মানবতী
এস পরাণ-পুত্তলি এস : মরে যাই কিবা বেশ : আলোতে রহ হে রূপ ভাল করে হেরি রে।
আলতা কজ্জলদাগ ভালে : অরুণ প্রকাশ রাহু গালে : ভাবে আছ ভাল জানি ভারিভুরি হেরি রে।।
নায়িকার অবস্থাভেদ
এ সব নায়িকা পুনঃ অষ্টমত হয়। বিপ্রলব্ধা সম্ভোগ তাহার পরিচয়।।
বাসসজ্জা উৎকণ্ঠিতা ও অভিসারিকা। বিপ্রলব্ধা তার পর স্বাধীনভর্ত্তৃকা।।
খণ্ডিতা তাহার পর কলহান্তরিতা। প্রোষিতভর্ত্তৃকা এই অষ্ট পরিমিতা।।
বাসসজ্জা
পতি হেতু বাসঘরে যেই করে সাজ। বাসসজ্জা বলে তারে পণ্ডিতসমাজ।।
আঁচড়িয়া কেশপাশ : পরিয়া উত্তম বাস : সখীসঙ্গে পরিহাস গীতবাদ্য ঘটনা।
চামর চন্দন চুয়া : ফুলমালা পানে গুয়া : হাতে লয়ে শারীশুকে কামরস পঠনা।।
কিঙ্কিনীকঙ্কণ হার : বাজুবন্ধ সীঁতি টাড় : নূপুরাদি অলঙ্কার নিতি নব পর না।
যোগী যেন যোগাসনে : বসিয়া ভাবয়ে মনে : কতক্ষণে পতিসঙ্গে হইবে ঘটনা।।
উৎকণ্ঠিতা
স্বামীর বিলম্ব যেই ভাবে অনুক্ষণ। উৎকণ্ঠিতা তাহারে বলয়ে কবিগণ।।
হইল বহু নিশি : প্রকাশ হয় না দিশি : আইল কেন নাহি কালিয়া।
পিকের কলরব : ডাকিছে অলি সব : অনলে দেও দেহ জ্বালিয়া।।
তিমির ঘনতরে : সভয়ে বনচরে : ফিরয়ে কিবা পথ ভুলিয়া।
অপর সখীরসে : রহিল পরবশে : মদন মোরে দিল জ্বালিয়া।।
অভিসারিকা
স্বামীর সঙ্কেতস্থলে যে করে গমন। তারে অভিসারিকা বলয়ে কবিগণ।।
নিকট সঙ্কেতসময় আইল : শুনে রসময়ী মূরলী গাইল : ধরি ধনুঃশর মদন ধাইল : চলে নিধুবনে কামিনী।
পিক কলকলি শারীশুক ধ্বনি : ফুটে বনফুল ভ্রমর গুনগুনী : তাহাতে মিলিত নূপুর রুণরুণী : শীঘ্র চলে মৃদুগামিনী।।
বাছিয়া পরিলেক নীল অম্বর : মদন হেম গৃহে মেঘাড়ম্বর : পথিকজন ডর করিতে সম্বর : ঝাঁপিল তাহে তনু দামিনী।
বদন সরসিজ গন্ধযুত মন : মোহিত সহচরী ভ্রমর শিশুগণ : তথি মলয়াচল গতি মন্দ পবন : যাওল দ্রুত সখি যামিনী।।
বিপ্রলব্ধা
সঙ্কেতে স্থানেতে গিয়া নাহি পায় পতি। বিপ্রলব্ধা বলে তারে পণ্ডিত সুমতি।।
তিল পরিমাণ মান : সদা করি অনুমান : গুরুভয় লঘুভয় গেলা।
গৃহ ছাড়ি ঘন ঘন : করিমাল আরোহণ : সিন্ধু তরিনু ধরি ভেলা।।
হরি হরি মরি মরি : উহু উহু হরি হরি : তব নহে হরি সনে মেলা।
পর দুঃখ পরশ্রম : পরজনে জানে কম : অপরূপ খলজন খেলা।।
স্বাধীনভর্ত্তৃকা
কোলে বসে যার পতি আজ্ঞার অধীন। স্বাধীনভর্ত্তৃকা তারে বলে সুপ্রবীণ।।
শুন শুন প্রাণনাথ : নিবেদি হে যোড়হাত : পূরিল সকল সাধ : কিছু শেষ রয় হে।
বেঁধে দেহ মুক্তকেশ : বিনাইয়া দেহ বেশ : তুমি মোরে ভালবাস : লোকে যেন কয় হে।।
