আবার সেই ভয়াবহ শহর। বাইরে থেকে এ শহরে ঢুকলেই একটা গুমগুম চাপা গর্জন শোনা যায়, যেন অন্ধকার হিমেল রাতে হাইওয়ে দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন ট্রাক চলেছে। শহর ভরতি নীল ইন্ডিকা, শহর ভরতি লিজ, লম্বা অনাবৃত পা, সোনালি হাই-লাইট চুল, মডেল চেহারার স্মার্ট মেয়ে লিজ, যে রিসেপশনিস্টের কাজও করে আবার প্রয়োজন হলে ক্ষুধিত পুরুষকে শান্তও করে, ইচ্ছা হলে, পছন্দ হলে, অপাপ পুরুষকেও বহু বাসনায় প্রাণপণে চায়। চতুর্দিকে লিজের প্রেত। পথ-চলতি কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারে না সত্যেন। কেননা লিজ টুকরো টুকরো হয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে গেছে। ভালোবাসা নয়, আকাঙক্ষা নয়, এক প্রবল, দুর্দম ভয়
শুনেছ চ্যাটার্জি, লিজ গ্লো নামে মুখার্জি ইন্টারন্যাশনালের সেই রিসেপশনিস্ট মেয়েটা। তুমি তো ভালোই চিনতে! শি ইজ মিসিং ফর দা লাস্ট ওয়ান মানথ। খেলুড়ে মেয়ে ছিল যাই বল—দ্যাখো কোথায় ফেঁসেছে…কী হল?
সত্যেন চ্যাটার্জি অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার এফ. আর. ইন্ডাস্ট্রিজ টেবিলের ওপর তার পি. সি-র কি-বোর্ডে ঢলে পড়েছে।
প্রেশার দ্রুত ফল করছে। এঁকে নার্সিংহোমে শিফট করতে হবে।
তাই কিছুদিন ধরেই ওকে কেমন কেমন লাগছিল। তাই বলো!
লিজের ছবিটা কাগজে ফ্ল্যাশ করছে, কাগজে, টি. ভিতে। যদি কেউ হোয়্যার অ্যাবাউটস বলতে পারো। হ্যাঁ…না…..ও তো থাকত হস্টেলে…ঠিক হস্টেল নয়…পি, জি বলতে পার। দেয়ার ওয়্যার সেভার্যাল। অফিস থেকে তো তলব গেছেই, ফেলো পি. জিরাও নোটিশ করেছে।…ওরকম নাকি ও প্রায়ই যেত। মোস্ট প্ৰব্যাবলি নষ্ট টাইপের। গোড়ায় পার্ক সার্কাস এরিয়ায়…মা মারা যাবার পর থেকে রিপন স্ট্রিটে ওই গেস্ট হাউজ…এনি ওয়ে শি ইজ নাও দ্য টক অব দা টাউন। আজকাল মেয়েদের যখনতখন তুলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে…যা হচ্ছে দিনদিন দেশটা…হোপলেস।
চোখের সামনে বিন্দু বিন্দু হলুদ। অণুপরিমাণ, কিন্তু সব মিলিয়ে পরিব্যাপ্ত। মাইলের পর মাইল ছাওয়া। সেখানে আস্তে আস্তে নেমে আসতে থাকে, ধোঁয়া, কালো, কালির অন্ধকার।
একটু মাপা খাওয়া-দাওয়া বুঝলেন! ওষুধ তো যা দেযার দিলামই। হালকা করে চিকেন, মাটনও কচি দেখে, রোজ নিয়ম করে আড়াইশো গ্রামের মতো খাওয়াবেন। না, হার্টে কিছু নেই। বোধহয় খুব টেনশনে ছিলেন। এসব জবের এই-ই রীতি।
মাংস কিন্তু একদম খেতে চাইছে না, মাছও…হঠাৎ ভীষণ অরুচি…
এমনিতে খেতেন?
ওরে বাবা, যথেষ্ট না হলে খাওয়াই হত না…অথচ হঠাৎ…
কী জানি তার থেকেই হয়তো প্রেশারটা…..
ডক্টর, সম্প্রতি ওঁর আধ্যাত্মিক দিকে খুব ঝোঁক হয়েছে। বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা মার ছবি এনে শোবার ঘরে টাঙিয়েছেন। মঠে যাচ্ছেন সময় করে!
