আমাদের বাড়ি থেকে একা আমারই নিমন্ত্রণ ছিল।
অনেক রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়ি ফিরতেই প্রমীলা ধরলে কেমন বউ দেখলে— আমাদের বেবি নাকি?
বললাম—কী জানি, চিনতে পারলাম না—কিন্তু যার বিয়ে তারই দেখা পেলাম না—
—সে কি?
—সে যে কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে—অনেক চেষ্টা করলাম দেখতে, কিছুতেই দেখা পেলাম না।
পরদিন সেই কথাই আলোচনা হলো।
ননীলালকে জিজ্ঞেস করলাম—বউ দেখলি রমাপতির?
ননীলাল যেন কেমন গম্ভীর-গম্ভীর। বললে—বউটার কপালে দুঃখু আছে ভাই-বেচারি ওর হাতে পড়ে মারা যাবে দেখিস—
জিজ্ঞেস করলাম রমাপতিকে দেখলি কাল?
কেউ দেখতে পায় নি। সমস্ত লোকজন আত্মীয়-স্বজনের দৃষ্টি থেকে সরে গিয়ে কোথায় যে লুকিয়ে রইল রমাপতি, সেই-ই এক সমস্যা। বিশ্বনাথ বললে সে-ও দেখে নি।
কিন্তু কনক বললে—আমি দেখেছি।
—কোথায়?
—দেখলাম, মিষ্টির ভাঁড়ারে গেঞ্জি গায়ে ওর পিসির কাছে তক্তপোশের ওপর বসে রয়েছে— জানলার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম, আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলে—
কানাই নাপিতকে চেপে ধরলাম। সে বরের সঙ্গে গিয়েছিল।
সে তো হেসে বাঁচে না। বলে—ছোটবাবুর কাণ্ড দেখে সবাই অবাক সেখানে—
—সে কী রে—
—আজ্ঞে, সবাই বলে বর বোবা নাকি? কনের বাড়ির ছেলেমেয়েরা খুব নাকাল করেছেন। ছোটবাবুকে সারা রাত, মাঝরাতে বাসরঘর থেকে বেরিয়ে এসে ছোটবাবু আমার কাছে হাজির! আমি ছাতের এক কোণে ঘুমুচ্ছিলাম, ছোটবাবু চৌপর রাত সেই ছাতে বসে কাটাবে আমার কাছে—কিন্তু মেয়েছেলেরা শুনবেন কেন? তাঁরা আমোদ-আহ্বাদ করতে এয়েছেন…
কিন্তু পরদিন প্রমীলার কাছে যা শুনলাম তাতে আমার বাকরোধ হয়ে এল। প্রমীলা ভোরবেলা উঠেই ওদের বাড়ি গিয়েছিল আর ফিরে এল বেলা দশটার সময়
বললাম—এত দেরি হলো? দেখা হয়েছে?
প্রমীলা বললে—গেছি বউ দেখতে আর না দেখে ফিরে আসবো? গিয়ে বললাম—মাসিমা, তোমার বউ দেখতে এলাম কাল শরীর খারাপ ছিল আসতে পারি নি–
মাসিমা বললে—ছেলে-বউ তো এখনও ঘুমুচ্ছে—তা বোস মা একটু–
তা দরজা খুললো বেলা ন’টার সময় তোমার বন্ধু তো আমাকে দেখেই পালিয়ে গেল কোথায়। বেবি কিন্তু ঠিক চিনতে পেরেছে। আমাকে দেখেই বললে—মিলি, তুই–
তার পরে শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালো আমায় দেখলাম সমস্ত বিছানাটা একেবারে ওলোট-পালোটা নতুন খাট-বিছানা নয়নসুখের চাদর, বালিশের ওয়াড়া পাশাপাশি দুটো বালিশ একেবারে সিঁদুরে মাখামাখি বেবির মুখে-গালেও সিঁদুরের দাগ। …বিছানায় শুকনো ফুল ছড়ানো–
আমি হাসছিলাম দেখে বেবি জিজ্ঞেস করলে—হাসছিস যে?
বললাম—সারা রাত ঘুমোস নি মনে হচ্ছে—
বেবি বললে—ঘুমোতে দিলে তো বলে মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো।
আমিও স্তম্ভিত। বললাম—বললে ওই কথা?
—তার পর শোনোই তো—
প্রমীলা আবার বলতে লাগলো—তার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম—তোর বর কেমন হলো? তা শুনে কী উত্তর দিলে জানো?
বললাম—কী?
প্রমীলা বললে—প্রথমে বেবি কিছু বললে না, মুখ টিপে হাসতে লাগলো, তার পর আমার কানের কাছে মুখে এনে হাসতে হাসতে বললে বড় নির্লজ্জ, ভাই…