এ কি, বসে আছো কেন? শুরু করলেই পারতে। সুকুমার কৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে।
এসো, আজ কি তোমার চেম্বার বন্ধ?
আজ যে রবিবার।
সত্যিই তো, মনে ছিল না।
চা-পান চলতে থাকে। হঠাৎ কৃষ্ণা প্রশ্ন করে, আচ্ছা অফিসে আমাকে ফোন করবে বলেছিলে কেন?
আজ তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো।
কোথায়?
মিলনী সঙ্ঘে!
মিলনী সঞ্জ?
হ্যাঁ, দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত মহলের নর-নারীদের একটা ক্লাব বা মিলন কেন্দ্র। আজ সেখানে একটা বিশেষ অনুষ্ঠান আছে—বিখ্যাত আধুনিক গাইয়ে শ্রীমন্ত মুখার্জি সন্ধ্যায় গান গাইবেন। শুনেছো শ্ৰীমন্ত মুখার্জীর গান?
না।
সত্যিই শোনবার মত। যেমন মিষ্টি তেমনি সুরেলা কণ্ঠ।
কিন্তু–
ভয় নেই, রাত দশটার আগেই তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবো।…আর দেরি করলে হয়ত ওদিকে গানের পালা শেষ হয়ে যাবে, চল ওঠো।
কৃষ্ণা উঠে দাঁড়ায়। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ কৃষ্ণা প্রশ্ন করে, আচ্ছা কিরীটী রায়কে তুমি চেনো সুকুমার?
চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় সুকুমার, কিরীটী রায়!
হ্যাঁ, চেনো নাকি তাই বল না?
চিনি। কিন্তু কেন বল তো? তুমিও তাকে চেনো নাকি?
হ্যাঁ, গতকাল পরিচয় হলো।
ও। তারপর হঠাৎ কি ভেবে প্রশ্ন করে, কেমন লাগল ভদ্রলোকটিকে?
আজ নয়, এ প্রশ্নের জবাব তোমাকে অন্য একসময় দেবো।
.
কিরীটীর বাড়ি। তালুকদার ও রহমানের সঙ্গে কিরীটী কথা বলছিল।
বেশ, রহমান জবাব দেয়, তাহলে আমি উঠি।
হ্যাঁ, আসুন।
রহমান চলে যেতে উদ্যত হতেই কিরীটী সহসা রহমানকে বাধা দিয়ে বলে ওঠে, হাঁ ভাল কথা রহমান সাহেব, গতরাত্রি থেকেই নরেন মল্লিকের মার্ডার সম্পর্কে একটা কথা ভাবছিলাম আপনাকে জিজ্ঞাসা করবো, তা—
কি বলুন তো?
আচ্ছা নরেন মল্লিকের বাড়িটা ভাল করে সার্ভে করা হয়েছিল নিশ্চয়?
হ্যাঁ, কেন বলুন তো?
আচ্ছা, মল্লিকের বাড়িতে মেইন গেট ছাড়া আর কোন প্রবেশ পথ আছে কিনা জানেন?
হ্যাঁ, বাড়িটার পিছন দিকে ছোট একটা বাগান আছে, বাগানের প্রাচীরের ওপাশে সরু একটা blind lane আছে, সেই blind lane দিয়েই একটা দরজা আছে বাড়িতে প্রবেশ করবার দেখেছি।
আছে? যাক বাঁচা গেল। শেষ পর্যন্ত এসে ঐ puzzleটাই আমাকে বিব্রত করে তুলেছিল গত দুদিন ধরে, যদিচ ঐরকম একটা কিছুর সম্ভাবনা সম্পর্কে না জানা থাকলেও কতকটা sureই ছিলাম—It was so important—কিরীটীর কণ্ঠস্বরে উল্লাস যেন উপচে পড়ে।
আমি আপনাকে ঠিক follow করতে পারলাম না তো! মিঃ রহমান বলে ওঠেন।
বলেন কি রহমান সাহেব! খুনোখুনির ব্যাপারে একটা দরজা থাকার importance কি কম?
কিন্তু দরজাটায় তো সর্বদা তালা লাগানো থাকত—সেদিনও তালা লাগানোই ছিল, যতদূর মনে আছে আমার।
কোন্ দিক থেকে তালা লাগানো থাকতো, ভিতরের দিক থেকে না বাইরের দিক থেকে?
