.
ভাই ছোরা,
তা বললে তো চলবে না, এই সময় ওরা মরে গেলে হবে না। আমি আর ধরে আনতে পারব না বলে রাখলাম। প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করতে হয়েছিল। আম বাগানের ও-দিকটাতে কী ঘন কচু বন, তোমার কোনো ধারণাই নেই। আমি বলেই পেরেছিলাম। বড়োজোর আজ বাদে কাল। তারপর তো আর খাবারের দরকার হবে না, এখন আর অত বাছবিচার কীসের? তবে আশা করি ওদের একসঙ্গে রাখনি? তাহলে হিংস্র হয়ে উঠে আবার পরস্পরকে আক্রমণ করে!
আমাদের বাড়ির লোকরা শনিবারের তিনটের শোর জন্যে বাড়িসুদুসকলের টিকিট কিনেছে আর রবিবার ভোরে দল বেঁধে সোনারপুর যাওয়া হচ্ছে, সেখানে লুচি পাঁঠা রান্না হবে। আমাকে হিংসে করে আমার বাড়ির লোকদের সম্বন্ধে তুমি যা ইচ্ছে বলতে পার, আমার কাচকলাও এসে যাবে না। তা ছাড়া ওরা যে লোক ভালো নয় সে তো আমি বরাবর জানি। গত বছর যাত্রা দেখতে যাওয়া নিয়ে কী কাণ্ড করেছিল, সে আমি আজও ভুলিনি। না বলে যাব না তো কী করে যেতাম? বললে কি ওরা মত দিত বলতে চাও? সে যাক গে, এখন একটু চুপচাপ থাকো, এদের মনের সন্দেহ ঠান্ডা হোক, তারপর আর কোনো ভাবনাই থাকবে না। ওদিকে আমিও বেশ ফ্যাসাদে পড়েছি, টাকাকড়ি না হলে তো কোনো ব্যবস্থাই করা যাচ্ছে না। তোমার জন্মদিনে পাওয়া টাকাগুলো এরইমধ্যে কী করে খরচ হয়ে গেল, ভেবে পেলাম না! সব টাকা আমি জোগাব, আমি কি একটা ব্যাঙ্ক নাকি? ওই যে কী নাম, ভুলে যাচ্ছি যা নিয়ে দেবতারা ঝগড়া করতেন, ইচ্ছে-গাই না কী যেন? ইতি–
বন্দুক।
পুঃ–কালকের চিঠির উত্তর দিইনি, কারণ ফুল্লরা কেবিনে মামার সঙ্গে কাটলেট খেতে যাবার দরুন সময় পাইনি।
.
ভাই বন্দুক,
তোমার চিঠি পড়ে বুঝতে বাকি রইল না, তোমার কতদূর অধঃপতন হয়েছে। জন্মদিনের টাকা দিয়ে তো কবে সেই টিকিটের অ্যালবাম কিনেছিলুম, কোন কালে সে হারিয়েও গেছে।
আর টাকার অভাব আবার একটা কথা নাকি? আমার অনেক হাতের লেখা লিখতে হয়, নইলে টাকা রোজগার করা কী এমন শক্ত, বুঝলুম না। যাই হোক, কয়েকটা উপায় বাতলে দিচ্ছি, তাতে কিছুটাকার উপায় হবেই। যেমন (১) তেলেভাজার দোকান– কোনো মূলধন লাগে না। তোদের রান্নাঘরে ও ভঁড়ার ঘরে সব পাবি। (২) ধারের ব্যাবসা। মামার কাছ থেকে দুটো টাকা চেয়ে দু-টাকার জায়গায় তিন টাকা দেবে। আবার খাটাবি, হবে সাড়ে চার টাকা– তা হলেই হবে। (৩) লটারি করা। তোদের পুরোনো রেডিয়োটা লটারি করে দে, এক টাকা টিকিট। তিন দিনে দুশো টিকিট বিক্রি হবে তার দেড়-শো দিয়ে একটা নতুন রেডিয়ো কিনবি, বাকি টাকা আমাদের। এইগুলো করে দ্যাখ, নিশ্চয়ই যথেষ্ট হবে। ইতি–
ছোরা।
পুঃ– আর দ্যাখ, দু-এক দিনের মধ্যে যা হয় করিস। ওদের মধ্যে তিন জন নড়ছে-চড়ছে না। ভাতটাত খায় না কেউ। রুটিও না।
.
