পরকীয়া নায়িকা
অপ্রকাশে যার মতি পরপতি সনে। পরকীয়া তাহারে বলয়ে কবিগণে।।
পরকীয়া ভেদ
উঢ়া আর অনূঢ়া বিভেদ হয় তার। উঢ়া সেই বিবাহ হইয়া থাকে যার।।
অনূঢ়া সে জন যার হয় নাই বিয়া। পিত্রাদি অধীন হেতু সেও পরকীয়া।।
অনূঢ়া
শুন শুন প্রাণবঁধু : পিয়াইয়া মুখমধু : এমত করিলে বশ কত গুণ কব হে।
অন্য সঙ্গে যদি পিতা : করে মোরে বিবাহিতা : কেমনে তাহার সঙ্গে তোমা ছাড়ি রব হে।।
এমত করিয়া কর্ম্ম : নহে যেন স্ত্রীর ধর্ম্ম : বুকে মুখে হলে দাগ কলঙ্কিনী হব হে।
যাবৎ না বিভা হয় : তাবৎ এমন হয় : তাবতি এমত পীড়া দুজনেতে সব হে।।
উঢ়া
আপনার পতি আছে : সদা তারে পাই কাছে : তথাপি দারুণ মন পর লাগি মরে গো।
সঙ্কেত তরুর মূলে : সঙ্কেত নদীর কূলে : ঘাটে ভাঙ্গামাঠে মাঠে অন্ধকার ঘরে গো।।
কিঙ্কিণী-কঙ্কণ-রোল : লুকায়ে চুম্বন কোল : মরনে নাহিক সুখ কোটালের ডরে গো।
পরপতিরতি আশ : ঘর ছাড়ি পরবাস : সুখ যদি নহে লোক তবে কেন করে গো।।
পরকীয়ার অন্যভেদ
বিদগ্ধা ললিতা গুপ্তা কুলটা মুদিতা। পরকীয়া নানাভেদ প্রাচীন লিখিতা।।
বিদগ্ধা
বিদগ্ধ দ্বিমত হয় বাক্য আর কাজে। কথা শুনি কার্য্য দেখি বুঝি বা অব্যাজে।।
বাগ্বিদগ্ধা
চিরপরবাসী স্বামী : বিরলে কাতর আমি : বসন্তে মাতিল কাম কেমনে বা থাকিব।
প্রভুর কুসুমোদ্যান : বড় মনোহর স্থান : মনুষ্যের গম্য নহে সেই স্থানে যাইব।।
ডাকে পিক অলিকুল : ফুটে নানাজাতি ফুল : গাইয়া প্রভুর গুণ রজনী পোহাইব।
করিতে আমার তত্ত্ব : হইবে যাহার সত্ত্ব : সেই বঁধু তারে দেখা সেইখানে পাইব।।
ক্রিয়াবিদগ্ধা
সুখে শুয়ে পতি আছা : রামা বসে তার কাছে : ইশারায় উপপতি পিকডাকে ডাকিল।
রামা বলে হলো দায় : পাছে পতি টের পায় : না দেখি উপায় ভেবে স্তব্ধ হয়ে রহিল।।
কোকিল ডাকিছে হোর : কাম ভয়ে পাছে ঘোর : শ্রান্ত আছ নিদ্রা যাও বলে চক্ষু ঢাকিল।
জাগ্রত আমার প্রিয় : কেহ ডাকে বনপ্রিয় : আর কি তোমারে ভয় বলে দুই রাখিল।।
লক্ষিতা
পরপতিমতিআশা ঢাকিতে যে নারে। লক্ষিতা করিয়া কবিগণ বলে তারে।।
আজি প্রভু দেশে এলে : রতিচিহ্ন কিসে পেলে : সোহাগ পড়ুক মরে সতীপনা হরিলে।
তুমি এলে বার্ত্তা পেয়ে : দেখিতে আইনু ধেয়ে : আছাড় খাইনু পথে সে তত্ত্ব না করিলে।।
মুখে বল দন্তচিহ্ন : বুক বলে নহে ছিন্ন : আলু থালু বেশ দেখি বুঝি লতা ধরিলে।
নষ্ট হই দুষ্ট হই : তোমা বিনা কারো নই : কলঙ্ক এড়াবে নাহি সে জন না মরিলে।।
গুপ্তা
হয়েছে হতেছে হবে পরসঙ্গে রতি। গুপ্ত করে যে জন সে জন গুপ্তমতি।।
