দ্যাখো, নিজের খুশিমত কোরান শরীফের ব্যাখ্যা করতে যেও না।
নিজের খুশিমতো কিছুই বলছি না। ভালো করে পড়ে দেখো। তা ছাড়া, কোন্ সময়ে, কোন অবস্থায় এ বিধান দিয়েছে, জানো?
না, জেনে দরকার নেই।
দরকার নিশ্চয়ই আছে। শোনো, ওহোদের যুদ্ধে অনেক মুসলমান শহিদ হয়েছিলেন। যাঁরা বেঁচে ছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল মুসলমান মেয়েদের তুলনায় অনেক কম। ঐ সময় সুরা নিসা নাজেল হয়। মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আর ঐ বাড়তি মেয়েলোকদের গতি করবার জন্যেই আল্লাহতায়ালা একজন পুরুষকে চারজন পর্যন্ত স্ত্রীগ্রহণের অধিকার দেন। তাও আবার শর্তসাপেক্ষে। কিন্তু এখন তো আর সে অবস্থা নেই। আমাদের দেশে পুরুষ আর মেয়েদের সংখ্যা প্রায় সমান। আর জন্মনিয়ন্ত্রণের যুগে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির কোন প্রশ্নই ওঠে না।
ও ইসলামের ঐ বিধানের আর দরকার নেই বলতে চাও?
তা কেন? ইসলামের বিধান চিরদিন বেঁচে থাকবে। বিশেষ অবস্থায় আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্যে তাকে কাজে লাগাব।
যেমন?
যেমন ধর, আমি যদি কোনদিন পঙ্গু হয়ে যাই তখন তুমি আর একটা বিয়ে করতে পার। এখন শুধু ঐ কানুনের দোহাই দিয়ে আর একটা বিয়ে করে অশান্তিই ডেকে আনবে। কানুন তৈরি হয় সমস্যা সমাধানের জন্য, সমস্যা বাড়াবার জন্যে নয়, মতলব হাসেলের জন্য নয়।
থাক, তোমার কথার কচকচি শুনতে চাইনে। আমার যা ইচ্ছে আমি তাই কব।
তোমার যা ইচ্ছে তাই করবে? তা বেশ। তা হলে আমিও যা ইচ্ছে তাই করব। আতিয়া বেগমের শরীর রাগে কাঁপতে থাকে।
আমিও আর একটা বিয়ে করব।
আর একটা বিয়ে করবে। তা করো, শরীয়তে যদি সে রকম বিধান থাকে।
শোনো, একজন স্ত্রীলোকের চার স্বামী হলে সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে গোলমাল বাঁধবে, কার সন্তান কোনটি চেনা যাবে না—এই যুক্তিতে চোদ্দো শ বস্তু আগে পুরুষদেরই শুধু চারটে বিয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে মেয়েদের দেওয়া হয়নি। এ যুক্তি দোহাই দিয়ে এ যুগে যদি পুরুষেরা চারটে বিয়ে করতে পারে, তবে ঠিক একই যুক্তিতে একজন স্ত্রীলোক এক সঙ্গে দু’জন পর্যন্ত স্বামী গ্রহণ করতে পারে।
সে কী রকম?
এটা বিজ্ঞানের যুগ। এ যুগে একাধিক স্বামীর সন্তানদের চিনে বের করা মোটেই কষ্টকর নয়। সন্তানদের রক্ত পরীক্ষা করলেই জানা যাবে, কে কার সন্তান।
রক্তের শ্রেণীবিভাগের কথা জানি কিন্তু তা দিয়ে সন্তান চেনা যাবে না।
নিশ্চয়ই চেনা যাবে।
যাবে! নিশ্চিতরূপে জানা যাবে কে কার সন্তান?
হ্যাঁ, নিশ্চিতরূপে নির্ভুলভাবে জানা যাবে কে কার সন্তান।
আমি বিশ্বাস করি না।
বিশ্বাস কর না?
