উৎকণ্ঠিত নায়ক
কেন না আইল প্রিয়া : বিরহে বিদরে হিয়া : স্থির হব কি করিয়া : ধৈর্য্য আর রহে না।
কিবা কোন কার্য্যপাকে : ভীতা কিবা দেখে তাকে : নহে এতক্ষণ থাকে : কামে সে কি দহে না।।
পান গুয়া গন্ধমালা : অগ্নিসম দেয় জ্বালা : করিলেক ঝালাপালা : তনু প্রাণ রহে না।
আসিবেক কতক্ষণে : তবে সুখ পাব মনে : বিনা তার দরশনে : আর তাপ সহে না।।
অভিসারক নায়ক
দ্বিতীয় প্রহর রাতে : মোরে কহিয়াছে যেতে : সময় হইল প্রায় স্থির মন টলিল।
সুখের কি জানে লেখা : গেলে মাত্র পাব দেখা : অনেক দিনের পর আজি আশা ফলিল।।
অন্ধকার দেখি আলো : গৌর লোক দেখি কালো : শত্রুজনে মিত্র ভাব জলে স্থল হইল।
রজনীতে দিবা মত : তিমির হইল হত : কুপথে সুপথ জ্ঞান তাহে মন লইল।।
বিপ্রলব্ধ নায়ক
সুখের সময় ঘরে : স্বীয়া নানা রস করে : তাহা ছাড়ি আইলাম পরআশা করিয়া।
গুরু ভয় লঘু করে : অন্ধকারে নাহি ডরে : ছাড়িয়া আপন বেশ পরবেশ ধরিয়া।।
সঙ্কেত স্মরণ করে : এসেছিল বেশ ধরে : আমার বিলম্ব বুঝি ঘরে গেল ফিরিয়া।
আসিয়া সঙ্কেত ঠাঁই : দেখিত পাইল নাই : আহা মরি অন্য কেবা লয়ে গেল হরিয়া।।
স্বাধীনভার্য্যা নায়ক
তুমি প্রাণ তুমি ধন : তুমি মন তুমি গণ : হৃদয়ে যে ক্ষণ থাক সেই ক্ষণ ভাল লো।
যত জন আর আছে : তুচ্ছ করি তোর কাছে : ত্রিভুবনে তুমি ভাল : আর সব কালো লো।।
তোমার বদনচাঁদ : অঞ্চলে চঞ্চল চাঁদ : আমার মোহন ফাঁদ অন্ধকারে আলো লো।
করেছি বিস্তর সেবা : আজি মোরে সাজাইবা : আমার মাথার কিরা : যদি মোরে টালো লো।।
খণ্ডিত নায়ক
আসিব বলিয়া গেলা : অন্য সঙ্গে হল মেলা : শরীরেতে চিহ্ন আছে লুকাবে কি বলিয়া।
মোর সঙ্গে কথা কয়ে : বঞ্চিলা অন্যেরে লয়ে : কতেক করিলা ভাব এ কান্তেরে ছলিয়া।।
ভিন্ন ভিন্ন দেখি বেশ : আলুথালু দেখি কেশ : দেখিয়া তোমার ভাব দেহ যায় জ্বলিয়া।
কে সাধিল মনোরথ : খণ্ডিয়া পীরিতি পথ : নিজ স্থানে যাও তুমি আমি যাই চলিয়া।।
কলহান্তরিত নায়ক
অল্প অপরাধ পেয়ে : কেন বা দিনু খেদায়ে : এবে কার মুখ চেয়ে কামজ্বালা সারিব।
বিবেচনা নাহি করি : এখন ঝুরিয়া মরি : অনুমানে হেন বুঝি রহিতে না পারিব।।
পুনঃ দূতী পাঠাইব : প্রীতি করি আনাইব : সবে এক দোষ তাহে পতি হয়ে হারিব।
হারি মানি দ্বন্দ্ব যাউক : তার অভিমান থাউক : তাহা বিনা এ সঙ্কটে তরিবারে নারিব।।
প্রোষিতভার্য্যা নায়ক
কোথায় রহিল বামা : বিরহে দহিয়া আমা : নিরন্তর কামজ্বালা কত আর সহিব।
পিক ডাকে কুহু কুহু : ভ্রমর গুঞ্জরে মুহু : সাপেখেকো বায়ুজ্বালা কত আর বাহিব।।
