- বইয়ের নামঃ অচেনা অজানা বিবেকানন্দ
- লেখকের নামঃ শংকর
- প্রকাশনাঃ পোদ্দার বুকস্ ইন্টারন্যাশনাল (ভারত)
- বিভাগসমূহঃ ধর্মীয় বই
১. সন্ন্যাসী ও গর্ভধারিণী
সেই ১৮৯৩ সাল থেকে এদেশের চিত্তগগনে মধ্যাহ্নসূর্যের মতো উদ্ভাসিত হয়ে আছে স্বামী বিবেকানন্দ! উনিশ, বিশ এবং একুশ শতকের দেশী-বিদেশী গবেষকরা বিপুল নিষ্ঠায় নিরন্তর অনুসন্ধান চালিয়ে এখনও পরিপূর্ণ বিবেকানন্দকে এঁকে ফেলতে সক্ষম হননি। অজানা ও অচেনা বিবেকানন্দের অনুসন্ধান তাই চলছে এবং চলবে।
সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের সঙ্গে শংকর-এর প্রথম পরিচয় নিতান্ত বাল্যবয়সে ১৯৪২ সালে, যার চল্লিশ বছর আগে বেলুড়ে মহাসমাধি লাভ করেছেন বিদ্রোহী, বিপ্লবী ও জনগণমন বিবেকানন্দ। হাওড়ায় তারই নামাঙ্কিত বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে অতি অল্পবয়সে শংকর-এর বিবেকানন্দ-অনুসন্ধানের শুরু।
কেমন ছিলেন মানুষটি? সন্ন্যাসীর কর্তব্য ও সন্তানের কর্তব্যের সমন্বয় ঘটাতে গিয়ে তিনি কি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছিলেন? তার বোন কোথায় আত্মঘাতিনী হলেন? বিলেত থেকে ফেরার পথে উদাসী মেজভাই কোন অভিমানে পাঁচবছর বাড়িতে একটা চিঠি লিখলেন না? কোথা থেকে যোগাড় হল দত্ত পরিবারের শরিকী মামলার টাকাকড়ি? সমস্ত পরিবার কীভাবে সর্বস্বান্ত হলেন?
সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ কেমনভাবে বিদেশে বেদান্তের সঙ্গে বিরিয়ানি রান্নার প্রচার-অভিযানে নেমেছিলেন? কলকাতা শহর থেকে আরম্ভ করে কোথায়-কোথায় কতদিন তাকে অনাহারে থাকতে হয়েছিল? তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার কোনটি? কোন ফলটি তিনি একেবারেই অপছন্দ করতেন?
স্বামীজির দৈহিক উচ্চতা ও ওজন কত ছিল? তার প্রথম ও দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক কোথায় হয়েছিল? বিশ্ববিজয় করে ফেরবার পরেও কলকাতার বিখ্যাত ডাক্তাররা তাদের চেম্বারে ভিক্ষুক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে নির্দ্বিধায় কত টাকা ফি গ্রহণ করেছিলেন? চিকিৎসার খরচ সামলাতে হিমশিম খেয়ে কাদের কাছে স্বামীজি হাত পেতেছিলেন? আসন্ন বিদায়ের কথা ভেবেই কি তিনি পারিবারিক বিবাদের ফয়সালা করার জন্য মহাপ্রয়াণের মাত্র কয়েকদিন আগে অমন তৎপর হয়ে উঠেছিলেন? এমনই সব হাজারো প্রশ্নের ছোট ছোট এবং বড় বড় উত্তর সংগ্রহ করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে গিয়েছে লেখকের।
শংকর-এর স্বপ্নময় রচনায় অচেনা অজানা বিবেকানন্দই জানিয়ে দেন, কেন তিনি পুরুষোত্তম? সমকালের সমস্ত তাচ্ছিল্য ও যন্ত্রণা অবহেলা করে কেমন করে তিনি মহত্ত্বের হিমালয়শিখরে আরোহণ করেছিলেন? কেন প্রতিটি বড় কাজ করার সময় তিনি মৃত্যুর উপত্যকা চোখের সামনে দেখতে পেয়েছেন?