ভাই ছোরা,
তোর আহ্লাদ দেখে অবাক হই! আমি সব করব আর উনি শুধু বুদ্ধি জোগাবেন,এ তো মজা মন্দ না! এদিকে চারদিক থেকে বিপদ ঘনিয়ে আসছে। ওদের ভালো করে তোদের খালি গোয়ালে লুকিয়ে রেখেছিস? শব্দটব্দ করে না আশা করি? কারণ আমার খুব মনে হয় না–আমাদের পিছু নিয়েছে। জানিস তো ওর কীরকম লোভ। আমাকে এক দণ্ড ছাড়ে না, ইস্কুলে সঙ্গে যায় আসে।
গোপন জায়গার পাশ দিয়ে যাই আসি, তবু চিঠি নেওয়া একটা সমস্যা হয়ে পড়েছে। কেউ নিশ্চয় ওকে টাকা দিয়ে বশ করেছে। কারণ চিরকাল তো ওর ব্ল্যাক গড়ের মাঠ বলে জানি, অথচ কাল যখন সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছিল, পকেট থেকে ঝনঝন শব্দ হচ্ছিল। ও চান করতে বাড়ি গেলে এ-চিঠির ব্যবস্থা করব। যাই হোক, তুই কিছু ভাবিস না, কাল একটা হেস্তনেস্ত করবই। কিন্তু ভাই, মনে থাকে যেন, এবার আমাকে রাজা করতেই হবে, আমি আর ঘৃণ্য হীন পদে থাকতে রাজি নই। এত করছি শুধু ওই জন্যেই। ইতি–
বন্দুক।
.
ভাই বন্দুক,
গুপ্ত জায়গার কথাটা ম-কে বলতে হয়েছে, কারণ এরা আমাকে দু-দিন উপরি উপরি জোলাপ খাওয়াল, চিঠিপত্র নেওয়া আনার আর কোনো ব্যবস্থা করা গেল না। তবে ও কাউকে বলবে না বলেছে।ওর নাকি ভয় ভয় করে, যদি ধরা পড়ে, তাই। তাই ওকে কিন্তু সেনাপতি না করলে হয়তো সবাস করে দেবে। ওদিকে ওদের তো প্রায় সবার দফা শেষ। গোয়ালে আর ঢুকতেও ইচ্ছে করে না। সেই অন্যদের দিয়েই কাজ চালাতে হবে। টাকার কিছু করতে পেরেছিস নাকি? বেশি কেনবার কী দরকার? গোটা পাঁচেক হলেই তো যথেষ্ট। আমি ছোড়দাদুর পাকাচুল তুলে এক টাকা জমিয়েছি, বাকিটা কিন্তু তোকে তুলতেই হবে, নইলে সব মাটি, আর সময়ও নেই একদম। ইতি– ছোরা।
.
ভাই ছোরা,
শুনে খুশি হবি, সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। শই আমার শাপে বর হল। ওকেও দলে টানতে হল। বলেছি মন্ত্রী করে দেব। ওর কাছ থেকে তিন টাকা ধার নিয়ে পাঁচটা কিনেছি। আর যা যা লাগবে তোর টাকাটা দিয়েই হয়ে যাবে। আজ রাত্রে শ– নিজে গিয়ে সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। তুইমকে দিয়ে সেই অন্যদের জোগাড় করে পাঠাস আর টাকাটাও দিস। তাহলে কাল ভোরের মধ্যে সব হয়ে যাবে। শুধু তাদের বাঁচিয়ে রাখা গেল না, এই এক দুঃখ থেকে গেল। ইতি
বন্দুক।
.
ভাই বন্দুক,
আমার সত্যি সত্যি সর্দিজ্বর হয়েছে। জানতুম অত জোলাপ আমার সইবে না! তার ওপর সকাল থেকে মন খারাপ, কারণ কিছুই বুঝে উঠতে পারলুম না।ম–র দেখা নেই, সেই কাল সন্ধ্যে বেলা টাকা নিয়ে আর অন্যগুলোকে নিয়ে গেছে তো গেছেই, কাজ হাসিল হয়েছে কিনা তা পর্যন্ত বুঝলুম না। সব জানাস ভাই, নইলে এই রোগশয্যা থেকে আর উঠতে ইচ্ছে করছে না। ইতি–
ছোরা।