আবার একসময় কৃষ্ণা প্রশ্ন করে, আমাদের নিয়ে যে গবেষণা আপনার চলছে, কতদূর successful হলো বলুন তো? এও কি কখনও সম্ভব নাকি, মানুষের মনের গতি বা সুপ্ত ও জাগ্রত প্রবৃত্তিকে অনুশীলন করে, এই প্রকারের বিভিন্ন দুজন মানুষ নর বা নারী একজন হতে অন্যজনের identityতে আসতে পারবেন?
কেন সম্ভব নয় বল? ডাক্তার মৃদু হেসে কৃষ্ণার মুখের দিকে তাকায়।
ধরুন আমি একবার যদি কৃষ্ণা, আবার একবার কাবেরী বলে নিজের পরিচয় দিই এবং আমরা দুটি বোন পরস্পর পরস্পরকে যতটা closely study করবার সুযোগ বা সুবিধা পেয়েছি সেই হতে আমরা পরস্পর পরস্পরকে যতটা ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ ভাবে চিনি ও জানি সেদিক থেকে আমরা একে অন্যের কথাবার্তা, হাবভাব, চালচলন একই ভাবে প্রকাশ করলে, সাধ্য কি কেউ তা জানতে পারে?
তোমার কথা যে কতকটা সত্য অস্বীকার করি না কৃষ্ণা, কিন্তু এও ঠিক, প্রত্যেক মানুষের। অবচেতন মনে যে প্রবৃত্তিগুলো জন্মগতভাবে সুপ্ত থাকে, অনেক সময় নিজের অজ্ঞাতে চিন্তায় ভাবে ও প্রবৃত্তিতে প্রকাশ হতে দেখা যায়। মানুষ তার পরিবেষ্টনী ও অবচেতন চিন্তার দ্বারা নিজের অজ্ঞাতেই অনেক ক্ষেত্রে চালিত হয়ে থাকে এ কথা কি অস্বীকার কর কৃষ্ণা! ডাক্তার তার বক্তব্য শেষ করে।
না।
তবে?
হঠাৎ ঢং ঢং করে রাত্রি বারোটা ঘোষণা করল দেওয়াল-ঘড়িতে।
কৃষ্ণা চমকে উঠে দাঁড়ায়, উঃ অনেক রাত হয়ে গেল!
আমার গাড়ি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে কৃষ্ণা।
না, প্রয়োজন নেই, রাস্তা থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে নেবোখন।
না। এত রাত্রে একাকী তোমার ট্যাক্সি করে যাওয়া উচিত হবে না, তা ছাড়া তোমার বাবা শুনলেও হয়ত অসন্তুষ্ট হবেন।
বাবা! হ্যাঁ, তা হবেন—কথাটা যেন অন্যমনস্কের মতই বলে কৃষ্ণা কতকটা আত্মগতভাবেই।
তারপর একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস যেন কৃষ্ণার বুকখানা কাঁপিয়ে বের হয়ে আসে।
একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো কৃষ্ণা, অবশ্য যদি মনে কিছু না করো—
কি?
তোমার বাবার সম্পর্কে যখনই কোন কথা উঠেছে তুমি যেন–
না, না—ওকথা থাক ডাঃ গুপ্ত, আমি এবারে যাবো—
বলতে বলতে সহসা যেন উঠে দাঁড়ায় কৃষ্ণা।
হ্যাঁ, চল—
কৃষ্ণাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে সুকুমার ড্রাইভারকে বলে, ওহি কোঠি পরই মেমসাবকো ভি পৌঁছা দেনা লছমন্।
জি।
গাড়ি চলে গেল। অন্ধকারে ক্রমবিলীয়মান গাড়ির লাল টেইল লাইটটার দিকে তাকিয়ে করিডোরেই দাঁড়িয়ে থাকে সুকুমার।
সহসা কিরীটীর ডাকে ও চমকে ওঠে, এবারে আমিও গুডনাইট জানাবো ডাক্তার।
যাবি?
হ্যাঁ, ধ্যানের সময় আর যাই হোক দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিও ভাল লাগবে না।
একটা কথা কিরীটী—
বল্।
আচ্ছা কৃষ্ণা কাবেরী বোন দুটি সম্পর্কে তোমার ধারণা মানে মতামত কি?
দেখ, তোর প্রতিদিনকার সিটিংয়ের রিপোর্ট পড়ে এবং ওদের সম্পর্কে তোর মতামত শুনে ও আজকের ব্যাপার দেখে আমরা একটা যাহোক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি।
কি?
কৃষ্ণা ও কাবেরী যমজ বোন দুটির মনোগত চিন্তা বা প্রবৃত্তির মধ্যে সুস্পষ্ট একটা পার্থক্য আছে স্বীকার করিস, না করিস না?
সে তো নিশ্চয়ই–কিন্তু–
হ্যাঁ, পরস্পরের মধ্যে তাদের যতই similarity থাকুক না কেন, চিন্তাধারা ও প্রবৃত্তির দিক হতে কতকগুলো জায়গায় they distinctly differ from each other—অর্থাৎ একে অন্য হতে বিশেষ ভাবেই পৃথক। কিন্তু সে কথার আগে একটা প্রশ্ন, এদের এতদিন ধরে study করে নিজস্ব নিশ্চয়ই তোর একটা মতামত গড়ে উঠেছে—সেটা কি বল তো?
একটু যেন চিন্তা করে সুকুমার বলে, আমার মনে হয় কৃষ্ণা ও কাবেরী দুটি বোনের মধ্যে একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, তীক্ষ্ণ ও চতুর—অথবা একেবারে নিরেট, আর তা না হলে একজন চতুর ও বুদ্ধিমতী হয়েও বোকার অভিনয় করে চলেছে এবং অন্যজন সত্যই হয়ত খুব নিরীহ, সরল, শান্তশিষ্ট ও একটু ভীতু প্রকৃতির।
তোমার কথা যে একেবারে মিথ্যা জোর গলায় বলতে পারি না ডাক্তার। অবশ্য আমার মনে হয় যাকে তুই অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও চতুরা বলছিস—তাকে আমি বুদ্ধিমতী ও চতুরা তো বলবোই সেই সঙ্গে অতিরিক্ত রোমান্টিক মনোভাবাপন্নও বলবো এবং মনের তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও রোমান্স দুটোতে মিলে কিছুটা মানসিক insanity develop করেছে বলবো।
Insanity—মানসিক বৈকল্য বা বিকৃতি?
হ্যাঁ, এখানে insanity বলতে ঠিক আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে, মন অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও রোমান্টিক হওয়ার জন্য যে এক ধরনের মানসিক পরিবর্তন ঘটে তাই and nothing more কিন্তু সে কথা যাক, definite প্রমাণ বা প্র ছাড়া তো আজকের দিনে কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করে কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করানো যেতে পারে না। আমরা দুটি বোনের মানসিক ও প্রকৃতির পরিচয় কিছুটা পেয়েছি মাত্র কিন্তু আসলে ঐ যমজ দুটি ভগ্নীর মধ্যে কোন্ জন সত্যি করে নিহত নরেন মল্লিকের সঙ্গে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ ছিল সে সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের বর্তমান সমস্যা এক পা-ও এগুচ্ছে না। যে জট ওদের দুটি বোনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সমস্যাকে ঘোরালো করে রেখেছে সে জট এতটুকুও খুলছে না।
কোন উপায়ই কি খুঁজে পাচ্ছিস না?
পেতে হবেই কিন্তু তার আগে আরো একটা বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজের ভার তোর ওপরে আমি দিয়ে যেতে চাই।