Electrocution-য়ে মৃত্যু! অভিনব উপায় অবলম্বন করা হয়েছে হত্যা করবার জন্য।
কিরীটী বলছিল, অতুলবাবুর শরীরের মধ্যে হাই ভোল্টের কোন ইলেকট্রিক কারেন্ট প্রবেশ করিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে সেটুকু বোঝা গেল। কিন্তু কথা হচ্ছে আলোর সুইচটা অন্ করেছিল কে? অতুলবাবু নিজেই, না হত্যাকারী?
শিউশরণ প্রশ্ন করে, কি তুমি বলতে চাও কিরীটী? সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় শিউশরণ কিরীটীর মুখের দিকে।
বলছি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে নিজেই অতুলবাবু আলোটা জ্বেলে নিজের ঘরের মধ্যে যে মৃত্যুফাঁদ পাতা ছিল তাতে নিজেই অজ্ঞাতে পা দিয়েছিলেন, না অতুলবাবু সে রাত্রে তাসের আড্ডা হতে ফিরে শয়নকক্ষে প্রবেশ করে বরাবর গিয়ে শয্যা নিয়েছিলেন, তারপর কোন একসময় সেই ঘরে হত্যাকারী প্রবেশ করে।
তাহলে তোমার ধারণা হত্যাকারী অতুলবাবুর বিশেষ পরিচিতই ছিল? প্রশ্নটা করে শিউশরণ।
নিশ্চয়ই। সে রকমই যদি হয়ে থাকেও কোন সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে শেষের ব্যাপারটাই যদি ঘটে থাকে তাহলে বুঝতে হবে একান্ত আকস্মিক ভাবেই মৃত্যু এসেছিল সে রাত্রে বিশেষ তাঁর একজন পরিচিত জনের হাত দিয়েই–
আর একটু খোলসা করে বল, রায়।
দেখ শিউশরণ, আমার অনুমান প্রথমোক্ত ভাবেই অতুলবাবুকে আকস্মিক ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাসের আড্ডা হতে ফিরে খুব সম্ভবত অতুলবাবু আলো জ্বেলে শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করতে যাবেন এমন সময় হয়ত হত্যাকারী ঘরে প্রবেশ করে। এবং খুব সম্ভবত হয়ত হত্যাকারী গিয়ে অতুলবাবুর শয্যার ওপরে উপবেশন করে ও তাই দেখে অতুলবাবু চেয়ারে বসতে যান—এই পর্যন্ত কথাটা বলতে বলতেই হঠাৎ কিরীটী কি ভেবে যেন থেমে যায় এবং চাপা অনুত্তেজিত কণ্ঠে বলে, নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই তাই!
বিস্মিত সুব্রত ও শিউশরণ দুজনেই কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, কি? কি নিশ্চয়ই, কিরীটী?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই! কিন্তু–কিন্তু কেন! আর তাই যদি হয়ে থাকে মণিকা দেবীর জানা উচিত ছিল। মণিকা দেবীর নিশ্চয়ই জানা উচিত ছিল। কিরীটী স্বগতোক্তির মতই যেন আপন মনে কথাগুলো বলে চলে।
সুব্রত ও শিউশরণ কিরীটীর মৃদুচ্চারিত কথাগুলো শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিরীটী চেয়ার থেকে উঠে ঘরের মধ্যে তখন পায়চারি শুরু করেছে।
কোন একটা বিশেষ চিন্তা তার মাথার মধ্যে এসে প্রবেশ করেছে এবং সেই চিন্তার আবর্তেই কিরীটী সহসা ব্যাকুল ও চঞ্চল হয়ে উঠেছে।
অথচ এও সুব্রত জানে নিজে থেকে স্বেচ্ছায় যতক্ষণ নিজেকে কিরীটী ব্যক্ত না করে ততক্ষণ কোনমতেই কোন সাড়া তার কাছ হতে পাওয়া যাবে না।
হঠাৎ আবার একসময় পায়চারি থামিয়ে কিরীটী শিউশরণের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদুকণ্ঠে বললে, চল শিউশরণ, বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসা যাক।
বাইরে! কোথায় যাবে?