ইনটরেস্টিং! তারপর থেকেই কি এই মাছ মাংসে অরুচি?
মোর অর লেস!
ডাক্তার হেসে বললেন, শ্রীরামকৃষ্ণ অর্ডারের শিষ্যসামন্ত মহারাজরা কিন্তু মাছটাছ যথেষ্ট খেয়ে থাকেন। একেবারে চচোষ্যলেহ্য-পেয়। এটা ওঁর মাথায় ঢোকান। আমিষ খেয়েও ঈশ্বর হয়।
তা কিন্তু না। ইচ্ছে করে যে সংযম করছেন তা নয়। আপনা আপনিই…
ঠিক আছে। আমি একটা পাউডার প্রোটিন লিখে দিচ্ছি। দুধের সঙ্গে সকাল সন্ধে। অন্তত সাত দিন কমপ্লিট রেস্ট। তারপর সেটা একটু বাড়াতেও হতে পারে।
লিজ গ্লো, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্রিশ্চান, দৈর্ঘ্য—৫ফুট ৭ইঞ্চি, ফরসা রং, সোনালি স্ট্রিক দেওয়া চুল, সাত নম্বর রিপন স্ট্রিট, কলকাতা। গত একত্রিশে ডিসেম্বর থেকে নিরুদ্দেশ। কেউ যদি খোঁজ দিতে পারেন যোগাযোগ করুন-ভবানীভবন, আলিপুর।
শুকনো মুখে, রুগণ হাতে কাগজটা নামিয়ে রাখল সত্যেন।
হ্যালো চ্যাটার্জি! আছ কেমন! ছবিটা দেখলে? এ তো আমাদের লিজ গ্লো-ই। আমি শনাক্ত করে ভবানীভবনে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি।
তোমারও দেওয়া উচিত—মণিমালা বলল—একটা অন্তত ফোন করে দাও।
ভবানীভবন! আমি এফ, আর, ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সত্যেন চ্যাটার্জি বলছি।
লিজ গ্লো নামে নিরুদ্দিষ্ট মেয়েটিকে আমি, আমাদের অফিসের অনেকেই চিনত।
ইয়েস। ভালো কি মন্দ কী করে জানব বলুন। মেয়েরা রিসেপশনিস্ট, পি. এ-র কাজ করলে তাদের একটু-আধটু বদনাম হয়েই থাকে।
এটা তুমি একেবারে ঠিক বলছ,–মণিমালার মুখ গনগন করছে, রিসেপশনিস্টরা একা একাই মন্দ হয়, আর যেসব উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এদের ব্যবহার করে তারা সব নিষ্পাপ বালক… ও কী! তুমি অত ঘামছ কেন? একটু গরম দুধ নিয়ে আসছি…দাঁড়াও ঘামটা মুছিয়ে দিই!
চাঞ্চল্যকর খবর। ই, টিভি বাংলা। লিজ গ্লো নামে নিরুদ্দিষ্ট মেয়েটিকে গত একত্রিশে ডিসেম্বর বর্ধমান সরকারি গেস্ট হাউজের ম্যানেজার দেখেছেন। তবে ওই নামে রেজিষ্টারে নেই। জনৈক সন্তোষ গিদওয়ানি রুমটি নেন। শান্তিনিকেতনের রুদ্রপলাশ হলিডে রিসর্টের মালিকও মেয়েটিকে চিনেছেন। তিনি নিশ্চিত নন, তবে মেয়েটি সম্ভবত মেরিয়ান সিম্পসন নামে রেজিস্ট্রি করায়।
খবর শুনতে শুনতে মণিমালার হাতের কলম থেমে গেল। কী অদ্ভুত কাকতালীয়…ওই দুটো দিন তো সত্যেনও ওইখানে ছিল। দু জায়গাতেই কোনো পার্টির সঙ্গে ওর কথাবার্তা ছিল।
খবর সাধারণত এড়ায় সত্যেন। কিন্তু মণিমালার যে কী খবরতৃষ্ণা!
চ্যানেল সার্ফ করে করে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সব চ্যানেলের খবর দেখবে।
দ্যাখো দ্যাখো, বুশকে কী রকম ঘোড়েল শয়তানের মতো দেখাচ্ছে…