সে কি প্রভু! লোকে মাছ ধরতে যায়, আপনি শয়তান ধরতে যাবেন।
কথা বাড়াসনি, চল।
মহেশ্বর বললেন, নন্দে, পৃথিবীর আকাশে এই হাহাকার কীসের?
বেশ বড় কিছু ঘটছে।
আর কী ঘটবে! ভারতের আকাশে আর কী ঘটতে পারে। স্বর্ণমন্দিরে লড়াই। কর্ণাটকে মন্ত্রিসভার–না কর্ণাটক নয়, অন্ধ্র। অন্ধ্রে মন্ত্রিসভার পতন ও উত্থান। প্রধানমন্ত্রীর তিরোধান। আর কী হবে!
কিছু একটা হয়েছে। এত দূর থেকে বলি কী করে? চলুন নীচে নেমে দেখা যাক। আপনারাই তো বলেছেন, ধূম দেখলেই বুঝবে বহ্নি আছে।
চল তা হলে।
মহেশ্বর আর চিরকালের বিখ্যাত সঙ্গী নন্দী ভূপালে এসে নামলেন। নামার সময় শুধু একবার মাত্র বলতে পেরেছিলেন, কী বিশ্রী কুয়াশার রাত।
তারপর শ্রীমুখে আর কথা সরল না। ডানাকাটা জটায়ুর মতো দুম করে ডিগবাজি খেয়ে মাটিতে পড়লেন। মুখ হাঁ হয়ে গেল। তিনবার কোনওক্রমে বললেন, নন্দে, একটু জল। সেই ঘোরের মধ্যেই দেখলেন, শহর ছেড়ে মানুষ পালাচ্ছে। রাজা ছুটছে, প্রজা ছুটছে। মরা পাখির মতো, টুপটাপ মানুষ ঝরছে। তারপর আর জ্ঞান রইল না। অসীম শ্বাসকষ্টে জ্ঞান হারাবার আগে একবার শুধু ভাবতে পারলেন, এতদিনে পার্বতী আমার বিধবা হল। কোথায় গেল আমার সেই ক্ষমতা। একদিন এই কণ্ঠে সমুদ্রমন্থনের সব হলাহল ধারণ করেছিলুম!
মহেশ্বর মরলেন না। দেবতার মৃত্যু হয় না। অমর। জ্ঞান হল। নির্জন বনানীর ধারে, নদীর পারে। কার কোলে মাথা? পার্বতীর!
তুমি কে?
আমি পরমেশ্বর। তুমি ওখানে মরতে গিয়েছিলে কেন?
জানো না, তোমার আর সে ক্ষমতা নেই। সঙ্গদোষে সব গেছে।
প্রভু, তা ঠিক। আমরা এসেছিলুম হাহাকার শুনে। ভেবেছিলুম, শয়তান আবার নতুন চাল চেলেছে। ব্যাটাকে ধরতে হবে।
পরমেশ্বর বললেন, আরে আমিও তো সেই খোঁজেই এসেছিলুম। ভেবেছিলুম জালার ভেতর থেকে সেই মহা-প্রতাপশালী ধোঁয়ার কায়া নিয়ে বেরোচ্ছে আলাদিনের দৈত্যের মতো। ভুল হয়েছিল। এ যে আমেরিকান গ্যাস। নাম মিক। সব ছারখার করে দিয়েছে।
এ তারই খেলা।
না-না, এ হল মানুষের বিজ্ঞানের খেলা।
তা হলে বিজ্ঞানই শয়তান।
হতে পারে। তবে আকাশে আমি তার অট্টহাসি আর কণ্ঠস্বর শুনেছি।
কী শুনলেন?
বললে, মুখ ভগবান, তোমার সৃষ্টির ভেতর আমি নিজেকে পাউডারের মতো ছড়িয়ে দিয়েছি। এখন আমার আর নির্দিষ্ট শরীর নেই। আমি এখন বহু হয়ে গেছি। কোটি-কোটি মনের কোথায় আমি তিলতিল হয়ে আছি, খুঁজে বের করতে তোমার চুল পেকে যাবে।
প্রভু, এই কলস্বনা নদীটির নাম?
বৈতরনী।
তাহলে চলুন প্রভু, ভাসাই ভেলা। পারুর জন্য মন কেমন করছে।