উত্তমা
অহিত করিলে পতি যেবা করে হিত। উত্তমা তাহার নাম বলয়ে পণ্ডিত।।
মধ্যমা
হিত কৈলে হিত করে অহিতে অহিত। মধ্যমা তাহার নাম মধ্যমচরিত।।
অধমা
হিত কৈলে অহিত করয়ে যেই জন। অধমা তাহার নাম বলে কবিগণ।।
চণ্ডী নায়িকা
পতি প্রতি করে যেই অকারণ ক্রোধ। চণ্ডী তার নাম বলে পণ্ডিত সুবোধ।।
০২. নায়িকা সহায়
বেশভূষা করে দেয় পরিহাস। কথা কৈতে খেতে শুনে শিখায় বিলাস।।
যার কাছে বিশ্রাম বিশ্বাস কথা কয়। সহচরী সখী সেই পঞ্চ মত হয়।।
সখী নিত্যসখী প্রিয়সখী প্রাণসখী। অতিপ্রিয়সখী এই পঞ্চমত সখী।।
সখী
আমার নিকটে রয়ে : মরম আমারে কয়ে : এমত শিখাব কথা সুধাবৃষ্টি করিবে।
আঁচড়িয়া দিব কেশ : বানাইয়া দিব বেশ : থাকুক পতির মন মুনিমন ভুলিবে।।
হাবভাব লীলা হেলা : শিখাইব নানা খেলা : আসিতে আমার কাছে কাহারে না ডরিবে।
দোষ যত লুকাইব : গুণ যত প্রকাশিব : বড় দায়ে ঠেক যদি আমা হতে তরিবে।।
দূতীসখী
নায়ক নায়িকা যেই করয়ে বচন। বিরহ যাপন করে দূতী সেই জন।।
স্বয়ং দূতী আদ্যদূতী এই যে প্রকার। আদ্যদূতী তিন মত শুন ভেদ তার।।
অমিতার্থ নিশ্চয়ার্থ আর পত্রহারী। বিশেষ বিশেষ শুন করিয়া বিচারি।।
ইঙ্গিতে যে কর্ম্ম করে অমিতার্থ সেই। নিশ্চয়ার্থ আজ্ঞা পায়ে কর্ম্ম করে যেই।।
পত্র লয়ে কর্ম্ম করে পত্রহারী সেই। বিশেষিয়া বুঝ সবে কয়ে দিনু এই।।
আদ্যদূতী
সিন্দূর চন্দন চুয়া : ফুলমালা পান গুয়া : পড়ে দিতে পারি যদি ভুলে চন্দ্রবদনী।
কুমন্ত্র এমত জানি : বিষ দেখে রাজা রাণী : অপ্রীতি করিতে পারি কাম কামকরণী।।
যে নারী না নর জানে : যে নর না নারী মানে : তাহারে মিলাতে পারি দিনে করে যামিনী।
নাগর নাগরী যত : হও মোর অনুগত : সিদ্ধি করে মনোরথ যাই দ্রুতগামিনী।।
০৩. নায়ক প্রকরণ
নায়ক নায়িকা দুই শৃঙ্গারে প্রধান। নায়িকা বর্ণিনু শুন নায়ক সন্ধান।।
পতি উপপতি আর বৈশিক নাগর। স্বীয়া পরকীয়া আর সামান্যার ঘর।।
বেদমত বিভা করে যে জন সে পতি। উপপতি সেই যার পিরীতে বসতি।।
কোনরূপে ধনলোভে হয় সংঘটন। বৈষয়িক বৈশিক নাগর সেই জন।।
পতিভেদ
অনুকূল দক্ষিণ ধৃষ্ট শঠ চারি মত। পতিভেদ কেহ বলে তিনে কেহ রত।।
একে অনুরাগ যার সেই অনুকূল। দক্ষিণে সে যার ঘরে পরে হয় তুল।।
ধৃষ্ট সেই দোষ করে পুনঃ করে হঠ। কপট বচনে পটু সেই জন শঠ।।
অনুকূল
ওলো ধনি প্রাণধন : শুন মোর নিবেদন : সরোবরে স্নান হেতু যেয়ো না লো যেয়ো না।
যদ্যপি বা যাও ভুলে : অঙ্গুলে ঘোমটা তুলে : কমলকানন পানে চেয়ো না লো চেয়ো না।।
মরাল মৃণাল লোভে : ভ্রমর কমল ক্ষোভে : নিকটে আইলে ভয় পেয়ো না লো পেয়ো না।