চন্দন কমলদল : পোড়া যেন দাবানল : সুধাকর বিষধর কত সয়ে রহিব।
আলো দেখি অন্ধকার : পুরস্কার তিরস্কার : হেন বুঝি অবশেষে উদাসীন হইব।।
প্রোষিতপত্নী নায়ক
যদি যাবে আমা ছেড়ে : প্রাণ কেন লও কেড়ে : আপন উদ্বেগ হেতু অগ্নি লয়ে যাবে লো।
তোমা সঙ্গে যাবে তাপ : আমি এড়াইব শাপ : খেতে শুতে অনুক্ষণ মনস্তাপ পাবে লো।।
প্রবোধ করিয়া তায় : ঠেকিবে দারুণ দায় : এমত হইবে ব্যক্ত সম্বিত হারাবে লো।
কয়ে দিনু শেষ মর্ম্ম : বুঝিয়া করহ কর্ম্ম : পদে পদে পাবে জ্বালা ক পদ এড়াবে লো।।
ইত্যাদি বুঝিয়া নায়কের অষ্টমত। উদাহরণেতে অনুভবে পাবে যত।।
০৪. নায়ক সহায়
পীঠমর্দ্দ বিট বলি চেটক বিদূষক। এই সব ভেদ হয় বিস্তর নায়ক।।
পীঠমর্দ্দ
রমণী করিলে ক্রোধ যে করে সান্ত্বনা। ধর্ম্মধী সচিব পীঠমর্দ্দ সেই জনা।।
রমণীরত্ন সহে না আঁচ : টুটয়ে অগ্নি পরশে কাঁচ : করিতে মান দিবে না স্থান দিবে না স্থান।
কি করে ক্ষোভ সহে আমার : অবলাজাতি মৃদু আকার : জ্বলয়ে বহ্নি নহে সে মান নহে সে মান।।
রস তাপে হিমে বিনাশ পায় : তপনে তাপ শুকায়ে যায় : রসিয়ে মান রবে কোথায় রবে কোথায়।
প্রমদা বন্ধন সংসারেরি : প্রমদা আকার আহ্লাদেরি : সতত রাখহ সুযত্নে তায় সুরত্ন প্রায়।।
বিট
কালশাস্ত্রে যেই জন পরমনিপূণ। বিট বলি তার নাম ধরে নানাগুণ।।
চুমু আলিঙ্গন : কামের দীপন : মন্ত্র তন্ত্র আদি যত।
যাহে নারী বশ : যাহে বাড়ে রস : এমত জানিবা কত।।
বেশভূষা বাস : সন্দেহ সম্ভাষ : নৃত্য গীত নানামত।
ফিরি নানা ঠাঁই : আর কর্ম্ম নাই : আমার এই সতত।।
চেটক
সন্ধান চতুর যেই সময় ঘটক। কবিগণ তার নাম বলয়ে চেটক।।
যখন বিরলে পাব : তখন নিকটে যাব : যদি ক্রোধে গালি দেয় তবু সহে রহিব।
নয়নের ভঙ্গি করি : ফল কিম্বা ফুল ধরি : চারি চক্ষে এক হলে ইসারায় কহিব।।
স্নানেতে যখন যায় : ধরিতে বসন তায় : কৌতুকে কুম্ভীর হয়ে জলে ডুবি রহিব।
দুঃখ বিনা নহে সুখ : দেখিতে সে চাঁদমুখ : গ্রীষ্ম হিম বৃষ্টি বাতে পরাঙ্মুখ নহিব।।
বিদূষক
কিবা রোষে কিবা তোষে যার পরিহাস। বিদূষক তার নাম হাস্যের বিলাস।।
চন্দন কজ্জল রাগ : বদনে যে দেখ রাগ : অপমান এই দেখ মুখে কালীচূণ লো।
দেখ দেখ শোভে কিবা : চাঁদে আলো হেন দিবা : দোহাই দোহাই তোর প্রাণ মোর যায় লো।।
করিয়া পরীক্ষা যদি : রসের তরঙ্গ নদী : দুই জনে ডুবি আইস কে হয় নিপুণ লো।
আপনি দোষের ঘর : পরীক্ষা করিতে ডর : আমার মাথায় দোষ এতো বড় গুণ লো।।
০৫. শৃঙ্গার নিরুপণ
আদ্যরসের দুই ভেদ শুনহ প্রয়োগ। প্রথমতঃ বিপ্রলম্ভ দ্বিতীয় সম্ভোগ।।