কুসুমও আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে বললে—আমায় খুঁজছেন আপনারা? কোত্থেকে আসছেন?
—মাখনের কাছ থেকে।
—কোন মাখন?
—নন্দরাম সেনের গলির মাখন বাড়িউলি।
—ও! তা আমায় খুঁজছেন কেন?
–চলো ওদিকে। কথা আছে।
—চলুন খাবারঘরে বসবেন।
খাবারঘরে গিয়ে বললাম—কুসুম, আমায় চিনতে পারো?
—না বাবু।
—নন্দরাম সেনের গলিতে আমাদের বাসা ছিল। আমি তখন আট বছরের ছেলে। আমার বাবা-মা ছিলেন ঈশ্বর নাপিতদের বাড়ির ভাড়াটে। মনে হয়?
কুসুম হেসে বললে—মনে হয় বাবু। তুমি সেই পাগলাঠাকুর? কত বড়ো হয়ে গিয়েছ। বাবা-মা আছেন?
—কেউ নেই!
—ছেলেপুলে ক-টি?
—চার-পাঁচটি।
—বোসো বোসো, বাবা।
আরও অনেক কথাবার্তার পরে কুসুম আমাদের বসিয়ে বাইরে কোথায় চলে গেল। খানিক পরে চট করে কোথা থেকে একটা শালপাতার ঠোঙায় খাবার এনে দু-খানা থালাতে আমাদের দুজনকে খেতে দিলে।
আমারও মনে ছিল না। খেতে গিয়ে মনে হল। বড়ো বড়ো হিঙের কচুরি চারখানা। তখুনি মনে পড়ে গেল কুসুমের সেই বাবুর কথা, সেই হিঙের কচুরির কথা। মনে এল ত্রিশ বছর পরে আবার সেই লোভী ছেলেটির ছবি ও তার কচুরিপ্রীতি। কুসুমের নিশ্চয় মনে ছিল। কিংবা ছিল না—তা জানিনে। কচুরি খেতে খেতে আমার মন সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসরের ধূসর ব্যবধানের ওপারে আমাকে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে একেবারে নন্দরাম সেনের গলির সেই অধুনালুপ্ত গুড়ের অড়াতটা ও রাস্তার কলটার সামনে, যেখানে কুসুম আজও পঁচিশ বছরের যুবতী, যেখানে তার বাবু আজও সন্ধেবেলায় ঠোঙা হাতে হিঙের কচুরি নিয়ে আসে নিয়মমতো।