উৎসর্গ – শ্রীসত্যপ্রসাদ রায়বর্মণ শ্রদ্ধাস্পদেষু
যাঁর নিরন্তর উৎসাহ, অশেষ কৌতূহল, ধারাবাহিক অনুপ্রেরণা ও সহমর্মিতা ছাড়া এই বই লিখতে আমার আরও অনেক দেরি হয়ে যেতো।
শংকর
৩০ নভেম্বর ২০০৩
.
“কতবার আমি অনাহারে, বিক্ষতচরণে, ক্লান্তদেহে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছি। কতবার দিনের পর দিন এক মুষ্টি অন্ন না পেয়ে পথচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তখন অবসন্ন শরীর বৃক্ষচ্ছায়ায় লুটিয়ে পড়ত, তখন মনে হতো প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারতাম না, চিন্তাও অসম্ভব হয়ে পড়ত; আর অমনি মনে এই ভাব উঠত, আমার কোন ভয় নেই, মৃত্যুও নেই; আমার জন্ম কখনো হয়নি, মৃত্যুও হবে না; আমার ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, সোহ হম, সোহ হম। সারা প্রকৃতির ক্ষমতা নেই যে আমায় পিষে মারে। প্রকৃতি তো আমার দাসী! হে দেবাদিদেব, হে পরমেশ্বর, নিজ মহিমা প্রকাশ কর, স্বরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হও! উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত! বিরত হয়ো না। অমনি আমি পুনর্বল লাভ করে উঠে দাঁড়াতাম; তাই আমি আজও বেঁচে আছি।”
লস এঞ্জেলিসে বক্তৃতা
‘দ্য ওপেন সিক্রেট’
৫ জানুয়ারি ১৯০০
.
“না খেতে পেয়ে মরে গেলে দেশের লোক একমুঠো অন্ন দেয় না, ভিক্ষে-শিক্ষে করে বাইরে থেকে এনে দুর্ভিক্ষগ্রস্ত অনাথকে যদি খাওয়াই তো তার ভাগ নেবার জন্য দেশের লোকের বিশেষ চেষ্টা; যদি না পায় তো গালাগালির চোটে অস্থির!! হে স্বদেশীয় পণ্ডিতমণ্ডলী! এই আমাদের দেশের লোক, তাদের আবার কি খোসামোদ? তবে তারা উন্মাদ হয়েছে, উন্মাদকে যে ঔষধ খাওয়াতে থাকে, তার হাতে দু-দশটা কামড় অবশ্যই উন্মাদ দেবে; তা সয়ে যে ঔষধ খাওয়াতে যায়, সেই যথার্থ বন্ধু।”
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য
উদ্বোধন পত্রিকা
১৩০৬-০৮
.
“আমাদের এত বুদ্ধি মেধা কেন জানিস? আমরা যে সুইসাইডের বংশ, আমাদের বংশে অনেকগুলো আত্মহত্যা করেছে।…আমাদের পাগলাটে মাথা, হিসেব-ফিসেবের ধার ধারে না, যা করবার তা একটা করে দিলুম, লাগে তাক, না লাগে তুক।”
বলরাম বসুর বাড়িতে
যোগেন মহারাজকে
স্বামী বিবেকানন্দ
.
লেখকের নিবেদন
এতো চেনা-জানা হয়েও বিবেকানন্দকে অনেকসময় বড়ই অচেনা এবং অজানা মনে হয়েছে। প্রথমেই স্মরণ করি হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনে আমার পূজ্যপাদ হেডমাস্টারমশাই সুধাংশুশেখর ভট্টাচার্যের কথা। বয়সের এবং জ্ঞানের দুস্তর পার্থক্যের কথা মনে না রেখে তিনি কমবয়সী ছাত্রদেরও বিবেকানন্দ বিষয়ে নানা সংবাদ সরবরাহ করতেন। পরবর্তীকালে, ইস্কুলে সিনিয়র এবং আমার সাহিত্যগুরু শঙ্করীপ্রসাদ বসুর স্নেহপ্রশ্রয় ও নিবিড় সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্য লাভ করি। তার কালজয়ী রচনা বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ ধীরে ধীরে আমার চোখের সামনেই মহীরুহের আকার ধারণ করে। শঙ্করীপ্রসাদের গবেষণা থেকে প্রত্যাশার বেশি লাভ করেও কিন্তু আমার কৌতূহলের অবসান হলো না। বরং পিপাসা আরও বেড়ে গেল।