বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

কৃষ্ণা কাবেরী – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

নরেনের বাড়িতে অনেক রাত্রেই তো অমনি করে অভিনয় করে গিয়েছি এসে বাড়ির পশ্চাতের গলিপথের দরজাটা দিয়ে ঢুকে। তাই বাইরে থেকেই সেটায় ইদানীং তালা লাগানো থাকতো। চাবি আমার কাছেই থাকতো। চাবি দিয়ে তালা খুলে বাগানে প্রবেশ করলাম। ঘোরানো সিঁড়িপথে নরেনের শয়নকক্ষ-সংলগ্ন বাথরুমের মধ্যে গিয়ে ঢুকলাম। বাথরুমের দরজাটাও ভোলাই ছিল কিন্তু নরেনের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে দেখি ঘর অন্ধকার দেওয়ালের গায়েই সুইচ, হাত বাড়িয়ে আলোটা জ্বাললেই–

হ্যাঁ, মুহূর্তে যেন মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠলো-মনে হলো যেন কৃষ্ণাই ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে, দ্বিধামাত্র না করে কোমর থেকে ছোরাটা টেনে ছুটে গিয়ে কৃষ্ণা ভেবে দর্পণের ওপরেই হাতের ছোরাটা দিয়ে আঘাত হানলাম। ঝনঝন করে দর্পণের কঁচটা ভেঙে যেতেই সেই শব্দে আমার জ্ঞান যেন ফিরে এলো এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই সামনের দিকে নজর পড়তে আতঙ্কে দুপা পিছিয়ে গেলাম! নরেনের মৃতদেহটা মেঝের কার্পেটের ওপরে পড়ে আছে। আর তার বুকে বিঁধে আছে সমূলে একখানা ছোরা। ভয়ে আতঙ্কে বিহ্বল হয়ে কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ এমন সময় ফিরে চেয়ে দেখি পিছনের বাথরুমের দরজার ওপরে দাঁড়িয়ে বাবা আর তারই পিছনে কৃষ্ণা!

আমি—আমি এবারে বলবো ইন্সপেক্টার, আমায় বলতে দিন—আচা কাবেরীর উক্তিতে বাধা পড়ায় এবং অন্য একটি কণ্ঠস্বরে একসঙ্গে ফিরে তাকাল কণ্ঠস্বর লক্ষ্য করে।

ঠিক দুই ঘরের মধ্যবর্তী দরজার উপরে ইতিমধ্যে কখন যে একসময় নিঃশব্দে সকলের অলক্ষ্যে ক্রাচে ভর দিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী কেউ তা লক্ষ্য করে নি। কিন্তু সঞ্জীব চৌধুরীকে কথা বলতে শুনে সেই দিকে ফিরে তাকিয়ে কাবেরী যেন পাষাণে পরিণত হয়ে গেল।

আর ঠিক সেই মুহূর্তে কৃষ্ণাও চিৎকার করে উঠলো, বাবা! বাবা! না না—তুমি না—তুমি না!

ছুটে এসে কৃষ্ণা সঞ্জীবকে যেন দুহাতে আগলে ধরতে চেষ্টা করে।

সঞ্জীব বাধা দিয়ে মেয়েকে সরিয়ে দেন, বলতে দে মা আমায় বলতে দে! পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমায় করতে দে!

