ভিসি মানে?
ভাইস চ্যান্সেলার মালিক। কে ভাইস চ্যান্সেলার হবে সেই ফঁপরে পড়ে পশ্চিমবাংলার রাজ্যপালকে রাজভবন ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ওরা এখন বলছে, রাজ্যপালের পদটাই তুলে দাও।
ওরা মানে?
ওই যারা বাম আর কী?
মানুষের আবার বাঁ-ডান আছে না কি। আমি তো ওদের দুটো হাত দিয়েছিলুম। একটা ডান আর একটা বাঁ। তা শুনেছি সরকারি অফিসে বাঁ-হাতের কারবার হয়।
ঠিকই শুনেছেন। তবে রাজনীতিরও বাঁ-ডান হয়েছে। আমেরিকা যাদের টিকি ধরে আছে তারা হল ডান। আর রাশিয়া যাদের কান ধরে আছে তারা বাঁ। তারা কেবল বলছে; বিপ্লব, বিপ্লব। আগে বিপ্লব তারপর জীবন। বলছে লড়ে যাও।
কার সঙ্গে লড়বে?
নিজেদের সঙ্গেই। রামের সঙ্গে শ্যাম, শ্যামের সঙ্গে যদু। এই তো সেদিন পশ্চিমবঙ্গে এক রাউন্ড হয়ে গেল। পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর।
মন্ত্রীতে-মন্ত্রীতে লড়াই! কী নিয়ে হল?
প্রভু, পৃথিবীর সব লড়াইয়ের মূলে তিনটি জিনিস–জমি, মেয়েমানুষ আর টাকা। টাকা নিয়েই হল। এ বলে, রুপেয়া লে আও, ও বলে কঁহা রুপেয়া। শ্রেণী সংগ্রাম প্রভু। যার আছে সে দেবে না। যার নেই সে ছাড়বে না।
এই বললে বামে-ডানে লড়াই। এখন বলছ বামে-বামে লড়াই।
প্রভু কত রকমের বাম আছে জানেন? মাথা খারাপ হয়ে যাবে। ও আপনার না জানাই ভালো। ভোট যুদ্ধের কথা শুনুন।
কিছু বুঝব না তো।
খুব সহজ। লোহার ফুটো বাক্সে লোকে ছাপামারা কাগজ ফেলবে। কিছু লোক নিজে নিজে ফেলবে। কিছু লোকের হয়ে অন্যে ফেলবে। তাকে ইংরিজিতে আগে বলত প্ৰসি এখন বলে রিগিং। সেই ভোটে একগাদা এম. এল. এ. হয়। এম. এল. এ. থেকে মন্ত্রী। মন্ত্রী থেকে একজন মুখ্যমন্ত্রী। ওদিকে কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী। তারপর দাবার খেল। দান ফেলল আর দান তোলো। মন্ত্রিসভা ফেলো। এম. এল. এ. কেনো। আর এক মুখ্যমন্ত্রী বসাও। গোলাগুলি, কার্ফু। আবার তাকে ফেলো, ফেলে আর একজনকে বসাও। ফেলা আর তোলা এই হল দাদা তোমার খেলা।
সারা দেশ জুড়ে এই ইয়ারকিই চলছে বুঝি! তা প্রজাপালনের কী হচ্ছে?
কঁচকলা হচ্ছে মালিক। রাজা-মহারাজাদের আমলে প্রজাপালন হত। এক রাজা আর তার চেলারা কত খাবে প্রভু। দেশের মানুষ তখন খেতে পেত। রাস্তাঘাট হত। পুকুর কাটানো হত। জলের ব্যবস্থা হত। মন্দির প্রতিষ্ঠা হত। উৎসব হত। গণতন্ত্রে প্রজা নেই, আছে ভোট। আর আছে শয়ে শয়ে এম পি, এম এল এ, মন্ত্রী। প্রভু তারা ভালো থাকলেই হল। খাচ্ছে-দাচ্ছে ভুড়ি বাগাচ্ছে। আর একবার এ-দল, একবার ও-দল করছে। প্রজাপালন সেকেলে ব্যাপার মহারাজ। তাদের জন্যে একটা সংবিধান আছে। তাও সাতশোবার জোড়াতালি মারা হয়েছে।
এ তুমি আমাকে কোথায় আনলে মহেশ্বর।
আপাতত আপনার পায়ের তলায় ভূস্বর্গ কাশ্মীর। শেখ আবদুল্লার জমিদারি ছিল। ফারুক আবদুল্লা দখলদারি নিয়েছিল। কেন্দ্র ল্যাং মেরে দিয়েছে।
তখন থেকে কেন্দ্র-কেন্দ্র করছ। কেন্দ্রটা কী।
আজ্ঞে দিল্লি। ইন্দিরার রাজধানী।
অ, সেই জওহরলালের মেয়ে!
