তোমার ঘরে কে ছিল এতক্ষণ?
কে ছিল, বুঝতে পারছ না? চলো আলাপ করিয়ে দিই।
দ্যাখো, তুমি যেমন, পড়েছ তেমনি এক বদমায়েশের পাল্লায়।
চুপ করো। যা-তা বলল না।
কেন বলব না? তোমার যা করাতে যাচ্ছে কোন ধর্ম, কোন সমাজ তা দাস্ত করবে না।
কেন করবে না? পুরুষদের স্বেচ্ছাচার যদি বরদাস্ত করতে পারে, তবে। মেয়েদেরটা করতে পারবে না কেন?
দ্যাখো, আর কোনও তর্ক করতে চাইনে।
তর্ক করতে তোমাকে কে ডেকেছে? কেন এসেছ এখানে?
এসেছি তোমাকে ফিরিয়ে নিতে।
ফিরিয়ে নিতে! কেন?
কেন আবার কি? স্বামী হিসেবে আমার দায়িত্ব রয়েছে।
তোমার আবার দায়িত্বজ্ঞান আছে নাকি?
চুপ। আর কোন কথা শুনব না। চলো, ফিরে চলো।
না, আমি যাব না।
বাজে কথা রাখো। এখন ফিরে চলো।
ফিরে যাওয়া এখন সম্ভব নয়।
কেন নয়?
কেন নয়, তা বুঝতেই পারছ। সব ব্যবস্থা পাকাঁপাকি হয়ে গেছে, এখন—
দ্যাখো, যদি ফিরে না যাও, তোমাকে আমি ‘বাইগ্যামির’ চার্জে ফেলব।
হ্যাঁ যাও। কোর্টে গিয়ে মামলা করো।
অগত্যা তাই করতে হবে। কিন্তু তার পরিণাম ভেবে দেখেছ?
পরিণাম না ভেবেই কি এ পথে পা দিয়েছি ভেবেছ? কী হবে? কয়েক বছর জেল, এই তো? হোক। স্বামীর স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে স্ত্রীর এ সংগ্রাম একেবারেই বিফলে যাবে না। নারী জাতির সামনে এ এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পুরুষদের বহুব্বিাহের বিরুদ্ধে আমার যুক্তি একদিন না একদিন আইনের মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই।
ও সব বড় বড় বুলি রাখো। এবার ফিরে চলো।
আমি যাব না।
যাবে না?
না।
তোমাকে যেতেই হবে।
না গেলে?
না গেলে পুলিশ ডাকব।
তা ডাক। কিন্তু জেনে রাখ, এ ব্যাপারে পুলিশের করবার কিছুই নেই।
তা হলে আমি এক সাংঘাতিক কথা উচ্চারণ করতে বাধ্য হব।
কী সাংঘাতিক কথা?
তোমাকে আমি তালাক দেব।
দাও। তা হলে তো বেঁচে যাই। হাত পা ধুয়ে পাক সাফ হই।
দ্যাখো, আর বাড়াবাড়ি করো না। এবার ফিরে চল।
আহা, হাত ছাড়ো। ব্রিও করছ কেন?
আতিয়া বেগমের রাগ রক্তিম চোখ-মুখের দিকে চেয়ে তিনি ভড়কে যান। হাত ছেড়ে দিয়ে হতাশভাবে একটা চেয়ারে বসে পড়েন।
আতিয়া বেগম বাথরুমে যান। ফিরে এসে খোঁপার ক্লিপ কাঁটা খুলে রাখেন টেবিলের ওপর। ভাঁজ করা লেপটা বিছানার ওপ্র পেতে দেন। তারপর ঘড়ির দিকে চেয়ে বলেন, রাত বারোটা। এবার উঠতে পারো। আমি ঘুমাব।
মিস্টার আফতাব গুম হয়ে বসেছিলেন। হঠাৎ যেন স্বপ্ন ভেঙে জেগে ওঠেন। ব্রা গলায় বলেন, আতিয়া আমি আমার মত বদলেছি। তুমি ফিরে চলো।
কীসের মত বদলেছ?
