প্রগল্ভা
প্রগল্ভা সে রতিরসে পূর্ণ আশা যার। রতি প্রীতি আনন্দেতে মোহ হয় যার।।
মধ্যা প্রগল্ভা ধীরাদি ভেদ
মানকালে মধ্যা প্রগল্ভার তিন ভেদ। ধীরাধীরা আর ধীরাধীরা পরিচ্ছেদ।।
মুগ্ধার এ ভেদ নাই ভয় তার মূল। ক্রোধ হলে এক ভাব ক্রন্দনআকুল।।
প্রকারে প্রকাশে ক্রোধ যে জন সে ধীরা। সোজাসোজি যার ক্রোধ সে জন অধীরা।।
কিছু সোজা কিছু বাঁকা যার হয় ক্রোধ। ধীরাধীরা বলে তারে পণ্ডিত সুবোধ।।
মধ্যা ধীরা
আজি প্রভু দড় দড় : বেশ বনায়েছ বড় : শ্বেত রক্ত চন্দনের : চাঁদ ভালে ধরেছ।
মন দেখি ভাঙ্গা ভাঙ্গা : নয়ন হয়েছে রাঙ্গা : বুঝি কোন দোষ দেখি : মোরে রোষ করেছ।।
তোমা বিনা প্রভু নাই : যাইবার নাহি ঠাঁই : কুমুদের চাঁদ যেন : তেন মন হরেছ।
অপরাধ ক্ষমা কর : নূতন চন্দন পর : এই লও নবমালা বাসীমালা পরেছ।।
মধ্যা অধীরা
সোহাগ করিয়া নিত্য : বসহ আমার ভৃত্য : আজি দেখি এ কি কৃত্য : দর্পণেতে চাও হে।
অধরে কজ্জলদাগ : নয়নে তাম্বুলরাগ : অলক্তাক্ত ভাল ভাগ : কার কাছে পাও হে।।
মোরে প্রাণ বলে ডাক : অন্যের নিকটে থাক : বুঝিলাম মনে রাখ : মন কলা খাও হে।
তোমা দেখি হয় ভীতি : কঠিন তোমার রীতি : বুঝিনু তোমার প্রীতি : যাও যাও যাও হে।।
মধ্যা ধীরাধীরা
তুমি মোর প্রাণপতি : কখন ধরিলা রতি : বুঝি সুখে ভুলেছিনু : তেঁই নাই মনে হে।
বুকে দেখি নখচিহ্ন : অধর দর্শনে ভিন্ন : ভালে আলতার দাগ : রক্তিমা নয়নে হে।।
শ্রমযাক মুখ ধোও : ক্ষণেক শয্যায় শোও : ছুঁয়ে শুদ্ধ কর মালা : তাম্বুল চন্দন হে।
কত জান ভারিভুরি : দেখিতে দেখিতে চুরি : পরিহার নমস্কার : তোমা হেন জনে হে।।
প্রগল্ভা ধীরাধীরা
কাজের সময় : যত কথা হয় : এবে কোথা রয় : মনে না থাকে।
কেমন ধরম : কেমন রকম : কেমন মরম : কহিব কাকে।।
ধিক্ বিধাতায় : এ হেন আমায় : দিয়াছে তোমায় : ইহারি পাকে।
দেখি হে চঞ্চল : ছোঁবে কি অঞ্চল : এ কাজে কি ফল : কে তোমা ডাকে।।
প্রগল্ভা অধীরা
কোন ফুলে বঁধু : পান কর মধু : হয়ে এলে যদু : পোড়াতে মোরে।
আল্তা কজ্জল : সিন্দুর উজ্জ্বল : জাগিয়া বিকল : নয়ন ঘোরে।।
এতেক বলিয়া : ক্রোধেতে জ্বলিয়া : কমল ফেলিয়া : মারিল জোরে।
কাঁদিয়ে নাগর : গুণের সাগর : কোথায় আদর : থাকয়ে চোরে।।
প্রগল্ভা ধীরাধীরা
জাগিয়া নয়ন : তোমার যেমন : আমার তেমন : সকল বটে।
সব কাজে মম : ফলে তরতম : কিসে আমি কম : বুঝিলে বটে।।
বিধি কৈল নারী : লাজ দিল ভারী : তেঁই সে না পারি : তোমার হঠে।
বৃক্ষমূলে হানি : শিরে চাল পানি : চরণ দুখানি : নৌকার তটে।।
জ্যেষ্ঠাদি ভেদ
