২১.
রাতে কবিতার একটা শব্দের জন্যে ক্রমাগত মাথা খুঁড়ছি— খুঁজে বেড়াচ্ছি আকাশের নীলিমা থেকে পাতালের কালি অবধি। কিন্তু ঠিক শব্দটি কিছুতেই খুঁজে পাই না। সেই শব্দ, যা দিয়ে সেই শব্দের অতীত এক ক্ষমাহীন স্বর্গে পৌঁছানো যায়। মাথা গরম হয়ে ওঠে।
তখন দরোজায় টোকা পড়ে। তাকিয়ে দেখি, মিনা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আলো জ্বেলে রেখে, দরোজা খুলে, বেরিয়ে আসি।
সিঁড়িতেই বসে আছে কাজের মেয়েটি। কিন্তু, একী সাজ-গোজ! চমকে উঠি আমি। গভীর করে কাজল-মাখা, আঁট করে শাড়ি পরা। হায়, অবোধ মেয়ে! প্রেম আর কামের তফাত জানে না। তফাত সত্যিই আছে কি? স্বজ্ঞার দৌলতে আমার চেয়ে প্রকৃত জেনেছে ও কি? কিন্তু আমাকে আবার ভালোবেসে ফেলে নি তো? অদ্ভুত মায়া লাগে। বুকের ভেতরে ছিঁড়ে যায় আমার। সমস্ত কাম মরে যায়। লু কীরকম অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ওকে আলিঙ্গন করি। শরীর প্রবেশের সময় আমার কণ্ঠ থেকে আমার অজ্ঞাতে যেন বেরিয়ে আসে ‘ডালিয়া। ডা-লিয়া! ডা-লি-য়া!’
বাতাসে কোনো দূরের ঘ্রাণ, দোতলায় শাসিঁকাচে ক্রমাগত ডাল ঘষটানির শব্দ, ক্রমাগত চৈত্রের পাতা পড়ার শব্দ।