বাইরের দিক থেকেই—অবশ্য তালাটা কখনো সেইজন্য ভোলাই হতো না।
ঠিক উল্টো। সেই কারণেই প্রায়ই তালা খোলা হতো এবং ঐ দ্বারপথেই নরেন মল্লিকের শয়নকক্ষে ঘোরানো সিঁড়ি অতিক্রম করে, পরে সেরাত্রে বাথরুমের দরজা দিয়ে খুনী প্রবেশ করেছিল।
কি বলছেন? আমরা তো পরের দিন সকালে গিয়ে বাথরুমের সে দরজাটা বন্ধ দেখেছিলাম! খুনী যদি ঐ রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে থাকবে তবে–
তবে সে কোন্ পথে পলায়মান হলো, এই তো আপনার প্রশ্ন?
হ্যাঁ, মানে—
পালিয়েছে সে সদর দ্বার দিয়ে।
অ্যাঁ! তালুকদার এবার বলে ওঠে।
হ্যাঁ, easiest and shortest route! খুনীর গৃহে প্রবেশ, হত্যা ও পলায়ন পর্যন্ত solved! বাকী এখন আয়নাটার ভাঙা কাচ and why at all that particular knife was used and not a bullet! এটার জবাব অবশ্য আশা করি কৃষ্ণা ও কাবেরীর কাছ থেকেই পাবো।
একটু পরে কিরীটী আবার রহমানকে লক্ষ্য করে বলে, আচ্ছা রহমান সাহেব আপনি তাহলে আসুন।
রহমানের প্রস্থানের পর কিরীটী তালুকদারকে বললে, চলো একবার মিলনী সঙ্ঘের আশপাশ চক্কর দিয়ে আসা যাক্।
সেখানে আবার কেন?
চলই না।
.
মিলনী সঙ্ঘ। দক্ষিণ কলকাতার অতি আধুনিক ও আধুনিকাদের মিলন কেন্দ্র ঐ সঙ্। সুকুমারের গাড়ি যখন মিলনী সঞ্জের বাড়ির পোর্টিকোর নিচে এসে দাঁড়াল রাত্রি তখন সোয়া সাতটার বেশী নয়। সামনেই আলোকোজ্জ্বল হলঘরটি বহু নর-নারীর কণ্ঠস্বরে গুঞ্জনমুখরিত তখন। হাসির হল্লা উঠছে।
গাড়িটা একপাশে পার্ক করে সুকুমার কৃষ্ণাকে নিয়ে হলঘরে প্রবেশ করতেই যুগপৎ সকলেরই মুগ্ধ ও বিস্মিত দৃষ্টি প্রথমে কৃষ্ণাকে পরিক্রম করে পরে সুকুমারের ওপরে নিবদ্ধ হলো। সকলেই সুকুমারের পরিচিত। অথচ কৃষ্ণাকে ইতিপূর্বে কেউ দেখে নি এবং চেনেও না। দুচারজন তরুণ সাদর আহ্বান জানায়, সুস্বাগত—সুস্বাগতম্ ডাঃ গুপ্ত!
একটি হালফ্যাসনদুরস্ত, এনামেলিং করা শ্যামবর্ণা তরুণী এগিয়ে এসে আধো আধো ন্যাকামিভরা কণ্ঠে বলে ওঠে, হ্যালো সুকুমার, naughty boy, where been so long!
ব্রিফলেস ব্যারিস্টার মিঃ নির্মল মিটার দুর্দান্ত সাহেব, ওষ্ঠাধরে ধৃত সরু পাইপে সিগারেট। একটু কাছ ঘেঁষে এসে মৃদু চাপা কণ্ঠে বলে, who is this dream, my dear Gupta?
আঃ, কি হচ্ছে মিত্র! চাপা তর্জন করে ওঠে সুকুমার।
সুকুমার এরপর কৃষ্ণাকে সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, আমার বান্ধবী কৃষ্ণা চৌধুরী।
হঠাৎ একসময় সেই এনামেলিং করা তরুণীটি সুকুমারের সামনে এগিয়ে এসে চাপা কণ্ঠে বলে, আমাদের লতা সেনকে তা হলে