সাত্ত্বিক ভাব
স্তম্ভ হয় ধর্ম্ম বয় লোমাঞ্চ প্রকাশ। বিবর্ণ কম্পন অশ্রু গদ্গদ ত্রাস।।
প্রিয় বিনা সুখ যত দুঃখ সে তো হয়। প্রিয় পাইলে দুঃখে সুখ রাগ তারে কয়।।
০৭. বয়োবিভাগ
যৌবন কথন
যৌবনের চারি ভেদ শুন বিবরণ। আগে বয়ঃসন্ধি পরে নবীন যৌব।।
তারপরে যুবা ভাবে উন্মাদ লক্ষণ। তার পরে বৃদ্ধভাব বুঝ বিচক্ষণ।।
যৌবনের সন্ধিকাল দ্বাদশ বৎসর। দশম নিয়ম কন ব্যাস মুনিবর।।
যৌবন পরম ধন : স্ববশ ইন্দ্রিয়গণ : শিশু বৃদ্ধ দেখি লোক রসকথা কহে না।
বালকের নাহি শুদ্ধি : বৃদ্ধ হলে হতবুদ্ধি : যুবা বিনা রস আর : কোনখানে রহে না।।
যুবা সূর্য্য বলমান্ : যুবা চন্দ্র দ্যূতিমান : যুবা বিনা সংসারের ভার অন্যে বহে না।
বিনা নর কিবা অন্য : যৌবন সকল ধন্য : যৌবন হইলে নষ্ট দেখি দেহ রহে না।।
নারীর যৌবন বড় দুরন্ত। শরীর মাঝে পোষে বসন্ত।।
বিনোদ বিননে বিনায়ে বেণী। পুরুষে দংশিতে পোষে সাপিনী।।
কত কত অলি নয়নে ঘোরে। মধুবাক্যে কত কোকিল ঝোরে।।
মলয় বাতাস শ্বাসেতে বহে। সৌরভে সুরভি গৌরব নহে।।
কমলকানন আননে থাকে। বান্ধুলী মধুর অধর রাখে।।
দুখানি বিষাণ নিশান রাগি। হৃদয়ে মলয় রেখেছে ঢাকি।।
লোহিত কমলে মৃণাল সাতে। আভরণে ঢাকি রেখেছে হাতে।।
ত্রিবলীডোরেতে বান্ধি অনঙ্গ। কটিতটে থুয়ে দেখয়ে রঙ্গ।।
সম্বরে অম্বর দিয়া কান্তার। মদন সদন রসভাণ্ডার।।
কিশলয় করিকরের ভয়ে। চরণের তলে শরণ হয়।।
যৌবনমরম জানে না যেবা। পণ্ডিত তাহারে বলয়ে কেবা।।
জপ তপ জ্ঞান দান যে কিছু। সকলি যৌবনধনের পিছু।।
যৌবন এ তিন অক্ষর লেখ। যে জন সরম উত্তম দেখ।।
যৌবনমরম যে জনে নাই। প্রথম ছাড়িয়া তাহার ঠাঁই।।
যদ্যপি যৌবনে উদ্যম করে। প্রথমের মতো গলিয়া মরে।।
ভারতচন্দ্রের ভারতী যোগ। যৌবনেতে কর যৌবন ভোগ।।
০৮. জাতিকথন
স্ত্রীজাতি কথন
অতঃপর চারি জাতি বর্ণিব কামিনী। পদ্মিনী চিত্রিণী আর শঙ্খিনী হস্তিনী।।
পদ্মিনী
নয়নকমল : কুঞ্চিত কুন্তল : ঘন কুচস্থল মৃদু হাসিনী।
ক্ষুদ্র রন্ধ্রনাসা : মৃদু মন্দ ভাষা : নৃত্য গীতে আশা সত্যবাদিনী।।
দেবদ্বিজে ভক্তি : পতি অনুরক্তি : অল্প রতিভক্তি নিদ্রাভোগিনী।
সুললিত কায় : লোম নাহি হয় : পদ্মগন্ধ কয় সেই পদ্মিনী।।
চিত্রিণী
প্রমাণ শরীর : সর্ব্বকর্ম্মে স্থির : নাভি সুগভীর মৃদুহাসিনী।
সুকঠিন স্তন : চিকুর চিকণ : শয়ন ভোজন মধ্যচারিনী।।
তিন রেখাযুত : কণ্ঠ বিভূষিত : হাস্য অবিরত মন্দগামিনী।
কমনীয় কায় : অল্প লোম হয় : ক্ষারগন্ধ কয় সেই চিত্রিণী।।
শঙ্খিনী
দীঘল শ্রবণ : দীঘল নয়ন : দীঘল চরণ দীঘল পাণি।
সুদীঘল কায় : অল্প লোম হয় : মীনগন্ধ কয় শঙ্খিনী জানি।।
হস্তিনী
স্থূল কলেবর : স্থূল পয়োধর : স্থূল পদকর ঘোরনাদিনী।
আহার বিস্তর : নিদ্রা ঘোরতর : বিহারে প্রখর পরগামিনী।।
ধর্ম্ম নাহি ডর : দন্ত ঘোরতর : কর্ম্মেতে তৎপর মিথ্যাবাদিনী।
সুপ্রশস্ত কায় : বহু লোম হয় : মদ গন্ধ কয় সেই হস্তিনী।।
পুরুষ কথন
চারি জাতি নায়িকার শুনহ নায়ক। শশ মৃগ বৃষ অশ্ব সন্তোষদায়ক।।
পদ্মিনীর শশ পতি মৃগ চিত্রিণীর। বৃষে শঙ্খিনীর তুষ্টি অশ্বে হস্তিনীর।।
রূপ গুণ দোষ সব নায়িকার মতো। চারি জাতি নায়কের লক্ষণ সম্মত।।
রসভাণ্ড মত রসদণ্ড ভেদ হয়। ছয় আট দশ বার পরিমাণ কয়।।
নরনারী স্বভাবেতে বিশেষ যে হয়। কহিতে কবিতা বাড়ে ক্ষোভ এই হয়।।