বৃদ্ধ কক্ষ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।
তারপর পথ ভুলে নাকি?
না হে না। কিরীটী জবাব দেয়।
বসুন—কিরীটী এবার রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে। ওঁর নাম মজিবুর রহমান, লালবাজার ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টার।
নমস্কার।
তারপর কি ব্যাপার বল তো ভাই, হঠাৎ এই অধীনের গৃহে–
তুই তো মানসিক চিকিৎসা করিস—সাইকোঅ্যানালিস্ট, একটা ডায়লেমার সলুশন করে দে তো ভাই–
কি ব্যাপার!
একটু সময় নেবো ভাই। তুই এখন ফ্রি তো?
হ্যাঁ, দাঁড়া চা আনতে বলি, আপত্তি নেই তো?
না, মৃদু হাসি দেখা দেয় কিরীটীর ওষ্ঠপ্রান্তে, অমৃতে অরুচি কিরীটী রায়ের নেই।
সুকুমার টেবিলের উপরে রক্ষিত কলিং বেল বাজাতেই বেয়ারা এসে সেলাম জানাল। জগদেও—একটু চায়ের ব্যবস্থা কর। জগদেও সম্মতি জানিয়ে চলে গেল।
তারপর এখন বাসা নিলি কোথায়? সুকুমারকে প্রশ্ন করে কিরীটী।
কোথায় আবার, এইখানে! সমস্ত বাড়িটাই ভাড়া নিয়েছি, ভিতরের দিকে ব্যাচিলার্স ডেন, বাইরে চেম্বার।
সুকুমারের কথায় কিরীটী ও রহমান দুজনেই হেসে ওঠে।
পসার কেমন জমলো?
কিরীটীর কথায় আড়চোখে রহমান সাহেবের দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হাসির সঙ্গে বলে, Confidential; হাঁড়ির খবর আজকালকার দিনে কেউ কাউকে দেয় রে!
চেম্বার তো বেশ জাঁকিয়ে বসেছিস।
হ্যাঁ, তা বসতে হবে বৈকি। এ দেশটাকে তো চিনলি না এখনও, আমাদের মত বাপের টাকা বা শ্বশুরের টাকার জোরে বিলেত-প্রত্যাগত আনকোরা বিশেষজ্ঞদের কেউ পোঁছে না ভাই, কেউ পোঁছে না। দাঁড়া, আগে না খেয়ে খেয়ে, দুশ্চিন্তায় দুশ্চিন্তায় প্যান্টে তালি পড়ক, মাথার চুল সাদা হয়ে যাক, বাপের দেওয়া ব্যাংক ব্যালেন্সটা শেষ হয়ে আসুক, তবে তো।
কিন্তু এতগুলো institution, হাসপাতাল-visitingয়ের postও একটা জোটাতে পারলি না?
না ভাই। বাবা, মামা, শ্বশুর, মেসো কারোই তো জোর নেই, কোন হাসপাতালে অনাহারী বহির্বিভাগীয় পরিদর্শনকারী হওয়া কি এতই সহজ রে! তা আমিও বাবা শত হস্তেন দুর্জনদের পরিত্যাগ করেছি। My own Nursing Home & chamber, এতে করে কিন্তু মন্দ হয় নি, সুফলই পেয়েছি। একা মানুষ বেশ আনন্দেই আছি।
ট্রেতে করে ভৃত্য চা নিয়ে এলো। চা পান করতে করতেই কিরীটী সংক্ষেপে কৃষ্ণা ও কাবেরীর ব্যাপারটা বলে গেল।
এই হলো story, তুই তো একজন মনস্তাত্ত্বিক, এই ডায়লেমাটার সলুশন করে দে তো! ঐ দুই যমজ বোন কৃষ্ণা ও কাবেরী ওদের পরীক্ষান্তে দৈহিক কোন চিহ্ন, যেমন বার্থ মার্ক, স্কার মার্ক বা ডিফিসিয়েন্সি ইত্যাদি ছাড়া, ওদের মনের বা চরিত্রগত গঠন বা প্রবৃত্তিগত ভাবধারার অনুশীলন দ্বারা কি এক থেকে অন্যকে পৃথক করা যেতে পারে না?
