বেশ। ধরুন এই ছবিটা-what do you find in this picture?
বাঃ, কি সুন্দর একটা পাখী! ডানা দুটি মেলে নীল আকাশে উড়ে চলেছে, ঠোঁটের মধ্যে রেখেছে বোধ হয় নীড় বাঁধবার জন্য একটি খড় বা কাঠি। নীড়ের মায়ায় পৃথিবীর যাবতীয় পশু, পাখী, প্রাণীই বোধ হয় এমনি ঘুরে মরছে!
আর কিছু দেখছেন ছবিটায়?
হুঁ। নীচে বোধ হয় ওগুলো ঘাস জন্মেছে, ঘাসের বুকে ছড়িয়ে আছে কতকগুলো শুকনো ঝরা পাতা।
নোটবইয়ে কাবেরীর কথাগুলো টুকতে ঢুকতে আর একখানা ছবি কাবেরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে ডাক্তার বলে, দিন ও ছবিখানা, এইখানা দেখুন এবারে। বলুন এ ছবিটায় কি আছে?
চমৎকার একটি ফুল, দলগুলো মেলে ফুটে উঠেছে। ফোঁটা ফুলটির উপরে বসে আছে মধুলোভী একটি কৃষ্ণ ভ্রমর, নিচে ছড়িয়ে আছে দেখছি একরাশ ঝরা ফুলের পাপড়ি। তাই না ডাঃ গুপ্ত?
Good! দিন ছবিটা—now have this one! বলুন কি দেখছেন এইটায়?
চতুর্থ চিত্রখানা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে কাবেরী বলে, এটা কি! দাঁড়ান। হুঁ, মনে হচ্ছে কতকগুলো বৃত্ত। বৃত্তগুলোকে চিহ্নিত করছে আড়াআড়ি ভাবে একটি রেখা—সরল রেখা। কোন জিওমেট্রিক figure নিশ্চয়ই! জিওমেট্রি আমার ছিল বটে তবে ভাল বুঝতে পারতাম না কোন দিন। বরাবর তাই এড়িয়ে এসেছি ওটাকে—
ছবিখানা কাবেরীর হাত হতে ফেরত নিয়ে একটা খামের মধ্যে ছবিগুলো ভরে ফেলে সুকুমার।
আজকের sitting এইখানেই শেষ কাবেরী দেবী। হ্যাঁ, কৃষ্ণা দেবী চলে যাবার সময় তাড়াতাড়িতে তাঁর আজকের sittingয়ের পারিশ্রমিকটা নিয়ে যেতে ভুলে গেলেন। বলতে বলতে ডাক্তার ড্রয়ার খুলে ১০ টাকার কুড়িখানা নোট বের করে কাবেরীর হাতে দিতে দিতে বলে, একশ টাকা কৃষ্ণা দেবীর, বাকী একশ টাকা আপনার।
কাবেরী বিনম্ৰ কুণ্ঠার সঙ্গে ডাক্তারের হাত থেকে নোটগুলো নিতে নিতে সলজ্জ কণ্ঠে বলে, সত্যি এভাবে আপনার কাছ হতে টাকা নিতে কেমন যেন সঙ্কোচ অনুভব করি ডাঃ গুপ্ত
সঙ্কোচ! কেন? পারিশ্রমিকের মূল্য হিসাবে টাকা নিচ্ছেন, দান-খয়রা তো আর নয়—
তবু, সামান্য কথাবার্তা, আলোচনার জন্য এভাবে টাকা নেওয়া, সত্যি মনকে বড় পীড়া দেয়।
না, না–ও কথা ভাবেন কেন মিস্ চৌধুরী! সময়েরও মূল্য আছে একটা। বিশেষ করে আপনাদের ও আমাদের মত যাদের মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রম দিয়ে জীবিকা উপার্জন করতে হয়। এতে সঙ্কোচ লজ্জা বা দ্বিধার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না—শুধু তো আপনারাই নন, আরো দুজনে sitting দিচ্ছেন।
টাকা নেবো বলেই যখন আপনার কাছে sitting দিতে এসেছি, তখন ও সম্পর্কে মনে আজ দ্বিধা বা সঙ্কোচ জাগলেও অন্তত আমাদের মুখ দিয়ে সেটা প্রকাশ করা নিশ্চয় শোভা পায় না।
আলাপ-আলোচনার মধ্যে হঠাৎ একসময় কাবেরীই প্রশ্ন করে বসে, আচ্ছা ডাক্তার, যখনই আমি এখানে এসেছি তখন দেখি আপনি চেম্বারে বসে বই-ই পড়েন, দিনরাত খালি বুঝি লেখাপড়া নিয়েই থাকেন? কখনো কোথাও বেড়াতে বা সিনেমা দেখতে যান না?
