তোমার বাসা কোথায়?
এখন তার বাসা যদি কাছাকাছি না হয় তাহলে তো বিপদ হয়ে যাবে। টুনি আবার তাকে সাহায্য করল, বলল, ছোটাচ্চু, তুমি তোমার বাসাটা কোথায় লিখ। যদি তার বাসা থেকে দূরে হয় তখন ভান করবে ঠিক সেখানে একটা কাজে গিয়েছ!
ছোটাচ্চু লিখল
আমার বাসা মিরপুর।
সুমন লিখল
আমার বাসা উত্তরা। সরি।
ছোটাচ্চু হাতে কিল দিয়ে বলল, অন্তত বাসাটা কোথায় বের করে ফেলেছি! সুমন উত্তরাতে আছে!
টুনি বলল, এখন তুমি লিখ কাল পরশু তুমি উত্তরা যেতে পার। তখন ইচ্ছে করলে তুমি তাকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পার, তার প্রশ্নগুলো নিতে পার। বেশি উৎসাহ দেখিও না, তাহলে সন্দেহ করবে।
ছোটাচ্চু লিখল
উত্তরাতে আমার ডেন্টিস্ট এপয়েন্টমেন্ট আছে। আমি কাল উত্তরা যাব। তুমি চাইলে তখন দিতে পারি।
টুনি জিজ্ঞেস করল, এতো কিছু থাকতে ডেন্টিস্ট এপয়ন্টমেন্টের কথা কেন বলছ?
ছোটাচ্চু হা হা করে হেসে বলল, বুঝলি না? ভান করব দাঁতে ব্যথা, কথা বলতে পারছি না। বিজ্ঞানের প্রশ্ন যদি করে ফেলে ধরা পড়ে যাব না?
সুমনকে শেষ পর্যন্ত টোপ খাওয়ানো গেল। সে উত্তরার একটা ফাস্ট ফুডের দোকানের ঠিকানা দিয়ে বলল, সন্ধ্যেবেলা সেখানে গেলে সে তার মজার প্রশ্নগুলো দিয়ে যাবে। সেই ই-মেইলটি পেয়ে সুমন একটা গগনবিদারী চিৎকার দিল এবং সেই চিৎকার শুনে ছোটদের সাথে সাথে বড়রাও চলে এল! বড়রা যখন বুঝল কোনো বিপদ আপদ হয়নি তখন যে যার মতো চলে গেল শুধু বাচ্চারা থেকে গেল।
একজন জিজ্ঞেস করল, পালিয়ে যাওয়া ছেলেটাকে খুঁজে পেয়েছ?
ছোটাচ্চু বুকে থাবা দিয়ে বলল, ইয়েস। কাল সন্ধ্যায় দেখা হবে!
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, কেমন করে খুঁজে বের করলে ছোটাচ্চু?
ছোটাচ্চু গম্ভীর মুখে বলল, এটা একই সাথে বুদ্ধি, মেধা, বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং কঠোর পরিশ্রমের ফসল।
ছোটাচ্চুর গম্ভীর মুখ দেখে বাচ্চারাও মুখ গম্ভীর করে মাথা নাড়ল। শুধু টুনি মুখ টিপে হাসল।
শান্ত জিজ্ঞেস করল, কালকে যখন দেখা হবে, তখন তুমি কী করবে?
ছোটাচ্চু বলল, আমি তখন তার বাবাকে জানাব। বাবা সেই ফাস্ট ফুডের দোকানে অপেক্ষা করবে, আমি যখন সুমনের সাথে কথা বলব তখন তার বাবা এসে ক্যাঁক করে ধরে ফেলবে। ছোটাচ্চু আনন্দে হা হা করে হাসল। বাচ্চারা কেউ তার হাসিতে যোগ দিল না।
টুনি বলল, কালকে তার বাবাকে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
কেন?
যদি কোনো কারণে সুমন না আসে তাহলে তুমি লজ্জা পাবে। তুমি যদি তার ঠিকানাটা বের করে আনতে পার, তাহলে সেই ঠিকানাটা পরে যে কোনো সময়ে তার আন্ধুকে দিতে পারবে।
ছোটাচ্চু বলল, ঠিকই বলেছিস। কালকে কোথায় থাকে দেখে আসি। যখন হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হব, তখন জানাব।
সবাই চলে গেলে টুনি বলল, ছোটাচ্চু।
কী হল?
