নম্বর বলা শেষ হবার আগেই মিস ঘোষ জবাব দেয়, Engaged! বলেই কনেকশনটা কেটে দেয়।
আর একজনও নম্বর চাওয়ায় বলে দিল, West line engaged!
আর একজনকে বললে, No reply!
আলাপ-আলোচনায় সব মশগুল।
যাকে No reply জবাব দেওয়া হয়েছিল, সে আবার কল্ করলে, শুনছেন? Clerk-inchargeকে কনেকশন দিন তো?
সবিতা জিজ্ঞাসা করে, কি বলছে রে মলি?
মলি হাসতে হাসতে জবাব দেয়, ক্লার্ক ইশ্চার্জকে কানেকশনটা দিতে বলছে।
চুপ করে থাক। সাড়া দিস না। কতক্ষণ ট্যাপ করবে করুক না।
এবার সুধীরা নাগের আলোটা জ্বলে উঠলো।
Number please!
দেখুন আপনাদের অপারেটর মিস চৌধুরী আছেন?
কি নাম বললেন? কৃষ্ণা চৌধুরী? সুধীরা কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
হ্যাঁ, কৃষ্ণা চৌধুরী। বলুন থিয়েটার রোড থেকে ডাঃ সুকুমার গুপ্ত কথা বলতে চাইছেন, অনুগ্রহ করে একটু ডেকে দিন না—
কথাটা কাবেরীর কানে গিয়েছিল, মিস নাগ জবাব দেওয়ার আগেই সে কানেকশনটা নিয়ে প্রশ্ন করলে, হ্যালো কে? ডাক্তার গুপ্ত?
হাঁ। মানে—আপনি, মানে
হ্যাঁ, কৃষ্ণা কথা বলছি, ব্যাপার কি?
কৃষ্ণা, আজ তোমার off কখন?
কেন বল তো?
বল না আগে, তারপর বলছি—
রাত দশটায়।
আজ ডিউটির পর আসবে এখানে?
যেতে পারি, কিন্তু আগে বল তো কেন?
বলতেই হবে!
নিশ্চয়ই।
আজ ভাবছি দুজনে গিয়ে কাফে-ডি-মুনে ডিনার খাবো, ইনডিয়ান ডিশ।
তারপর?
তারপর a long pleasure drive—
Oh how lovely! কোথায়—কতদূর?
So long as the petrol tank is not empty! রাত দশটায় ঠিক হাজির থাকবো। গেটের সামনে—with my car–
O. K.!
.
ডাঃ সুকুমার গুপ্তের চেম্বার।
ডাঃ সুকুমার একটা সোফার উপরে আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে কৃষ্ণাকে ফোন করছিল, ফোন শেষ হতেই ফোনটা যেমন নামিয়ে রাখতে যাবে, সুইং ডোর ঠেলে কৃষ্ণা এসে প্রবেশ করল কক্ষে। পদশব্দে মুখ তুলে দরজার দিকে তাকাতেই সুকুমার চমকে ওঠে, কতকটা আত্মগতভাবেই যেন উচ্চারণ করে, এ কি! তু-তুমি?
খুব আশ্চর্য হয়েছে তো! Surprise একটা রীতিমত দিয়েছি তো?
পরক্ষণেই ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে কৃষ্ণাও যেন কতকটা বিস্মিত হয়ে বলে, ব্যাপার কি বল তো? এসে কি অন্যায় করলাম নাকি হঠাৎ এ সময়? ফিরে যাবো?
কৃষ্ণা সত্যি সত্যিই চলে যেতে উদ্যত হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।
আরে না না—চলে যাচ্ছো কেন—সুকুমার ততক্ষণে অভাবনীয় পরিস্থিতিটা সামলে উঠেছে, মৃদু হেসে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, চলে যাবে মানে? জান এই মুহূর্তে আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম!
কৃষ্ণা মৃদু হেসে ফেলে, কিন্তু ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তোমার মুখের চেহারা যা হয়েছিল তাতে করে মনে হয়েছিল
কি মনে হয়েছিল বল তো?
