আশ্চর্য! How could you guess?
Simple rule of three! বর্তমানে যে কেস নিয়ে আমরা ব্যস্ত তার মধ্যেই তো একটা অপ্রাপ্ত সূত্র ঐ বর্মা-সংবাদ। এবং এত রাত্রে হন্তদন্ত হয়ে যখন এসেছো, বুঝতে কষ্ট হওয়া তো উচিত নয়—কি হতে পারে তোমার অত্যাশ্চর্য সংবাদ। Now—now tell me, নরেন মল্লিকের অতীত বর্মা-বাস সম্পর্কে কি এমন সংবাদ গ্রহণ করলে!
তুমি জান, আমাদের হেড কোয়ার্টার থেকে বর্মার স্পেশাল পুলিশে নরেন মল্লিকের details চেয়ে পাঠানো হয়েছিল তোমারই পরামর্শমত!
হ্যাঁ, তা তো জানি।
এই কিছুক্ষণ আগে এখানকার হেড কোয়ার্টারে সিগন্যাল মেসেজ এসেছে। নরেন মল্লিকের যৌথ কারবার ছিল বার্মা-টিকের ইসমাইল খাঁ নামে এক পাঠানের সঙ্গে। ইসমাইলের বাপ ছিল পাঠান ও মা বর্মী এবং ব্যবসাসূত্রেই নরেনের ইসমাইল-গৃহে যাতায়াত ও ঘনিষ্ঠতা খুবই ছিল।
অর্থাৎ মল্লিক মশাই ইসমাইল খাঁর ঘরে ঘন ঘন যাতায়াত শুরু করে! বল, তারপর?
ইসমাইল খাঁর এক পরমা সুন্দরী শিক্ষিতা কন্যা পীরবানু নরেনের সঙ্গে বিশেষ একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
কলির ডন যুয়ান একেবারে, তারপর?
কিন্তু ইমসাইল খাঁ কন্যার পরদেশীর সঙ্গে অত ঘনিষ্ঠতাটা ঠিক বরদাস্ত করে উঠতে পারে নি।
ফলে পিতা ও কন্যার মধ্যে মতান্তর!
Exactly—
হতেই হবে, শিক্ষিতা কন্যা যখন! Yes, go on—তারপর?
এমন সময় সহসা এক রাত্রে নরেন পীরবানুকে নিয়ে—
পলায়মান! চমৎকার! তারপর?
ইসমাইল খাঁ ক্ষেপে গেল সংবাদ পেয়ে এবং ছুটলো ওদের পিছু পিছু। শেষ পর্যন্ত ধরে ফেললে বর্মা সীমান্তে। বাপ-মেয়েতে কথা-কাটাকাটি হলো এবং শেষ পর্যন্ত বাপ মেয়েকে জোর করে নিয়ে গেল নরেন সোজা ফিরে এল কলকাতায়।
উঁহু, শুধু ঐ নয়—আরো story আছে!
আছে, তবে সেটা সঠিক জানা যায় নি, কেবল জানা গেছে ইসমাইলের রত্ন-ভাণ্ডারে—
তালুকদার এই পর্যন্ত বলেছে, সহসা কিরীটী লাফিয়ে ওঠে, Hurry up—চল, এখুনি চল–
বিস্মিত তালুকদার শুধায়, কোথায়?
কিরীটী বলে, আমীর আলি অ্যাভিনুতে কৃষ্ণা কাবেরীর ফ্ল্যাটে —quick!
***
ঘণ্টা দুই পরে।
কৃষ্ণাদের ফ্ল্যাট বাড়ির বাইরের ঘর। সোফার উপরে বসে দুহাতের মধ্যে মুখ গুঁজে ফুলে ফুলে কাঁদছে কাবেরী। দরজাটা হা-হা করছে খোলা। নিঃশব্দে কিরীটী এসে কক্ষে প্রবেশ করে-কাবেরী দেবী!
চমকে মুখ তুলে তাকায় কাবেরী—কে?