এই ধীরা এ অধীরা এই ধীরাধীরা। জ্যেষ্ঠা আর কনিষ্ঠা দ্বিভেদ হয় ফিরা।।
পতির অধিক স্নেহ যারে সেই জ্যেষ্ঠা। অল্প স্নেহ যারে তারে বলয়ে কনিষ্ঠা।।
ধীরা জ্যেষ্ঠা
স্ত্রীর বুঝি ধীর ক্রোধ : দূরে গেল শোধবোধ : বন্ধু করে উপরোধ : ধীরে ধীরে কহিছে।
যদি পেয়ে থাক দোষ : তবু যুক্ত নহে রোষ : হাস্য কর পরিতোষ : কামানলে দহিছে।।
রক্তপদ্ম দুটি পায় : ভ্রমর নূপুর তায় : নিত্য নানারস খায় : আজি তাই রহিছে।
আকূল আমার প্রাণ : তবু নহে সমাধান : কঠিন তোমার মান : পরিমাণ নহিছে।।
ধীরা কনিষ্ঠা
স্ত্রীর দেখে স্থির মাস : করিবারে সমাধান : বন্ধু করে অপমান : ক্রোধে ক্রোধ হরিব।
কিসে মোর পেয়ে দোষ : কেন কর এত রোষ : কিসে হবে পরিতোষ : বল তাই করিব।।
কেহ বুঝি কহিয়াছে : গিয়াছিনু কারো কাছে : অঙ্গে বুঝি চিহ্ন আছে : তবে কিসে তরিব।
আরম্ভিয়া ছিল ক্রোধ : তা করিল উপরোধ : এত দূরে শোধবোধ : কত সেধে মরিব।।
অধীরা জ্যেষ্ঠা
যদ্যপি অধীরা হয়ে : গালি দিলা কটু করে : তবু থাকিলাম সয়ে : না সয়ে কি করিব।
তুমি প্রাণ তুমি ধন : তোমা বিনা অন্য জন : যদি জানে মোর মন : পরীক্ষা আচরিব।।
রুষ্ট হলে কটু কও : তুষ্ট হলে কোলে লও : আমা বিনা কারো নও : এই গুণে তরিব।
ছলছুতা মিছা সাঁচা : না জানি বিস্তর প্যাঁচা : প্রাণেশ্বরী প্রাণ বাঁচা : নহে আজ মরিব।।
অধীরা কনিষ্ঠা
বিনা দোষে দেও গালি : মাথে কলঙ্কের ডালি : মুখে যেন চুনকালি : কিসে মুখ চাহিব।
হয়েছি তোমার প্রভু : কত দোষ পাই তবু : গালি নাই দেই কভু : কত গালি খাইব।।
বিনয়ে না মানে বোধ : যদি নাহি ছাড় ক্রোধ : এত দূরে শোধবোধ : দেশ ছেড়ে যাইব।
তোমার যেমন মর্ম্ম : আমার তেমন কর্ম্ম : ইশাদ থাকিও ধর্ম্ম : কার্য্যকালে পাইব।।
ধীরাধীরা জ্যেষ্ঠা
একবাক্যে বুঝি রাগ : আর বাক্যে অনুরাগ : হৃদয়ে হইল দাগ : বুঝিতে না পারিয়া।
কি করিলে হও তুষ্ট : কি কহিলে হও রুষ্ট : অদৃষ্ট হইল দুষ্ট : কিসে যাবে সরিয়া।।
যদি অপরাধী হই : নিতান্ত করিয়া কই : তোমা বিনা কারো নই : দুঃখে লও তারিয়া।
তুমি ধ্যান তুমি জ্ঞান : তুমি মান অপমান : তোমা বিনা নাহি আন : দেখিনু বিচারিয়া।।
ধীরাধীরা কনিষ্ঠা
একবাক্যে দেখি রোষ : আর বাক্যে বুঝি তোষ : না বুঝিনু গুণ দোষ : বড় দায় পড়িল।
কি করিলে ভাল হবে : বল ভাই করি তবে : নহে ঘরে লয়ে রবে : আমার কি বহিল।।
পদ্মিনী ভ্রমরপ্রিয়া : ভ্রমরে খেদায়ে গিয়া : তাহারি বিদরে হিয়া : বুঝি তাই ফলিল।
প্রমোদসময় নইক : আমারে না হয় হউক : ক্রোধটি তোমার রউক : যা হবার হইল।।