কালকে তুমি আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যেয়ো।
তোকে? কেন?
তুমি যদি সুমনের পিছনে পিছনে যাওয়ার চেষ্টা কর, সে বুঝে যাবে। তাই তুমি বসে থাকবে। আমি ওর বাসাটা চিনে আসতে যাব।
তু-তুই!
হ্যাঁ। আমি তোমার এসিস্টেন্ট। মনে আছে?
ছোটাচ্চু মাথা চুলকে বলল, তুই যাবি?
হ্যাঁ। সমস্যা কোথায়?
ছোটাচ্চু চিন্তা করে দেখল আসলে সেরকম সমস্যা নেই। রাস্তাঘাটে শতশত মানুষ হাঁটাহাঁটি করে তার মাঝে একটা বাচ্চা মেয়ে তো হেঁটে হেঁটে যেতেই পারে। ছোটাচ্চু তো একেবারে একা ছেড়ে দিচ্ছে না, সে তো আশেপাশেই আছে। সময়টা সন্ধেবেলা যখন সব মানুষজন হাঁটাহাঁটি করে।
সন্ধ্যাবেলা ছোটাচ্চু ফাস্টফুডের দোকানে ঢোকার আগে তার মুখে কিছু তুল্য ঢুকিয়ে নিল যেন মুখের বাম পাশটা একটু ফুলে থাকে। ডেন্টিস্টের কাছে যারা যায় তাদের দাঁতে ব্যথা থাকে, মুখ ফুলে থাকে। টুনি কোথায়। অপেক্ষা করবে সেটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল না, কিন্তু কপাল ভালো রাস্তার ঠিক উল্টোপাশে একটা বইয়ের দোকান পেয়ে গেল। টুনি সেখানে বই দেখতে দেখতে চোখের কোণ দিয়ে ছোটাচ্চুকে লক্ষ করতে লাগল।
ঠিক সাতটার সময় চোখে চশমা হালকা-পাতলা একটা ছেলে হাতে কিছু কাগজ নিয়ে ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকল। ছোটাচ্চু আর টুনি দুজনেই ছেলেটাকে চিনতে পারল, তার বাবা এই ছেলেটারই ছবি দিয়েছেন। ছেলেটা সুমন।
সুমন ফাস্ট ফুডের দোকানে যারা বসে খাচ্ছে তাদের সতর্ক চোখে লক্ষ করে, বোঝাই গেল বিজ্ঞান লেখককে খুঁজছে। তখন ছোটাচ্চু হাত নেড়ে তাকে ডাকল। সুমন ছোটাচ্চুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, আপনি কি বিজ্ঞান লেখক?
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, গাবা গাবা গাবা-
দাঁত ব্যথা সেজন্যে মুখ খুলে কথা বলতে পারছে না, এরকম ভান করে অভিনয় করতে গিয়ে কোনো শব্দই বের হল না, অসতর্কভাবে এরকম বিচিত্র কথা বলে ফেলেছে!
সুমন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, বলল, কী বললেন?
ছোটাচ্চু হাত দিয়ে তার মুখ দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করল যে তার দাঁতে ব্যথা তাই কথা বলতে পারছে না, অস্পষ্ট ভাবে বলল, আমা দাতা বাথা–কাথা বালতা পারা না।
আপনার দাঁতে ব্যথা? কথা বলতে পারেন না?
ছোটাচ্চু জোরে জোরে মাথা নাড়ল, সুমন বলল, তাহলে কথা বলার দরকার নেই। এই যে আমার প্রশ্ন। বলে সে কাগজগুলো ছোটাচ্চুর দিকে এগিয়ে দিল।
ছোটাচ্চু প্রশ্নগুলো নিয়ে তার কাগজগুলো এগিয়ে দিয়ে আবার দাঁত ব্যথার জন্যে কথা বলতে না পারার কারণে কষ্ট করে কথা বলার অভিনয় করল, তামার পাশার আত্তার।