পুলিশ এসেছে, আপনাকে নরেন মল্লিকের হত্যাপরাধে গ্রেপ্তার করতে। কিরীটী বলে।
পুলিশ! আর্ত চিৎকার একটা বের হয়ে আসে কাবেরীর কণ্ঠ হতে।
হ্যাঁ, ঐ দেখুন।
সত্যিই দরজার গোড়ায় দুজন লাল পাগড়ী নিঃশব্দে দণ্ডায়মান।
ত্রস্ত ব্যাকুল হয়ে উঠে দাঁড়ায় কাবেরী, কিন্তু আমি—আমি তো হত্যা করি নি নরেনকে! আমি
বৃথা লুকোবার আর চেষ্টা করে কোন ফল হবে না কাবেরী দেবী। আপনি—আপনি নরেন মল্লিককে হত্যা করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে কৃষ্ণা দেবী পুলিসের কাছে statement দিয়ে গিয়েছেন—
কিরীটীর কথা শেষ হলো না, কাবেরী পাগলের মতই যেন চিৎকার করে উঠল, মিথ্যা—মিথ্যা! কৃষ্ণা-কৃষ্ণা মিথ্যা কথা বলেছে।
না। সে মিথ্যা কথা বলে নি। কঠিন কণ্ঠে কিরীটী প্রতিবাদ জানায়।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, হাঁ—সে মিথ্যা বলেছে, বলতে বলতে সহসা উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ায় কাবেরী এবং উঠে দাঁড়াতেই তার পূর্ণ প্রতিকৃতি সম্মুখে দেওয়ালের গায়ে প্রলম্বিত দর্পণে প্রতিফলিত হলো। সেই প্রতিবিম্বিত নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়েই অকস্মাৎ যেন ক্ষেপে ওঠে কাবেরী এবং মুহূর্তে নিজের কোমর থেকে তীক্ষ্ণ ধারালো একখানা ছোরা বের করে, কতকটা উন্মাদিনীর মতই যেন ছুটে গিয়ে দর্পণের কাচের উপরে ছোরা দিয়ে সজোরে আঘাত করে চিৎকার করে ওঠে, কৃষ্ণা—
ঝন্ ঝন্ করে ছোড়ার আঘাতে দর্পণের কঁচটা ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। তাতেও যেন কাবেরীর রোষ প্রশমিত হয় না, আবার আঘাত হানবার জন্যে হাত তুলতেই চোখের পলকে কিরীটী এগিয়ে এসে সজোরে কাবেরীর উত্তোলিত হাতটা চেপে ধরে কঠিন কঠোর কণ্ঠে বলে ওঠে, আবার—আবার আপনি কাবেরী দেবী সেরাত্রের মতই ভুল করেছেন! She is not কৃষ্ণা—but reflection-your own reflection on the mirror! কৃষ্ণা নয়, দর্পণে আপনারই ছায়া ওটা। ভাল করে চেয়ে দেখুন—আপনারই ছায়া, আপনি কৃষ্ণা নয়!
আর্ত চিৎকার করে ওঠে কাবেরী, ছায়া! কৃষ্ণা নয়—ছায়া!
হ্যাঁ, ছায়া—আপনারই ছায়া। যমজ বোনের একজন—আপনারই ছায়া, কাবেরী দেবী।
কৃষ্ণা নয়? ছায়া-ছায়া!
হ্যাঁ, ছায়া। এখন বসুন—স্থির হয়ে বসুন।
মুহ্যমান কাবেরীকে একপ্রকার যেন জোর করেই কিরীটী সোফার উপরে বসিয়ে দেয়। —এখন বোধ হয় বুঝতে পেরেছেন, হিংসায় অন্ধ হয়ে রাগে উত্তেজনায় সে-রাত্রে নরেন মল্লিকের শয়নঘরের আয়নাটার উপরে আঘাত হেনে আপনি সেটা ভেঙে দিয়েছিলেন— নিজের ছায়াই আয়নাতে দেখে কৃষ্ণা ভেবে কৃষ্ণাকে ছোরা দিয়ে খুন করতে গিয়ে!
দুহাতের মধ্যে মুখ গুঁজে কাবেরী বলে ওঠে, সত্যিই বলছেন কৃষ্ণাকে আমি দেখি নি–কৃষ্ণাকে আমি দেখি নি–
না, দেখেন নি। That was your own reflection! নরেন মল্লিকের ঘরের আয়নার ভাঙা কাচই সে কথা সেদিন আমায় বলেছিল। এবং তাই প্রথমে আমার সব কেমন গোলমাল ঠেকেছিল, ছোরাটা মৃতের বক্ষে বিদ্ধ রইলো, কোন গুলি ছোঁড়ার শব্দ শোনা গেল না, অথচ আয়নার কাচটা ছিল ভাঙা!