তোমা বিনা নাহি কেহ : ঘামে পাছে গলে দেহ : যায় পাছে ভেঙ্গে কটি ধেয়ো না লো ধেয়ো না।।
দক্ষিণ
তোমার নিকটে যত : দিব্য করি কহি কত : বাহির হইবামাত্র পর দেখি ভুলে লো।
তোমার যেমন প্রীতি : পরসঙ্গে সেই রীতি : কহিলাম আপনার দোষগুণগুলি।।
কি করে ধর্ম্মের ভয় : লোকলাজে কিবা হয় : দেখিতে পরের মুখ ফিরি কুলি কুলি লো।
তুমি যদি হও রুষ্ট : অন্যে করিবেক তুষ্ট : ইহা বুঝি মোর সঙ্গে ছেড়ে দেহ ঠুলি লো।।
ধৃষ্ট
দোষ দেখে একবার : কৈল নানা তিরস্কার : লাজ পেয়ে আনু ফিরে তবু দয়া হল না।
ভুজপাশে বান্ধ্যা ধর : নিতম্ব প্রহার কর : দশনেতে কর ক্ষত অভিমানে গলো না।।
দূর কৈলে দূর হব : গাল দিলে সয়ে রব : আমারে সহিল সব তোমারে তো সলো না।
পুরুষ পরশমণি : যারে ছোঁয় সেই ধনী : ইহা বুঝে অনুক্ষণ দূর দূর বলো না।।
শঠ
কালি করেছিনু : আনিতে ভুলিনু : ক্ষম সেই অপরাধ।
যে বল করিব : যাহা চাহ দিব : পূরাহ সকল সাধ।।
অঙ্গেতে যে দাগ : তোমারি সোহাগ : মিথ্যা দেহ অপবাদ।
আমার পরাণ : হরিণী সমান : তোমার চক্ষু নিবাদ।।
উপপতি
নিজ নারী আছে ঘরে : যাহা বলি তাহা করে : নানা রূপ গুণ ধরে : তাহে মন রয় না।
করিতে অন্যায় সঙ্গ : সদাই সরস অঙ্গ : এ বড় অপূর্ব্ব রঙ্গ : ধর্ম্মভয় হয় না।।
যাইতে সঙ্কেতস্থান : সতত আকূল প্রাণ : অপরাধ জ্ঞান মান : কিছু মনে লয় না।
ব্যক্ত হলে কালামুখ : বাড়ীতে নাহিক সুখ : রমণেতে নানা দুখ : তবু ক্ষমা হয় না।।
বৈশিক নাগর
গিয়াছিনু সরোবরে : স্নান করিবার তরে : দেখিয়াছি একজন অপরূপ কামিনী।
চক্ষু মুখ পদ্ম ছন্দ : কিবা ছন্দ কিবা মন্দ : নীলাম্বরে ঝাঁপে তনু মেঘে যেন দামিনী।।
ঈশ্বর সদয় হন : দূতী মিলে একজন : এই ক্ষণে তার কাছে যায় দ্রুতগামিনী।
যত চাহে দিব ধন : দিব নানা আভরণ : কোনমতে মোর সঙ্গে বঞ্চে এক যামিনী।।
নায়কের উত্তমাদি ভেদ
উত্তম মধ্যম আর অধম নিয়মে। নায়িকার যে ক্রম নায়ক সে ক্রমে।।
বাসসজ্জা আদি নায়িকার ভেদ যত। নায়ক সে ভেদ হয় লক্ষণ সম্মত।।
উপপতি বৈশিকেতে সকলি বিদিত। পতি প্রতি রসাভাষ কেবল খণ্ডিত।।
স্বকীয়ার রসাভাষ জান অভিসার। পতির খণ্ডিত ভাব তেমতি প্রকার।।
সর্ব্বজন সুসম্মত আর ভাব সব। উদাহরণেতে দেখ কর অনুভব।।
বাসসজ্জা
শয়ন সময় : বন্ধু রসময় : করে রমণীর মোহন সাজ।
অন্য কার্য্য ছলে : শয্যাঘরে চলে : সাধিতে আপন গোপন কাজ।।
হাতে লয়ে যন্ত্র : গান কামতন্ত্র : মনে পেয়ে লাজ পায় এ লাজ।
ভাবে খাটে বসি : প্রাণের প্রেয়সী : আসিতে না জানি কতেক ব্যাজ।।