আজ্ঞে মায়ে পোয়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এক ছেলে বিমান ভেঙে খসে গেছে তার বউ আবার একটা দল করে শাশুড়িকে ল্যাং মারার তাল খুঁজছে। বড় পোলা সিংহাসনে বসার জন্যে মায়ের পেছন-পেছন বিলিতি বউ নিয়ে ঘুরছে। আবার মোটরগাড়ির কারখানা খুলেছে। আর ওই দেখুন প্রভু ডাল লেকে সারি-সারি হাউসবোট। জনপ্রাণী নেই। কেউ আর বেড়াতে আসে না। গালে হাত দিয়ে বসে আছে। ট্যুরিস্ট এলে তবেই না তাদের গলা কেটে সারা বছর চলবে। পানি আছে, দানা নেই। দানার মধ্যে আছে বুলেট। একটা খেলেই এ রাজত্ব থেকে আপনার রাজত্বে।
মহেশ্বর গোলগুলির আওয়াজ পাচ্ছ?
পাচ্ছি প্রভু? একটু দূরে। অমৃতসরে লড়াই হচ্ছে।
কে আক্রমণ করলে?
কেউ না। নিজেদের মধ্যেই হচ্ছে। দেশটাকে শত-টুকরোর চেষ্টা চলেছে। পাঞ্জাব দু-টুকরো হয়েছে। আরও এক টুকরো করার তালে কিছু লড়াকু লোক বিদেশি মদত নিয়ে স্বর্ণমন্দিরে ঢুকে বসে আছে। কেন্দ্রের সেনাবাহিনী কামান দাগছে।
হায় ঈশ্বর!
আপনি নিজেই তো ঈশ্বর প্রভু। আপনার সন্তানদের খেল দেখুন।
শুনেছিলুম স্রষ্টা সৃষ্টি থেকে মহান। মহেশ্বর এ যে দেখি সৃষ্টিই মহান। আমার আর বেঁচে থেকে কী হবে? কোথায় আমার গুরু নানক। গুরু গোবিন্দ। তাদের একবার ডাকো।
কোনও লাভ নেই প্রভু। হয় আমেরিকা না হয় রাশিয়াকে ডাকুন।
চলো তা হলে ইন্দিরার কাছে যাই।
প্রভু দেখা হবে না। তিনি এখন অন্ত্র নিয়ে ন্যাজে-গোবরে।
অন্ধ্রে আবার কী বাঁধালে?
আমি বাঁধাব কেন? নিজেরাই লাগিয়ে বসে আছে। ফিল্মসের এক কৃষ্ণ নাম তার রাম রাও চৈতন্য রঙ্গমে চেপে একেবারে রমরম করে রাজ্য-সিংহাসনে বসেছিল। বেশ চলছিল। প্রায় একবারে সাধু হয়ে গিয়েছিল। শেষে বিকল হৃদয় সারাতে গিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেখে শ্যালক সিংহাসনে চেপে বসে আছে। কেন্দ্র খুব তো দড়ি টানাটানি করছিল। রামবাবু আবার অ্যায়সা চাল দিলেন শ্যালক চিৎপাত। মাঝখান থেকে হায়দরাবাদে কমুনাল রায়াটে সব চৌপাট হয়ে গেল।
এসবের কী মানে মহেশ্বর?
প্রভু এর নাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজ্যশাসন। যেখানে দেশের চেয়ে গদি বড়। প্রজার চেয়ে চামচা বড়। আইনের চেয়ে ক্রাইম বড়।
ধরো।
কাকে ধরব পরমেশ্বর?
ইন্দুকে ফোনে ধরো।