সিনেমায় মাঝে মাঝে যাই ভাল বই থাকলে। আপনি বুঝি বেড়াতে, সিনেমা দেখতে খুব ভালবাসেন?
বেড়াতে, সিনেমা দেখতে খুবই ভাল লাগে তবে কোনটাই হয়ে ওঠে না তেমন এই যাদুঃখ।
কেন?
বাবা! তিনি পছন্দ করেন না। কারো সঙ্গে মেলামেশা করা, থিয়েটার, সিনেমা বা ক্লাবে যাওয়া এসব তিনি আদপেই পছন্দ করেন না। তবু মাঝে মাঝে লুকিয়ে-চুরিয়ে যে যাই না তা নয়, তবে–
কেন? আপনার বাবা–
বাবা একজন অদ্ভুত typeয়ের লোক। এত স্নেহ করেন, এত ভালবাসেন আমাদের—তবু in some respects he is so queer! নিজে তো কখনো কোথাও বেরই হন না, আমরা যে কোথাও বের হবো, তাও পছন্দ করেন না একেবারে।
কেন বলুন তো?
তা ঠিক জানি না বলতে বলতে কাবেরী যেন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে যায়, তারপর হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস যেন কাবেরীর বুকখানা কাঁপিয়ে বের হয়ে যায়।
থাক ওসব কথা ডাঃ গুপ্ত। এক এক সময় এ জীবন এমন ক্লান্ত ও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে যে ইচ্ছা করে সব ভেঙেচুরে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই, কিন্তু বাবা—he is so affectionate, so tender—তাছাড়া বাবা কোন কারণে দুঃখ পাবেন, ভাবতেও পারি না-
কথার মোড়টা ফিরিয়ে দেবার জন্যে হঠাৎ সুকুমার প্রশ্ন করে, আচ্ছা মিস চৌধুরী, কি টী
আবার আপনি! জবাব দেবো না আপনার কথার—
Sorry! অনেক দিনের অভ্যাস কিনা—
Love picture আমার খুব ভাল লাগে—
রোমিও জুলিয়েট ছবিটা দেখেছেন?
দেখেছি, কিন্তু বড় বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়—
কিন্তু রোমিও জুলিয়েটের কাহিনী তো বিশ্বসাহিত্যের একটি প্রধান প্রেমের উপাখ্যান।
তা হোক। Effeminate love! তার চাইতে সিজার অ্যাণ্ড ক্লিওপেট্রা ঢের ভাল লেগেছে।
ঢং ঢং করে রাত্রি দশটা ঘোষণা করলে দেওয়াল-ঘড়িতে।
উঃ-রাত দশটা! তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় কাবেরী।
চল তোমাকে খানিকটা এগিয়ে দিয়ে আসি
না না—তার প্রয়োজন নেই, আমি একাই যেতে পারবোকাবেরী কতকটা যেন ত্রস্ত পদেই ঘর হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেল, শেষ বিদায়সম্ভাষণটুকুও জানাতে বোধ হয় ভুলে যায়।
কাবেরী ঘর হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যেতেই সুকুমার ঘরের রাস্তার দিকের জানালাটা খুলে দিয়ে সামনে দাঁড়াল।
খোলা জানালাপথে তাকিয়ে সুকুমার দেখলে, হন হন করে কাবেরী নির্জন রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে একাকী।