বাবা! বাবা! কৃষ্ণা আবার পিতাকে বাধা দেবার চেষ্টা করে।

আঃ সরে যা! শুনুন ইনসপেক্টর-নরেন মল্লিককে আমিই খুন করেছি কাবেরী খুন করে নিখুন করেছি আমি, আমার মেয়েকে সে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে আমি সহ্য করতে পারি নি। আমার স্ত্রী করুণার ব্যবহারে আমি মেয়েজাতটার ওপরেই অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম। তাই নিজের ঔরসজাত মেয়েদেরও আমি বিশ্বাস করি নি কারো সঙ্গে মিশতে দিই নি। সর্বদা চোখে চোখে রেখেছি। কিন্তু যেদিন জানতে পারলাম কাবেরী তার মায়ের রক্তের ঝণই শোধ করতে চলেছে, আমাকে প্রতারণা করে নরেনের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছে, কাবেরীর ওপর নজর রাখলাম। ওর ঘর থেকেই চিঠি চুরি করে সব জানতে পারলাম। তারপর যখন জানতে পারলাম—শুধু আলাপই নয়, কাবেরী অনেক রাত্রে নরেনের গৃহে যায়—রাগে তখন আমার মাথায় খুন চেপে যায়। সুযোগ খুঁজতে লাগলাম। এলো সুযোগ-নরেন যে চিঠিতে তার জন্মতিথির দিন রাত্রে কৃষ্ণাকে ওর বাড়িতে যাবার জন্য আমন্ত্রণ করে, সে চিঠিখানা কাবেরী তখন তার ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে স্নানঘরে গিয়েছে, সেই ফাঁকে লুকিয়ে পড়ি, এবং বুঝি ঐ চিঠি হতে, কৃষ্ণা ও কাবেরীর মধ্যে নরেনের ব্যাপারে একটা গোলযোগ আছে। যা হোক, ঠিক করলাম ঐ রাত্রেই দুজনকে একসঙ্গে হত্যা করবো। লোডেড রিভলভারটা নিয়ে—ওরা দুবোন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেই সিঁড়ির নিচে গিয়ে আত্মগোপন করে রইলাম কাবেরীর অপেক্ষায়। ঠিক রাত সাড়ে এগারোটার কিছু পরে সিঁড়িতে পদশব্দ পেলাম, বুঝলাম কাবেরী আসছে। সত্যিই কাবেরী! কাবেরীকে অনুসরণ করলাম নিঃশব্দে। কাবেরী তালাচাবি খুলে নরেনের বাড়ির পশ্চাতের দ্বারপথে প্রবেশ করল–গলির মধ্যে অন্ধকারে কিছুদূরে আত্মগোপন করে রইলাম।

রহমান এমন সময় প্রতিবাদ জানিয়ে ওঠেন, তা হলে মিঃ চৌধুরী, আপনি যদি কাবেরী দেবীকে ফলো করে থাকেন, তবে কেমন করে–

হাঁ হাঁ, আমি—আমিই খুন করেছি! মিঃ চৌধুরী চিৎকার করে ওঠেন।

না, আপনি খুন করেন নি। নিজের মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে আপনি মিথ্যা কথা বলছেন—খুন করেছেন তাকে আপনার বড় মেয়ে কৃষ্ণা!

এতক্ষণ কিরীটী নীরবে সঞ্জীব চৌধুরীর কথা শুনতে শুনতে ভূ কুঞ্চিত করে কি যেন ভাবছিল, হঠাৎ সে বলে ওঠে কৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে, Now কৃষ্ণা দেবী, বলুন আপনি কি জানেন!

সকলের দৃষ্টি কিরীটীর কণ্ঠস্বরে যুগপৎ গিয়ে অদূরে দণ্ডায়মান কৃষ্ণার উপরে পড়লো। সকলের চোখে অদ্ভুত এক দৃষ্টি। একসঙ্গে পাঁচজোড়া চোখের অনুসন্ধানী, সন্দিগ্ধ দৃষ্টি যেন কৃষ্ণাকে গ্রাস করছে। কিরীটীর অদ্ভুত ঋজু কঠিন কণ্ঠস্বর এবারে যেন সকলকেই সচকিত করে তোলে। সে বললে, বলুন কৃষ্ণা দেবী আপনার যা বক্তক বলুন!

আবার প্রতিবাদে চিৎকার করে উঠলেন সঞ্জীব চৌধুরী, আমি তো বলছি, ও কিছু জানে না মিঃ রায়! কেন—কেন মিথ্যে মিথ্যে ওকে আপনারা পীড়ন করবেন?

এবারে কিরীটী সঞ্জীব চৌধুরীর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললে, মিঃ চৌধুরী, আপনি যদি এভাবে আমাদের কাজে বাধা দেন তো বাধ্য হবো আপনাকে পুলিসের হেফাজতে পাশের ঘরে পাঠিয়ে দিতে!

Page 46 of 53
Prev1...454647...53Next
Previous Post

কিরীটীর আবির্ভাব – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

Next Post

চক্রী – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

Next Post

চক্রী - নীহাররঞ্জন গুপ্ত

চারের অঙ্ক - নীহাররঞ্জন গুপ্ত

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In