বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমকামী দেশ হল অস্ট্রেলিয়া। এদেশে সমকামীদের অধিকার রক্ষায় কড়া আইন আছে। এখানকার সমকামীদের কেউ কটুক্তি করলে সোজা শ্রীঘর। ইউরোপ-আমেরিকাতে সমকামিতা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মতো এতটা অধিকার তারা পায় না। সমগ্র পৃথিবীতে থেকে অনেক সমকামী প্রতি বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আসে। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যও সমকামীরা বিশেষ অগ্রাধিকার পায় এদেশে। প্রতি বছর মার্চ মাসে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো ব্যয়বহুল অনুষ্ঠানে সমকামী অর্ধনগ্ন রেলি হয় রাস্তায়। আইনের ভয়ে সমকামিতাকে খারাপ বলার সাহস হয় না কারোর। এখানকার মা-বাবা প্রার্থনা করে যেন তাঁর সন্তান সমকামী না-হয়। অবশ্য সব দেশের বাবা-মায়েরা চান না তাঁর সমকামী বা হিজড়া সন্তান জন্ম নিক। যাই হোক, সমকামী হয়ে গেলে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এদেশের আইন তাঁদের দেয়নি। অলিম্পিকের আয়োজক দেশ যেভাবে প্রচুর টাকা আয় করে, ঠিক তেমনি অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর প্রায় একই পরিমাণ টাকা সমকামিতাদের সমর্থন করে আয় করে। সমকামী বার, সমকামী ক্লাব, সমকামী রেলি, প্রতি বছর কয়েক হাজার ধনী সমকামী স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য তাঁদের নিজেদের দেশের সমস্ত সম্পদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে চলে আসে। সমকামিতা এই দেশের সরকারের বড়ো এক আয়ের উৎস। অনেকে মনে করেন যে কয়টি দেশে সমকামিতা বৈধ, সব দেশেই ব্যাবসার জন্য সমকামিতা বৈধ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে দামি গাড়ি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমকামীদের কাছেই দেখা যায়। উন্নত বিশ্বে ধনী লোকেরা সমকামী হওয়াতে মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, চিকিৎসক, বিখ্যাত ব্যক্তি এমনকি সরকারও তাঁদেরকে মানসিক রোগী’ বা ‘ফ্যান্টাসি বাতিক’ বলতে পারছে না। বরং তাঁদের এই সমকামিতাকে সমর্থন করলে বিরাট ব্যাবসায়িক লাভ আছে।
অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন, ভোগবাদে সমকামিতা একটি পণ্য, অপরদিকে পশুপাখির আচরণের ধারাবাহিকতায় বিরাজমান একটি শখ! ১৩০টির মতো পাখির মধ্যে (এর মধ্যে লেইসান আলবাট্রসের ৩১ শতাংশের মধ্যে মেয়ে-মেয়ে ও গ্রেলাগ গিজের ২০ শতাংশের মধ্যে ছেলে-ছেলে) সমকামিতার প্রধান কারণ প্যারেন্টিংয়ের চাহিদা কম থাকা। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধহীনতা বা এককথায় অসামাজিকতা সমকামিতাকে শখে পরিণত করে। যুক্তরাজ্যের এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভলুশনারি জেনেটিসিস্ট অ্যালান মর মানুষের সমকামিতাকেও সেভাবেই দেখেছেন। ইস্টার্ন সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত ‘Federal distortion of the homosexual footprint’-এ ড: পল ক্যামেরুন দেখিয়েছেন পুরুষ ও মেয়ের বিবাহ-সম্পর্ক আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দেয়, যেখানে সমকামীদের ক্ষেত্রে আয়ুষ্কাল ২৪ বছর কম। পল ক্যামেরুন ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, কানাডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল, পোস্ট-গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদনা করে থাকেন। তাঁর নিজের ৪০টির মতো আর্টিকেল আছে সমকামিতার উপর। ১৯৯০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ডেনমাকর্কে স্বাভাবিক যৌনাচারীর গড় আয়ু যেখানে পাওয়া গেছে ৭৪, সেখানে ৫৬১ গে পার্টনার এর গড় আয়ু পাওয়া যায় ৫১! সমকামী মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই গড় আয়ুর হার কম, আনুমানিক ২০ বছরের কম! অপরদিকে ধুমপায়ীদের ক্ষেত্রে এই আয়ুষ্কাল কমে যাওয়ার হার মাত্র ১ থেকে ৭ বছর!
১৯৭৩ সালের আগে পর্যন্ত একে ‘মানসিক অসুস্থতা’ হিসাবেই দেখা হত। পরে অবশ্য ১৯৭৩ সালে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা থেকে অব্যহতি দেয়। অনেকে মনে করেন সমকামিতা একটি অত্যাধিক ভোগবাদিতার উপকরণ। তা ছাড়া পরিস্থিতিও এর বিকাশ ও পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী। স্বাভাবিক যৌনসম্ভোগের উপায় না-থাকলে সমকামিতা হয়ে উঠে অপরিহার্য যৌনাচার। সেজন্যই সৈনিকদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ করার মতো। ULCA-এর আইন স্কুলের উইলিয়াম ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে আনুমানিক ৬৬,০০০ সমকামী ও উভকামী আছে। ২০০৯ সালের গ্যালপ জরিপেও জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬৯ শতাংশ মানুষ সমকামীদের সেনাবাহিনীতে কাজ করাকে সমর্থন করে। ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবার মনে করেন, যুদ্ধ ও শিকারে সমকামিতা পুরুষ গোত্রকে সংগঠিত রাখতে সাহায্য করে। প্রাচীন গ্রিসে স্পার্টানদের এলিট সৈন্যদের মধ্যে সমকামিতাকে উৎসাহিত করা হত। গ্রিক স্পার্টান ছাড়াও অন্য থেবেস, এথেন্সেও সমকামিতার উদাহরণ পাওয়া যায়।
সেক্স বিষয়টি পুরোপুরি শরীরের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু জেন্ডার নির্ভরশীল সমাজের উপর। যেহেতু নারী বা পুরুষের দায়িত্ব, কাজ ও আচরণ মোটামুটি সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত হয়, তাই সমাজ পরিবর্তন বা সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জেন্ডার ধারণা বদলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, আমরা যখন কারোকে ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’ হিসাবে চিহ্নিত করি তখন সেখানে জৈবলিঙ্গ নির্দেশ করাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মেয়েলি’ বা ‘পুরুষালি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে জেন্ডার প্রপঞ্চকে যুক্ত করা হয় যেখানে, সেখানে নারী বা পুরুষের লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে স্বভাব-আচরণগত ইত্যাদি বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। আর এই কারণেই সেক্সকে জৈবলিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক লিঙ্গ বলে অনেকে অভিহিত করেন।