কি আবার! মনে হয়েছিল—মনে হয়েছিল আর যাকেই হোক ঠিক ঐ মুহূর্তটিতে আমাকে অন্তত যেন তুমি expect করো নি।
হা ভগবান! দিবানিশি যার ধ্যানে আছি নিমগন, সেও কিনা হেন বাক্য করে উচ্চারণ! কিন্তু দাঁড়িয়ে কেন কৃষ্ণা, বোস! চা আনতে বলি, কৃষ্ণা জবাব দেবার আগেই বেল্ বাজিয়ে জগদেওকে ডাকে সুকুমার।
জগদেও এসে কক্ষে প্রবেশ করে। সুকুমার বলে, জগদেও, জলদি চা!
সোফা হতে উঠে সুকুমার বলে, এক মিনিট—একটু বোস, আমি চট করে dressটা একটু বদলে আসি।
হঠাৎ? ড্রেস চেঞ্জের কি এমন দরকার পড়লো এ সময় শুনি?
হঠাৎ নয় দেবী, পূর্বপরিকল্পিত এবং ইতিমধ্যে তুমি না এসে পৌঁছে গেলে হয়ত তোমাকে ফোন করতাম।
কিন্তু পেতে না, কারণ আজ সন্ধ্যা ঠিক ছটায় আমার duty off তুমি জানতে না—
দ্বিতীয়টা স্বীকার করি, কিন্তু প্রথমটা স্বীকার করতে রাজী নই।
মানে?
মানে যাকে মনেপ্রাণে ডাকা যায়, ফোনে তার সাড়া না পেলেও সশরীরে এসে সে হাজিরা দেয়—ইহাই বেদবাক্য কহে সুধীজন। সুকুমার কথাটা শেষ করে হাসতে থাকে।
তা বইকি! কক্ষনো না। রাস্তায় বের হয়েই হঠাৎ তোমার কথা মনে হলো, তাই চলে এলাম তোমার এখানে সোজা।
আসতেই হবে, জান তো আমি একজন সাইকোঅ্যানালিস্ট একেই বলে টেলিপ্যাথি, এর আকর্ষণ মাধ্যাকর্ষণের চাইতেও বেশী। বেচারী নিউটন ভূমি আকর্ষণ নিয়েই মেতে ছিল—মনের আকর্ষণ যে ভূমির আকর্ষণের চাইতে শত-সহস্র গুণে বেশী টের যদি পেত তাহলে হয়ত–
থাক, আর আকর্ষণের কাজ নেই যাও পোশাক বদলাতে যাচ্ছিলে তাই বদলে এসো।
হাঁ যাই—তুমিও ইতিমধ্যে বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখটা ধুয়ে এসো না।
মন্দ বল নি। কৃষ্ণা উঠে বাথরুমের দিকে চলে গেল।
কৃষ্ণা ঘর হতে বের হয়ে যেতেই চট্ করে সুকুমার ফোনটা তুলে নিল : হ্যালো, please put me to south…
ওপাশ হতে কিরীটীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, Kirity Roy speaking!
কে, কিরীটী? আমি সুকুমার।
কি ব্যাপার? হঠাৎ ফোন?
আজকেই–সব ready রাখবি, সুযোগ হঠাৎ মিলে গিয়েছে অভাবনীয়, এখন আর নয়, আবার মিলনী সঙ্ঘ থেকে তোকে ring করবো।
সুকুমার ফোনটা নামিয়ে রেখে বেশ পরিবর্তনের জন্য পাশের কক্ষে চলে গেল। কৃষ্ণা তখনও বাথরুম থেকে বের হয় নি।
.
একটু পরে জগদেও ট্রেতে করে চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল। ত্রিপয়ের ওপরে ট্রে-টা নামিয়ে রেখে চলে যেতেই কৃষ্ণা প্রসাধনান্তে কক্ষে এসে প্রবেশ করল গুনগুন করে গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে। কাপ সাজিয়ে দুধ চিনি দিয়ে সব প্রস্তুত করে রেখে কৃষ্ণা সুকুমারের অপেক্ষা করতে থাকে। এবং একটু পরেই সুকুমারও এসে কক্ষে প্রবেশ করল, পরিধানে তার ধুতি-পাঞ্জাবি।