আতিয়া বেগম তার হাতের বইটা খুলে নির্দিষ্ট একটা পৃষ্ঠা বের করে বলেন, এখানে কি লিখেছে শোন—
Innumerable experiments and extensive work have definitely shown that unions of……
Parents O X O give only O, but cannot give A, B, AB
Parents o X A give only O, A, but cannot give B, AB
Parents 0 X B give only O, B, but cannot give A, AB
Parents 0 X B give only A, AB, but cannot give O, B
পড়া শেষ করে আতিয়া বেগম বলেন, এবার বিশ্বাস হয়েছে তো?
হ্যাঁ, কিন্তু বিয়েশাদীর ব্যাপারে এর প্রয়োগ অসম্ভব।
কেন অসম্ভব? তোমারও আমার রক্ত এক শ্রেণীর। ঐ বারে তোমার অপারেশন-এর সময় রক্তের দরকার হয়েছিল। আমি রক্ত দিয়েছিলাম। তখনই জানতে পেরেছি, তোমার ও আমার রক্ত ০ শ্রেণীর। আমাদের ছেলে-মেয়েদের রক্তও তাই। এখন আমি যদি আবার A রক্ত শ্রেণীর একজনকে বিয়ে করি, তবে আমাদের সন্তান হবে অথবা AB। সন্তান জন্মের পর রক্ত পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে—সে সন্তান তোমার না তার।
দ্যাখো, বড় বাড়াবাড়ি হচ্ছে। এ সব শুনতেও ঘেন্না লাগে।
ঘেন্না লাগে! শুধু শুনতেই ঘেন্না লাগে? তুমি যে আর একটা মেয়েকে নিয়ে আমার চোখের সামনে ঘর করবে, তাতে আমার ঘেন্না লাগবে না?
দ্যাখো, পুরুষ আর মেয়েদের ব্যাপার আলাদা।
মোটেই নয়। পুরুষ ও নারী একই রক্তে-মাংসে গঠিত। তুমি যদি আর একটা বিয়ে করো, তবে আমিও করব।
তা কর, কিন্তু কোন ধর্ম, কোন সমাজই তা বরদাস্ত করবে না।
না করুক, তবুও, লুও আমি দেখিয়ে দিতে চাই–
হ্যাঁ, দেখাও। এ একটা অপূর্ব দৃষ্টান্ত হবে। দুনিয়ার লোক তোমার প্রশংসায় হাততালি দেবে। পাইওনিয়ার বলে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে তোমার নাম। চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন আফতাব।
দ্যাখো, তোমার টিটকারি তোয়াক্কা করি না। ভালো চাও তো এ বিয়ে ভেঙে দাও।
কেন ভেঙে দেব? তোমার ভয়ে? হঁহ্–।
তোমার শাহীন আর মমতার কী হবে, ভেবে দেখেছ।
ভাববার কী আছে?
ভাববার কিছু নেই? ওদের ভবিষ্যৎ ভেবেও তোমার সঝে চলা উচিত।
সমঝে চলা উচিত। আমি কি কেরানি না স্কুল-মাস্টার? ওদের জন্য এত টাকা রেখে যাব—
দুনিয়াতে টাকাই সব নয়।
নিশ্চয়ই, দুনিয়াতে টাকাই সব। ওদের জন্যে যা রেখে যাব, দু’হাতে খরচ করেও তা ফুরাতে পারবে না। তোমার ছেলেটা তো ইচ্ছে করলে চার চারটে বউ
পুষতে পারবে।
দ্যাখো, তোমার মাথায় ভূত চেপেছ। নিজে তো উচ্ছন্নে যাবেই, ওদেরকেও না নিয়ে ছাড়বে না।
চুপ করো।
কেন চুপ করব? তুমি তোমার মত বদলাবে কি না, বলো?
না।
বিয়ে তা হলে করবেই?
হ্যাঁ, করব। নিশ্চয়ই করব এবং পঁচিশ তারিখই তারিখ।