• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী – হুমায়ুন আজাদ

মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ফসল বৈষ্ণব পদাবলি। এ-কবিতাগুলো ক্ষুদ্র; কিন্তু এগুলোতে যেআবেগ প্রকাশিত হয়েছে, তা তুলনাহীন। এ-কবিতার নায়কনায়িকা কৃষ্ণ ও রাধা। বৈষ্ণব কবিরা কখনো রাধার বেশে কখনো কৃষ্ণের বেশে নিজেদের হৃদয়ের আকুল আবেগ প্রকাশ করেছেন এ-কবিতাগুলোতে। মধ্যযুগে মুসলমান কবিরা একটি নতুন প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন। তাঁরা সর্বপ্রথম শোনান নিছক মানুষের গল্প। মধ্যযুগে হিন্দু কবিরা দেবতার গান ও কাহিনী রচনায় যখন সমর্পিত, তখন মুসলমান কবিরা ইউসুফ-জুলেখা বা লাইলি-মজনুর হৃদয়ের কথা শোনান। এর ফলে দেবতার বদলে প্রাধান্য লাভ করে মানুষ। এ-মানুষ যদিও কল্পনার সৃষ্টি, তবু মানুষের কথা সবার আগে বলার কৃতিত্ব মুসলমান কবিরা দাবি করতে পারেন।

মধ্যযুগের অবসানে আসে আধুনিক যুগ, এইতো সেদিন, ১৮০০ অব্দে। আধুনিক যুগের সব চেয়ে বড়ো অবদান গদ্য। প্রাচীন যুগে, মধ্যযুগে বাঙলা সাহিত্যে গদ্য বলতে বিশেষ কিছু ছিলো না। তখন ছিলো কেবল কবিতা বা পদ্য। তখন গদ্য ছিলো না, তা নয়; গদ্যসাহিত্য ছিলো না। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকেরা সুপরিকল্পিতভাবে বিকাশ ঘটান বাঙলা গদ্যের। তাঁদের প্রধান ছিলেন উইলিয়ম কেরি। কেরির সহায়ক ছিলেন রামরাম বসু। উনিশশতকের প্রথম অর্ধেক কেটেছে সদ্য জন্মনেয়া গদ্যের লালনপালনে। বিভিন্ন লেখক নিজ নিজ ভঙ্গিতে গদ্য রচনা করেছেন, আর বিকশিত হয়েছে বাঙলা গদ্য। সে-সময়ের যাঁরা প্রধান গদ্যলেখক, তাঁরা হচ্ছেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত। গদ্যের সাথে সাহিত্যে আসে বৈচিত্র্য; উপন্যাস দেখা দেয়, রচিত হয় গল্প নাটক প্রহসন প্রবন্ধ আরো কতো কী। প্রথম উপন্যাস লেখেন প্যারীচাঁদ মিত্র; উপন্যাসের নাম আলালের ঘরের দুলাল। মহাকাব্য রচনা করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। নাম মেঘনাদবধকাব্য। মধুসূদন দত্ত আধুনিক কালের একজন মহান প্রতিভা। তাঁর হাতে সর্বপ্রথম আমূরা পাই মহাকাব্য ও সনেট, পাই ট্রাজেডি, নাম কৃষ্ণকুমারীনাটক। পাই প্রহসন, নাম বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা। এরপরে আসেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ। তারপর আসেন মোহিতলাল মজুমদার, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং আরো কতো প্রতিভা। তাঁরা সবাই বাঙলা সাহিত্যকে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে গেছেন।

প্রথম প্রদীপ : চর্যাপদ

বাঙলা ভাষার প্রথম বইটির নাম বেশ সুদূর রহস্যময়। বইটির নাম চর্যাপদ। বইটির আরো কতকগুলো নাম আছে। কেউ বলেন এর নাম চৰ্য্যাচর্যবিনিশ্চয়, আবার কেউ বলেন এর নাম চৰ্য্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়। বড়ো বিদঘুটে খটমটে এ-নামগুলো। তাই এটিকে আজকাল যেমনোরম নাম ধরে ডাকা হয়, তা হচ্ছে চর্যাপদ। বেশ সহজ সুন্দর এ-নাম। বইটির কথা বিশশতকের গোড়ার দিকেও কেউ জানতো না। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ। পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ওই বছর যান নেপালে। নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কার করে তিনি নিয়ে আসেন কয়েকটি অপরিচিত বই। এ-বইগুলোর একটি হচ্ছে চর্যাপদ। চর্যাপদ-এর সাথে আরো দুটি বই—ডাকার্ণব ও দোহাকোষ, যেগুলোকে তিনি নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ এর সাথেই আবিষ্কার করেছিলেন মিলিয়ে একসাথে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা (১৩২৩) নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এ-বই বেরোনোর সাথে সাথে সারা দেশে সাড়া পড়ে যায়, সবাই বাঙলা ভাষার আদি নমুনা দেখে বিস্মিত চকিত বিহ্বল হয়ে পড়ে। শুরু হয় একে নিয়ে আলোচনা আর আলোচনা। বাঙালি পণ্ডিতেরা চর্যাপদকে দাবি করেন বাঙলা বলে। কিন্তু এগিয়ে আসেন অন্যান্য ভাষার পণ্ডিতেরা। অসমীয়া পণ্ডিতেরা দাবি করেন একে অসমীয়া ভাষা বলে, ওড়িয়া পণ্ডিতেরা দাবি করেন একে ওড়িয়া বলে। মৈথিলিরা দাবি করেন একে মৈথিলি ভাষার আদিরূপ বলে, হিন্দিভাষীরা দাবি করেন হিন্দি ভাষার আদিরূপ বলে। একে নিয়ে সুন্দর কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।

এগিয়ে আসেন বাঙলার সেরা পণ্ডিতেরা। ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ইংরেজিতে একটি ভয়াবহ বিশাল বই লিখেন বাঙলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ (১৯২৬) নামে, এবং প্রমাণ করেন চর্যাপদ আর কারো নয়, বাঙালির। চর্যাপদ-এর ভাষা বাঙলা। আসেন ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ডক্টর সুকুমার সেন, ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত। তাঁরা ভাষা, বিষয়বস্তু, প্রভৃতি আলোচনা করে প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাঙলা ভাষায় রচিত; এটি আমাদের প্রথম বই। চর্যাপদ জ্বলে ওঠে বাঙলা ভাষার প্রথম প্রদীপের মতো, আলো দিতে থাকে আমাদের দিকে, আর আমরা সে-আলোতে পথ দেখে দেখে হাজার বছরের পথ হেঁটে আসি। সত্যিই আজ বিশশতকের শেষাংশে দাঁড়িয়ে এ-বইয়ের দিকে তাকালে একে প্রদীপ না বলে থাকা যায় না। এ-প্রদীপের শিখা অনির্বাণ। জ্বলে চিরকালের উদ্দেশে।

Page 5 of 52
Prev1...456...52Next
Previous Post

দূরবীন – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

Next Post

পার্থিব – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

Next Post

পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ - হুমায়ুন আজাদ

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In