চলই না। আগে হতেই মেয়েলী কৌতূহল কেন? সুব্রত চল। ওঠ।
অগত্যা উঠতেই হল ওদের দুজনকে।
.
রাস্তায় বের হয়ে কিরীটী গোধূলিয়ার দিকেই চলতে শুরু করে।
মন্থর অলস পদক্ষেপে হেঁটে চলেছে কিরীটী আগে আগে আর ওরা দুজনে নির্বাক তাকে অনুসরণ করে চলেছে।
কোথায় চলেছে কিরীটী!
চলতে চলতে ক্রমে ওরা জঙ্গমবাড়িতে মণিকা দেবীদের বাড়ির কাছাকাছিই এসে দাঁড়াল।
অপ্রশস্ত সরু গলিপথটায় আলোর ব্যবস্থা এত কম যে সমগ্র গলিপথটা একটা আলো-আঁধারিতে যেন কেমন থমথম করছে।
হঠাৎ কিরীটী শিউশরণকে চাপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, মণিকাদের ঠিক উল্টো দিকে ঐ দোতলা বাড়িটায় কে থাকে শিউশরণ?
কেমন করে বলব না খোঁজ নিয়ে? শিউশরণ নিরাসক্ত কণ্ঠে জবাব দেয়।
তাহলে চল একবারটি না হয় খোঁজ নিয়েই দেখা যাক।
ব্যাপার কি?
বুঝতে পারছ না? উপরের দিকে ভাল করে চেয়ে দেখ। ঐ বাড়ির দোতলা থেকে মণিকা দেবীদের বাড়ির দোতলার বিশেষ একটা ঘরের জানালাটা খোলা থাকলে এবাড়ির কোন কোন লোকের চোখে ঘটনাচক্রে বা দৈবাৎ যাই বল মণিকা দেবীদের বাড়ির ঐ ঘরের কোন কিছু হয়ত দৃষ্টিগোচরও হতে পারে। এবং মণিকা দেবীদের বাড়ির প্ল্যানটা একটু ভেবে দেখলেই মনে পড়বে ঐ যে বন্ধ জানালাটা দেখছ মণিকা দেবীদের বাড়ির ওটাই সেই ঘর—অকুস্থান, যেখানে অতুলবাবুকে হত্যা করা হয়েছে। অতএব–
কিরীটীর কথায় দুজনে তাকিয়ে দেখতেই মনে হল, সত্যি তাই তো।
শেষোক্ত কথার জের টেনে কিরীটী তখন বলছে, অতএব চলই না একবার ঐ বাড়িটায় চুঁ মেরে দেখা যাক।
চল।
সকলে এগিয়ে গেল।
কিন্তু দরজার কড়া নাড়তে হল না। দরজার কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ বন্ধ দরজা খুলে গেল এবং খোলা দ্বারপথে একজন লংস ও হাফসার্ট পরিহিত পুরুষ একটা সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে বের হয়ে আসছেন দেখা গেল।
অ মশাই, শুনছেন? কিরীটীই আহ্বান জানায়।
সাইকেল-হাতে ব্যক্তি থামলেন, আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ। আপনি এই বাড়িতেই থাকেন বুঝি?
হ্যাঁ। কেন বলুন তো? কি চাই? রুক্ষ ভারী কণ্ঠস্বর।
আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল।
আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না! তাছাড়া এখন আমার সময় নেই। পূর্ববং রুক্ষ কণ্ঠস্বর।
এবারে শিউশরণ এগিয়ে এসে হিন্দীতে বললে, আপনার সঙ্গে কথা আছে। আমি খোদাইচৌকির থানা-অফিসার, থানা থেকেই আসছি।
থানা-অফিসার! এবারে ভদ্রলোক তাকালেন।
হ্যাঁ। একটু ভেতরে চলুন, কয়েকটা কথা আছে।
সকলে এসে ভদ্রলোকের বাড়ির নীচের তলাকার একটা ঘরে প্রবেশ করল। ভদ্রলোক ঘরে সর্বাগ্রে প্রবেশ করেই সুইচ টিপে ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।