হ্যালো। হ্যালো।
হ্যালো প্রাইমমিনিস্টারস সেক্রেটারিয়েট।
ইন্দু আছে?
কে ইন্দু?
তোমাদের প্রধানমন্ত্রী গো! বলো পরমেশ্বর কথা বলবেন।
পরমেশ্বর। সে আবার কে? কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী?
বলো, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যিনি প্রধান তিনি কথা বলবেন।
পি এম পাগলদের সঙ্গে কথা বলেন না।
অ, তাই নাকি? আচ্ছা সে কথা আমি খোদ মালিককে জানাচ্ছি। প্রভু পি এম আপনাকে পাগল ভেবেছেন। তার পি-এ বলছে, প্রধানমন্ত্রী পাগলদের সঙ্গে কথা বলে না।
আচ্ছা, তাই নাকি! তাহলে বাতাস-তরঙ্গে সরাসরি তার সঙ্গে কথা বললে কেমন হয়।
কোনও প্রয়োজন নেই। প্রভু আমি বরং একটু মজা করি। আবার একবার ফোন করি।
হ্যালো।
প্রাইম মিনিস্টারস…
মহেশ্বর বলছি।
কে মহেশ্বর প্রসাদ সিং?
না শুধু মহেশ্বর। ভক্তরা বলে ভোলা মহেশ্বর। তোমার মালকানকে বলো খোদ পরমেশ্বর কথা বলতে চেয়েছিলেন, তুমি যাকে পাগল বলে উড়িয়ে দিলে। মা-মণিকে শুধু স্মরণ করিয়ে দিও, নির্বাচন তো এসে গেল।
মহেশ্বর ফোন ছেড়ে দিলেন। কী মনে হল পি এম-কে একবার জানালেন, কে এক মহেশ্বর ফোন করেছিল, বলেছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক পরমেশ্বর আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। পাগল ভেবে লাইন দিইনি। আবার ফোন করে বললে, বলে দিও নির্বাচন আসছে। তারপর লাইন ছেড়ে দিলে।
পি এম লাফিয়ে উঠলেন, মূর্খ? আমার সব সাধনা ব্যর্থ করে দিলে। আমি কখনও বেলুড়, কখনও তিরুচেরুপল্লী, কখনও আকালতখতে গিয়ে রাতের-পর-রাত সাধনা করে যাঁকে নামিয়ে আনলুম তাকে পাগল বলে ভাগিয়ে দিলি গাধা! সামনের নির্বাচনে আমার ফিউচার তোরা ভাবলি না। এখুনি যোগাযোগ কর ফোনে।
মাতাজি ভগবানের ফোন নম্বর যে পৃথিবীর ডাইরেক্টারিতে নেই!
তুমি মরে ভূত হয়ে জেনে এসো।
দেশের প্রায় সবাই তো মরে এসেছে দিদি! আর তাড়াহুড়োর কী দরকার। আপনি আর পরমশ্বের ছাড়া এরপর আর তো কেউ থাকবে না।
সব কটা স্যাটেলাইট একসঙ্গে চেষ্টা করতে লাগল– হ্যালো পরমেশ্বর, হ্যালো। কলকাতার সব ফোন বিকল? কারণ, সব ফোনই পরমেশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। হ্যালো পরমেশ্বর।
৪. হিমালয়েই তো তোমার সামার হাউস
মহেশ্বর?
প্রভু!
এই হিমালয়েই তো তোমার সামার হাউস তাই না।
আজ্ঞে হ্যাঁ। বেশির ভাগ সময়েই তো আমাকে ঘুরে-ঘুরে বেড়াতে হয়! তারকেশ্বর, দ্বারকেশ্বর, কল্যাণেশ্বর। পারুকে একা থাকতে হয় তো প্রভু। মানব, দানব, দেবতা কারুর চরিত্রই তেমন সুবিধের নয় মহারাজ। কী স্বর্গে, কী মর্তে। কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির তো শেষ নেই। তাই পাহাড় দিয়ে, হিমবাহ দিয়ে, গুহা দিয়ে, গহ্বর দিয়ে পারুকে নিরাপদে রাখা!
তখন থেকে পারু-পারু করছ কাকে?