How interesting! Its marvellous idea! ঐভাবে ঠিক ইতিপূর্বে কখনো আমি ভেবে দেখি নি। হ্যাঁ, হয়ত কিছুদিন ধরে আলাদা আলাদা ভাবে ঐ যমজ বোনদুটিকে study করতে পারলে, হয়তো—হয়তো yes, একটা conclusion-এ পৌঁছানো যেতে পারে। কিন্তু–
কিন্তু কি?
ভাবছি তা সম্ভবই বা হতে পারে কি করে? ভদ্রঘরের অবিবাহিতা সুন্দরী তরুণী, বাপ বর্তমান, রাজীই বা হবেন কেন? না ভাই, এদেশে এখনও এ সব সম্ভব নয়–
শোন ডাক্তার, আমি ইতিমধ্যেই একটা মতলব ঠাউরেছি, how do you like the idea কাগজে কাগজে তোর নাম দিয়ে সাইকোঅ্যানালিস্ট হিসাবে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন?
হ্যাঁ, বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে : যমজ ভাই বোন, যমজ ভাই বা যমজ বোন এদের মনোগত বা চরিত্রগত প্রবৃত্তি বা ভাবকে স্টাডি করে এদের মানসিক ও প্রবৃত্তিগত গঠন থেকে একজনকে অন্যজন হতে identify করা যায় কিনা, ঐ সম্পর্কে তুই গবেষণা করছিস এবং ঐ গবেষণার জন্য তুই যমজ ভাই, বোন ও ভাইবোনদের আহ্বান জানাচ্ছিস; নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তারা তোর চেম্বারে এসে sitting দেবে–
দূর পাগল! এদেশে ও ধরনের বিজ্ঞাপনে কেউ সাড়া দেবে না।
উঁহু, তুই আমার পরিকল্পনাটা ঠিক এখনও ধরতে পারিস নি। তাদের বেগার দিতে হবে, রীতিমত প্রতি sittingয়ের জন্য তাদের pay করা হবে—হ্যাঁ, handsomely pay করা হবে—বলতে থাকে কিরীটী, ধর এক বা দু ঘণ্টার জন্য যেমন প্রয়োজন, প্রতি sittingয়ে ৫০ হতে ৬০, ৮০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে।
বলিস কি!
হ্যাঁ, আর সে টাকা দেব আমি।
তুই দিবি?
হ্যাঁ, আমি দেবো কারণ দায়টা এক্ষেত্রে আমারই—
কিন্তু–
না, আর কিন্তু নয় বন্ধু। শুভস্য শীঘ্রম্। কালই আমি কাগজে কাগজে বিজ্ঞাপন দেবার সব ব্যবস্থা করছি।
বেশ। কিন্তু যাদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, যদি শেষ পর্যন্ত তারাই না সাড়া দেয়?
সাড়া তাদের দিতেই হবে এবং যতদিন না সাড়া দেবে বিজ্ঞাপন চলবে কিন্তু অতটা বোধ হয় করতেই হবে না। কারণ খোঁজ নিয়ে ইতিমধ্যেই আমি জেনেছি, আর্থিক অবস্থা তাদের এমন বিশেষ কিছু একটা নয়। এ ফাঁদে তাদের ধরা দিতেই হবে। আর শেষ পর্যন্ত ধরা যদি নাই দেয়, তখন অন্য উপায় না হয় একটা কিছু ভেবে দেখা যাবে।
বেশ, দে বিজ্ঞাপন।
তবে আজকের মত উঠি?
আয়—
.
কৃষ্ণা ও কাবেরীর ফ্ল্যাটবাড়ি।
অন্তরাল হতে সঞ্জীবের আবৃত্তি শোনা যাচ্ছে।
Our sincerest laughter
With some pain is fraught
Our sweetest songs are those
That tell of saddest thought.