আমি আর বিয়ে করব না।
বিয়ে করবে না। কিন্তু এখন একথা শুনিয়ে লাভ কী? আমি তো আর আমার মত বদলাতে পারব না।
নিশ্চয়ই পারবে।
না, পারব না। আমি নিরুপায়।
মিস্টার আফতাব উঠে যান। আতিয়া বেগমের কাছে গিয়ে বলেন, আতিয়া আমায় মাপ করো। আমি আর কোন দিন বিয়ের কথা মুখে আর না।
হ্যাঁ, দশ বছর আগে এরকম কথাই শুনতাম। পুরুষদের আমি বিশ্বাস করি না।
এবার বিশ্বাস করো। তোমার গা ছুঁয়ে বলছি, আর কোন দিন ওকথা মুখে আনব না।
আতিয়া বেগম খাটের কিনারায় বসে পড়েন। তাঁর মুখ থমথম করছে। তাঁর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আফতাব বলেন, কী ভাবছ এত? দেরি হয়ে যাচ্ছে, চলল।
কিন্তু ভদ্রলোকটির সঙ্গে আমি যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওঁকে ধোঁকা দিতে পারব না।
এতে ধোঁকা দেয়ার কী আছে?
নিশ্চয়ই আছে, ওঁকে আমিই টেনে এনেছি এ পথে। বেচারাকে এভাবে দাগা দিয়ে ভেগে যাব, তা আমার পক্ষে অসম্ভব।
তবে কী করতে চাও।
ওর কাছে আমাদের মাপ চাওয়া উচিত।
মাপ চাইতে হবে কেন আবার?
মাপ চাইতে হবে না? বেচারাকে—
আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার যা অভিরুচি। কিন্তু আমাকে মাপ চাইতে হবে কেন?
নিশ্চয়ই চাইতে হবে। কিছুর জন্য তুমিই তো দায়ি।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আতিয়া বেগম হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে কী যেন ভাবতে থাকেন। মিস্টার আফতাব আবার বলেন, তবে আর দেরি কেন? চলো মাপ চেয়ে আসা যাক।
চলো। হ্যাঁ, আর একটা কথা। তুমি যে মত বদলেছ, কুষ্টিয়ায় টেলিগ্রাম করে দাও।
এত রাত্রে কোথায় টেলিগ্রাম করতে যাব? কাল করলেই চলবে।
না চল, হোটেরে টেলিফোন থেকে ফনোগ্রাম করে দিয়ে আসি।
রুম থেকে বেরিয়ে দু’জনেই নীচে চলে যান। ফনোগ্রাম পাঠিয়ে কিছুক্ষণ পরেই আবার ফিরে আসেন।
নিজের রুমে না গিয়ে পাশের দরজায় খটখট আওয়াজ দেন আতিয়া বেগম। তাঁর পেছনে মিস্টার আফতাব।
কয়েকবার খটখট দেওয়ার প্র বাতি জ্বলে ওঠে। ছিটকিনি খোলার শব্দ হয় খুট করে।
আতিয়া বেগম দরজাটা একটু ফাঁক করে মুখ বাড়াতেই মিস্টার আফতাব শুনতে পান রুমের ভেতর কেন যেন স্যানডেল পায়ে দৌড়াচ্ছে।
তাঁরা দুজনেই ভেতরে ঢোকেন। মিস্টার আফতাব কাউকে না দেখে আশ্চর্য হন। লোকটা ভয়ে পালিয়ে গেল নাকি!
হঠাৎ খাটের ওপর নজর পড়তেই দেখেন–কে একজন কম্বল মুড়ি দিয়ে রয়েছে। আর খাটের পাশ থেকে ঝুলছে কালো সাপের মতো একটা জিনিস।
কী ওটা!
মিস্টার আফতারে দুটো চোখে বিস্ময়ের বিদ্যুৎ চমকায়। তিনি বেণীটার দিকে চেয়ে বোকার মতো হাসতে থাকেন।