দেখিয়া তোমার মুখ : অতুল হইল সুখ : পাসরিনু যত দুখ : আছিল যে ভয় হে।
যত কাল জীয়ে রই : তোমা ছাড়া যেন নই : নিতান্ত করিয়া কই : মনে যে রয় হে।।
খণ্ডিতা
অন্য ভোগচিহ্ন অঙ্গে আসে যার পতি। খণ্ডিতা তাহার নাম বলে শুদ্ধমতি।।
আইস বঁধু দ্রুত হয়ে : কেন আইস রয়ে রয়ে : মরিব বালাই লয়ে : কিবা শোভা পেয়েছ।
কপালে সিন্দূরবিন্দু : মলিন বদনইন্দু : নয়ন রক্তের সিন্ধু : মোর দিকে ধেয়েছ।।
অধরে কজ্জল দাগ : নয়নে তাম্বুল রাগ : বুঝি কেবা পেয়ে লাগ : মোর মাথা খেয়েছ।।
তোমার কি দোষ দিব : বাপমায়ে কি বলিব : হরি হরি শিব শিব : যম মোরে ভুলেছে।।
কলহান্তরিতা
কলহে খেদয়ে পতি পশ্চাৎ তাপিতা। কবিগণে বলে তারে কলহান্তরিতা।।
ক্রোধে হয়ে হতজ্ঞান : কৈনু তোরে অপমান : এখন আকুল প্রাণ : দেখিতে না পাইয়া।
ফুটিছে বিবিধ ফুল : ডাকে ভৃঙ্গ অলিকুল : সামালিব এই শূল : কার মুখ চাহিয়া।।
কাতর হইয়া অতি : বিস্তর করিয়া নতি : চরণে ধরিল পতি : না চাহিনু ফিরিয়া।
করিনু যেমন কর্ম্ম : ফলিল তাহার ধর্ম্ম : মরুক এমত মর্ম্ম : দুঃখে যাই মরিয়া।।
প্রোষিতভর্ত্তৃকা
পরবাসে পতি যার মলিনা বিরহে। প্রোষিতভর্ত্তৃকা তারে কবিগণ কহে।।
অনল চন্দন চুয়া : গরল তাম্বুল গুয়া : কোকিল বিকল করে অতি।
বিধবার মত বেশ : অস্থিচর্ম অবশেষ : তাপে কাম পোড়ায় বসতি।।
মনোজ তনুজ মত : কোদণ্ড করিয়া হত : হাতে লয় পিণ্ডের পদ্ধতি।
সখীমুখে মান শুনি : পতি এলো হেন গণি : দেখিয়া শ্বাসের গতাগতি।।
প্রোষৎভর্ত্তৃকা
যার কাছে আসি পতি প্রবাসগমন। প্রোষিতভর্ত্তৃকা মধ্যে তাহার গণন।।
এ আট লক্ষণে তার না মিলে লক্ষণ। নবমী নায়িকা হতে পারে কেহ কন।।
কিন্তু অষ্ট নায়িকা সকল গ্রন্থে কয়। নবমী কহিতে গেলে গণ্ডগোল হয়।।
অতএব দ্বিধা বলি প্রোষিতভর্ত্তৃকা। প্রোষিতভর্ত্তৃকা আর প্রোষ্যৎপতিকা।।
পুনঃ শুন ওহে প্রাণ : পতি পরবাসে যান : তুমি কি করিবে এবে সত্য করি কহিবে।
এবে জানিলাম দড় : তোমা হইতে পতি বড় : নহে কেন আগে যান তুমি পাছে রহিবে।।
যদি বড় হতে চাও : তবে আগে আগে যাও : নহে তুমি লঘু হবে আমার কি বহিবে।
এবে সুখ দেয় যারা : পিছে দুঃখ দিবে তারা : কয়ে অবসর আমি কত জ্বালা সহিবে।।
ইত্যাদি কহিয়া দিনু নায়িকা যতেক। পতির গমনকালে সবার প্রত্যেক।।
পুথি বাড়ে সকলের করিতে কবিতা। অনুভবে বুঝি হবে লক্ষণ মিলিতা।।
নায়িকাদি উত্তমাদি ভেদ
উত্তমা মধ্যমা আর অধমা নিয়মে। এ সব নায়িকা তিন মত হয় ক্রমে।।