প্রভু পার্বতাঁকে আমি আদর করে পারু বলে ডাকি। শরৎবাবু বলে এক লেখক ছিলেন। তার দেবদাস এক সাংঘাতিক প্রেমের বই। সেই বইয়ের প্রেমিক দেবদাস তার নায়িকাকে পারু পারু বলে ডাকত। কী সুন্দর?
সিনেমাটা আমি দেখেছি।
সে তো মর্তের ব্যাপার প্রভু।
গবেট। স্বর্গ যার মতও তার। আর তুমি, তুমি জানোই না, যেখানেই সৃষ্টি সেখানেই আমি। যেখানে মৃত্যু সেইখানেই যম। শরৎ অমন একটা যুবক-যুবতী-চিত্ত কঁপানো সাহিত্য সৃষ্টি করলে কী করে!
কলমের জোর ছিল প্রভু। দেখার চোখ ছিল। লিখে ফেললে গড়গড় করে।
তোমার মাথা। শরৎ কেন লিখবে! সে তো উপলক্ষ্য মাত্র। লিখেছি তো আমি। শরৎকে মিডিয়াম করে। আমার অনুপ্রেরণা ছাড়া তার সাধ্য ছিল লেখার!
শুনে খুব খারাপ লাগছে প্রভু। যিনি লেখেন তিনি নিজের আদলে নায়ক চরিত্র সৃষ্টি করেন। প্রভু, দেবদাস তাহলে আপনি? ছিঃ ছিঃ। কী কেচ্ছাই না করলেন। মদ খেয়ে মেয়েছেলের বাড়ি গিয়ে। টিবি ধরিয়ে। কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে রক্ত তুলে ফেঁসে গেলেন। এটা কেমন ধারা সৎ দৃষ্টান্ত হল পরমপ্রভু। বেদ-বেদান্ত, উপনিষদ, গীতা, বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত, ঠিক আছে। কিছু কিছু এদিক সেদিক থাকলেও দেবভাবে ভরপুর। কিন্তু দেবদাস! ওই কি দেবতার দাস হল প্রভু। রমণী-আসক্ত, মদ্যাসক্ত। পারুটাকে ছিপ দিয়ে কী পেটানো না পেটালেন একদিন! লোক তো খুব সুবিধের নন আপনি!
মহেশ্বর, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল। আমাকে লোক বলছ? আমি যে ত্রিলোকেশ্বর, পরমেশ্বর। আমার পাপ নেই, পুণ্য নেই।
আপনি তাহলে পলিটিসিয়ান।
কথায় কথায় তুমি এত ম্লেচ্ছ ভাষা ব্যবহার করছ কেন মহেশ্বর? শিখলে কোথা থেকে।
প্রভু পৃথিবীতে যে আমার আনাগোনা আছে। ভক্তরা যখন দলে-দলে আমার পীঠস্থান তারকেশ্বরে ছোটে তখন পথের দু-পাশে শুধু হিন্দি-ফিল্মি গান। বেদ-মন্ত্র ভুলে গেছি প্রভু। দেবভাষা আমার মুখে আটকে যায়। চালচলনও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আজকাল। মাথায় চুলের বাহার দেখছেন। নেচে-নেচে হাঁটি।
পলিটিসিয়ান মানেটা কী? রাজনীতিক?
ধরেছেন ঠিক। তাদের পাপও নেই, পুণ্যও নেই। কথার কোনও দাম নেই। প্রভু আপনারও সেই এক হাল। সারা জীবন শুধু ডেকেই গেল, পেল না কিছুই।
আবার তুমি গবেটের মতো কথা বলছ। পেয়ে কী হবে। মানুষের পেয়ে কী হবে! কোটিপতিও চিতায় চড়বে, কানাকড়ি-পতিও চিতায় চড়বে। মানুষকে দিয়ে কী লাভ হবে ঘোড়ার ডিমের! রাখতে পারবে! থাকতে-থাকতেই ফুকে দেবে। রেস খেলবে, বোতল ধরবে, মেয়েছেলের পেছনে ছুটবে। ডাকাতে মেরে দেবে। ট্যাকসে দেউলে করবে।