বিগড়ে বসে আছে।
কই হে তোমার চা কি হল?
মহেশ্বর, পারু-পারু বলে ডাকতে লাগলেন, কোথায় গেলে বুড়ি?
পরমেশ্বর বললেন, পার্বতী কি বুড়ি হয়ে গেছে?
না প্রভু, এ হল আদরের বুড়ি? এই কসমেটিকস আর হরমোনের যুগে কেউ কি আর বুড়ো, বুড়ি হবে। মনের বয়েস বেড়ে যাবে। দেহের বয়েস বাড়বে না।
সে আবার কী? জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি, কিছুই থাকবে না।
হ্যাঁ জন্ম অবশ্যই থাকবে তবে প্ল্যান্ড। এক ইয়া দো, তিন কভি নেহি।
পরমেশ্বর মাথা চুলকোলেন। চোখ বড়-বড় হয়ে গেল।
মহেশ্বর মুচকি হেসে বললেন, দেবতারাই শুধু চির-যৌবন আর অমৃতের কলসি কাকে নিয়ে বসে থাকবে তা তো হতে পারে না প্রভু। হিরোসিমায় সেই অ্যাটম-বোমা ফেলেছিল মনে আছে?
খুব আছে। বোমার ধোঁয়া ছাতার মতো পেখম মেলেছিল।
তুমি আমাকে দেখিয়ে বললে, শরতের তুলো মেঘ। দেখতে গিয়ে ধোঁয়া লেগে আমার মাথার সব চুল ভুসভুস করে উঠে গেল। সরোবরের জলে কুলকুচো করতে গিয়ে মুখের সব দাঁত খুলে পড়ে গেল। নাগার্জুন আর চরক এসে পরীক্ষা করে বললে, আণবিক প্রতিক্রিয়া। মনে নেই আবার! সেই দাঁত তো এখন গজমতির মালা হয়ে নারায়ণীর গলায় ঝুলছে। গায়ে ফোঁসকা বেরিয়ে গেল। সাতদিন কামধেনুর দুধে গা চুবিয়ে বসে রইলুম, মাথায় চাপিয়ে রাখলুম কামধেনুর গোবর। মনে নেই আবার!
আপনার তো তবু সব বেরোল। আর আমার! আমার গোঁফ-জোড়া সেই যে খুলে পড়ে গেল, শত চেষ্টাতেও আর বেরোল না।
ভালো হয়েছে মহেশ, শাপে বর হয়েছে। মুখটা ছিল তোমার, গোঁফটা ছিল মহিষাসুরের। যা তোমাকে মানায় না, তা যাওয়াই মঙ্গল। বাঘের মুখে বেড়ালের, বেড়ালের মুখে বাঘের গোঁফ মানায় না। দ্যাখো তো, এখন মুখটায় কেমন সুন্দর একটা দেব-ভাব এসেছে।
যাক ও গোঁফ-দাড়ি-চুল নিয়ে আর মাথাব্যথা নেই। অমর হলেও বয়েস হয়েছে অনেক। যে কথা বলছিলাম প্রভু, ওই বোমার বাতাস ঠেলে আর একটু ওপরে উঠলেই, আমাদের হাড় পর্যন্ত খুলে পড়ে যাবে। তখন এই স্বর্গরাজ্যে এসে আপনার ওই মানবকুল পরম-পিতার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজবে। তখন কী হবে? ভেবে দেখেছেন একবার পরমপিতা!
কী হবে মহেশ্বর! একটা রাস্তা বের করো। এ সংগ্রাম তো দেখছি, সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার।
তাই তো হয় প্রভু। ওরা সেই ফ্রাঙ্কেস্টাইন সৃষ্টি করেছিল। তারপর! জানেন তো! সবই তো আপনি জানেন! কেবল মাঝে-মাঝে আপনি ভুলে যান।
চা বোলাও!
হিন্দি বলছেন যে প্রভু!
উত্তেজনার মুহূর্তে কি মানুষ কি দেবতা, সকলেরই ভাষা পালটে যায়। এরই নাম প্রাকৃতিক নিয়ম।
মহেশ্বর হাসলেন। তারপর কী একটা টিপতেই দূরে ঘণ্টা বেজে উঠল।
এ আবার তোমার কী কেরামতি মহেশ্বর!
প্রভু ইসকো বোলতা হায়, কলিং বেল। পারুকে আর কত ডাকব গলা ছেড়ে!
এবার কলকাতার বারোয়ারি সেরে ফেরার সময় চিনে বাজার থেকে তুলে এনেছে। বড় মজার জিনিস প্রভু।
কোঁক-কোঁক করে অদ্ভুত একটা শব্দ হতে লাগল। পরমেশ্বর প্রশ্ন করলেন, কী হে, শয়তান এল না কি! অমন সাপের ব্যাঙ ধরার মতো শব্দ হচ্ছে!
না প্রভু। ও আর এক বড়িয়া যন্তর। ওরে কয় ইন্টারকম।
ঘন-ঘন তোমার ভাষা পালটাচ্ছে কেন মহেশ্বর! দেবতার গাম্ভীর্য তোমার গেছে। তুমি চ্যাংড়া হয়ে গেছ।
মহেশ্বর হাসতে-হাসতে ইন্টারকম তুললেন, হ্যালো! কে পারু! কী করছ তুমি সুইট! হানি। মানি গুনছ। এদিকে আউটার গুহায় আমি খোদ মালিককে নিয়ে বসে আছি। ওঃ সনি। খোদ মালিক কে? আমাদের গ্রেট পরমেশ্বর। চা চা করে মাথা খারাপ করে দিলেন। আমরা যাব! আ মাই ডারলিং। কী করছ তুমি! ভিডিও দেখছ। হাও সুইট! আমরা আসছি। দিলওয়ারা। মেরা জান।
পরমেশ্বর মহেশ্বরের কথা শুনে কেমন যেন হয়ে গেলেন।
গম্ভীর জগৎ-স্রষ্টা যেন আরও গম্ভীর। মেঘ-ভারাক্রান্ত আকাশের মতো থমথমে মুখ। ইন্টারকম ছেড়ে দিয়ে মহেশ্বর বললেন, কী হল প্রভু! ভড়কে গেছেন মনে হচ্ছে!
তুমি একেবারেই বকে গেলে মহেশ। তুমি বদসঙ্গে পড়েছ। আজ বুঝলেন প্রভু! আমি তো কবেই বখে গেছি। আমি এক বখা ছেলে।
ছেলে নয় মহেশ্বর। তুমি দেবতা। বখাটে দেবতা।
তাই তো বলে সবাই। গাঁজা ভাঙ খাই। ষাঁড়ের পিঠে চেপে ঘুরে বেড়াই। সংসারে মন নেই।
পার্বতীর মতো বউ পেয়েছিলে বলে তরে গেলে!
তা ঠিক। তবে মজাটা কোথায় জানেন প্রভু? সব আইবুড়ো মেয়েই আমাকে পুজো করে, নইলে মনের মতো পতি পায় না। কী কেলো!
পরমেশ্বর ধমকে উঠলেন, তোমার ওই রকের ভাষা ছাড়বে না আমি ফিরে যাব ব্রহ্মলোকে।