টেস্টোস্টেরনের প্রভাব বয়স্ক নারীর তুলনায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আরও পরিষ্কারভাবে প্রমাণযোগ্য, কিন্তু উভয়ের জন্যই দরকারি। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পরে হ্রাস পাওয়ায় এইসবের কিছু প্রভাব প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য টেস্টোস্টেরন ভুমিকা রাখে। এটি সারটলি কোশ জিনকে সক্রিয় করে। শারীরিক শক্তি নিয়ন্ত্রক। পেশি গঠন করে। টেস্টোস্টেরন মেগাক্যারিওসাইট ও অণুচক্রিকার থ্রম্বোক্সেন A2 রিসেপ্টরের উপর কাজ করে অণুচক্রিকা একত্রীকরণে ভূমিকা রাখে। টেস্টোস্টেরনের অধিক মাত্রা একই ব্যক্তির যৌন ক্রিয়ার সময়সীমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম যৌন সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য বেশি। একাধিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত ব্যক্তি পরের দিন সকালে টেস্টোস্টেরনের অধিক মাত্রা অনুভব করে থাকেন।
যেসব পুরুষ যৌনতাপূর্ণ সিনেমা ( যেমন– পর্নোগ্রাফি ) দেখেন, তাঁদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা গড়ে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়, ফিল্ম শেষ হওয়ার পর ৬০-৯০ মিনিটে চূড়ান্তে ওঠে, কিন্তু কোনো বৃদ্ধি যৌন নিরপেক্ষ ছবি দেখার পর হয় না। এছাড়াও যেসব পুরুষ যৌনতাপূর্ণ সিনেমা দেখেন, তাঁদের মানসিক অবসাদ কমে বলে জানা গেছে। আগের গবেষণা যৌন উদ্দীপনা এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রার মাঝে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। ২০০২ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়, একজন মহিলার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের পরে পুরুষের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ে। পুরুষেরা নারীদের মুগ্ধ (Impress) করার চেষ্টা করেছিল। নারীদের দেহের হরমোন চক্রের উপর পুরুষের টেস্টোস্টেরন মাত্রা এবং যৌন উদ্দীপনা বহুলাংশে জ্ঞাত।
ইস্ট্রোজেন : ইস্ট্রোজেন হল প্রাথমিক নারী লৈঙ্গিক হরমোন (primary female sex hormone)। ইস্ট্রোজেনকে বলা হয় নারী হরমোন’। নারী ও পুরুষ উভয়ের শরীরেই এই হরমোন থাকলেও নারীদের প্রজনন বয়সে এটি উচ্চমাত্রায় থাকে। নারী শরীরের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য বিকাশে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন হরমোন। নারীর বাহুমূলের পশম, স্তনের আকার বা গঠন এবং ঋতুস্রাবের মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এটি প্রজননতন্ত্র গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও ইস্ট্রোজেন পুরুষ এবং নারী উভয়ের মাঝেই থাকে, কিন্তু সচরাচর নারীদের প্রজনন বয়সে এর মাত্রা উচ্চ থাকে। এটি নারীদের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য যেমন স্তন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং একই সঙ্গে মাসিক চক্রের সময় এন্ডোমেট্রিয়ামের পুরুত্ব বেড়ে যায়। শুক্রাণুর পূর্ণতা প্রাপ্তিতে ইস্ট্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি ইস্ট্রোজেনের আরও কিছু কাজ আছে। যেমন— নারীদের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য উন্নীত করে, বিপাক হার বাড়ায়, ফ্যাট বাড়ায়, এন্ডোমেট্রিয়ামের পুরুত্ব বৃদ্ধি করে, জরায়ুর আকার বৃদ্ধি করে, যোনি পিচ্ছিল করে, জরায়ুর প্রাচীরের পুরুত্ব বৃদ্ধি করে।
সাধারণত একজন মানুষ শিশুর পুরুষালি ও নারীত্ব প্রকাশ পায় না একজন শিশু ধীরে ধীরে বড়ো হয়। কেউ পুরুষ হয়ে ওঠে, কেউ নারী হয়ে ওঠে। বয়ঃসন্ধিতে পূর্ণ বিকাশ হয়। ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে একজন শিশু পুরুষ বা নারী হয়ে জন্মালেও কারোর কারোর ক্ষেত্রে হরমোনের কারসাজিতে পুরুষ শরীরে নারীত্ব প্রকট হয় এবং নারীর শরীরে পুরুষালি প্রকট হয় প্রাকৃতিকভাবেই। এঁরাই হিজড়া বা সমকামী বলে পরিচিত হয়। তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার হিসাবে বেঁচে থাকে বাকি জীবন। এঁরা সন্তানের জন্ম দিতে পারে না।
সমকামীদের আইনি নিরাপত্তা ও স্বীকৃতি
নানা কারণে স্বঘোষিত সমকামীর সংখ্যা এবং মোট জনসংখ্যার মধ্যে সমলৈঙ্গিক সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষের অনুপাত নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হল সমকামভীতিজনিত বৈষম্যের কারণে অনেক সমকামী প্রকাশ্যে তাঁদের যৌনতা স্বীকার না করা। অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও সমকামী আচরণের নিদর্শন নথিভুক্ত হয়েছে। অনেক সমকামী মানুষ স্থায়ী পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন, যদিও আদমশুমারির ফর্ম, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির আনুকূল্যে তাঁদের আত্মপ্রকাশের পথ নিরাপদ হয়েছে একেবারে সাম্প্রতিক কালে। মূল মনস্তাত্ত্বিক গঠনের দিক দিয়ে এই সম্পর্কগুলি বিপরীতকামী সম্পর্কের সমান। নথিভুক্ত ইতিহাস জুড়ে সমকামী সম্পর্ক এবং কার্যকলাপের প্রশস্তি ও নিন্দা— উভয়েরই নিদর্শন মেলে, কেবল প্রকাশের ভঙ্গিমা ও সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতিজনিত তারতম্য দেখা যায়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার অন্তর্গত বিবাহ, দত্তক গ্রহণ ও সন্তানপালন, কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার, সামরিক পরিসেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমানাধিকার এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সমকামীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যান্টি-বুলিং আইন। বর্তমানে হোমোসেক্সয়াল শব্দটি বিদ্বৎসমাজে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও ‘গে’ এবং লেসবিয়ান’ শব্দদুটি অধিক জনপ্রিয়। গে’ শব্দটির দ্বারা পুরুষ সমকামীদের বোঝানো হয় এবং নারী সমকামীদেরকে বোঝানো হয় লেসবিয়ান’ শব্দটির দ্বারা। পশ্চিমে ‘গে’ শব্দটি সমকামী অর্থে প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় সম্ভবত ১৯২০ সালে। তবে সে সময় এটির ব্যবহার একেবারেই সমকামীদের নিজস্ব গোত্রভুক্ত ছিল। মুদ্রিত প্রকাশনায় শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে। লিসা বেন নামে এক হলিউড সেক্রেটারি “Vice Versa: America’s Gayest Magazine” নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সময় সমকামিতার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘গে’ শব্দটি ব্যবহার করেন।