মুখে বুকে দেখি দাগ : শাশুড়ী করেন রাগ : একে তো বিরহে মরি আর অই ভয় লো।
কান্দিয়া পোহাই নিশা : আবেশে হারাই দিশা : কেমন কেমন করে অধর হৃদয় লো।।
স্তন নিজ নখাঘাতে : অধর পীড়িয়া দাঁতে : কোনমতে নিবারণ করি এ সময় লো।
এইরূপে দিবারাতি : রাখিয়াছি কুজ জাতি : চক্ষু খেয়ে তবু লোক কত কথা কয় লো।।
কুলটা
পতি বর্ত্তমানে যার অনেকেতে কাজ। কুলটা তাহারে বলে পণ্ডিতসমাজ।।
আরে বিধি নিদারুণ : কি তোর স্মরিব গুণ : কুলটার আশা পূর্ণ করিতে না পারিলি।
হস্ত পদ চক্ষু কান : দিলি দুই দুই খান : উড়িবারে দুই খান পাখা দিতে নারিলি।।
চৌদ্দ ভুবনে যত : পুরুষ বিবিধ মত : সবার বুঝিতে বল তাই বুঝি সারিলি।
এ দুঃখ বা কত সব : অন্যের কি কথা কব : চতুর্ম্মুখ রজোগুণ তবু তুই নারিলি।।
মুদিতা
পরসঙ্গে রতিআশে উল্লসিতা যেই। বিঘ্নহীন দেখিয়া মুদিতা হয় সেই।।
প্রবাসে রয়েছে পতি : ননদী প্রসূতবতী : বিধবা শাশুড়ী ঐ দৃষ্টিহীন রয় লো।
দেবর বিলাস রায় : শ্বশুর ভবনে যায় : মন্দ মন্দ গন্ধবহ বিদরে হৃদয় লো।।
অস্ত গেছে দিনমনি : যতেক রসিক ধনি : ওই শুন বংশীধ্বনি : করয়ে ললিত লো।
রোমাঞ্চ হতেছে মোর : খসিছে কাঁচালী ডোর : কেন সই ওষ্ঠাধর : হতেছে কম্পিত লো।।
পরকীয়া সুখ যত : ঘরে ঘরে শুনি কত : অভাগীর ধর্ম্মভয় এত করে মরি লো।
পরপুরুষের মুখ : দেখিয়া যে হয় সুখ : এ কি জ্বালা সদা জ্বলি হরি হরি হরি লো।।
সামান্য বনিতা
ধনলোভে ভজে যেই পুরুষ সকলে। সামান্য বনিতা তারে কবিগণ বলে।।
স্বকীয়া ধর্ম্মের বশে : পরকীয়া প্রীতি রসে : অমূল্য যৌবন ধন পুরুষেরে দেই লো।
আমার যৌবনধন : ভোগ করে যেই জন : মান বুঝি মূল্য করে দিতে পারে যেই লো।।
যখন যে ধন চাই : সেইক্ষণে যদি পাই : আমার মনের মত বন্ধু হবে সেই লো।
ধনিক রসিক জানি : নাগর মিলাবে আনি : আপনার মর্ম্ম কথা কয়ে দিনু এই লো।।
সামান্য বনিতার ভেদ
অন্যভোগ দুঃখিতা আর বক্রোক্তি গর্ব্বিতা। মানবতী আদিভেদে সামান্য বনিতা।।
বক্রোক্তিগর্ব্বিতা
গর্ব্বিতা দ্বিমত হয় রূপে আর প্রেমে। দুইটি একত্র হলে হীরা যেন হেমে।।
রূপগর্ব্বিতা
মুখ দেখি যদি আরশী ধরে। দড় বলে ছায়া সে লয় হরে।।
মদন জানিত অধিক করে। দেখিতাম কিন্তু গিয়াছে মরে।।
প্রেমগর্ব্বিতা
অনিমিষ আঁখি স্থির চরিত্র। আপনার বঁধু করিয়া চিত্র।।
আমারে দেখয়ে এ কি বিচিত্র। কেহ বঁধু সখী শত্রু কি মিত্র।।
অন্যসম্ভোগদুঃখিতা
কহ দূতি গিয়াছিলে কোন বনে। বড় শোভয়ে অঙ্গ ফুলাভরণে।।
নিজবেশ করে দড় আইলি লো। কই গেলি নরাধমসন্নিধি লো।।
ভুলিয়াছিলি আর ভুলাইলি রে। মধু গূঢ় বনে কত পাইলি রে।।