(৩) ট্র্যানিঃ একজন পুরুষ সে নিজেকে মেয়ে মনে করে। অপরদিকে একজন মেয়ে, সে নিজেকে পুরুষ মনে করে। সে মনে করে সে ভুল দেহে জন্মেছে। এঁরা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পড়ে। অনেকে হরমোন প্রয়োগ ও অস্ত্রপচার করে শরীরের পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গের হওয়ার চেষ্টা করে। মোদ্দা কথা এদের শরীর এক লিঙ্গের, কিন্তু মন আর-এক লিঙ্গের। যে-কোনো লিঙ্গের প্রতি এঁদের আকর্ষণ থাকতে পারে। তবে বেশির ভাগ হিজরা এই “ট্রানি’ ক্যাটাগরিতে পড়ে।
(৪) বাই (Bisexuality) : একটি ছেলে বা একটি মেয়ে, সে অপর কোনো ছেলে বা মেয়ে উভয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। একটি ছেলে যে মেয়েদের প্রেমেও পড়ে আবার ছেলেদের প্রেমেও পড়ে, যৌনকর্ম করতে সমর্থ। সানি লিওনও এজন বাইসেক্সচুয়াল পর্নস্টার।
সমকামিতা (Homosexuality) একটি যৌন অভিমুখিতা, যার দ্বারা সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোঝার। এইরূপ আকর্ষণের কারণে এক লিঙ্গের মানুষের মধ্যে যৌন-সম্পর্ক ঘটতে পারে। প্রবৃত্তি হিসাবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের যৌন প্রবণতা। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও এই শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
উভকামিতা ও বিপরীতকামিতার সাথে সমকামিতা বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদের অন্তর্গত যৌন অভিমুখিতার তিনটি প্রধান ভাগের অন্যতম বলে স্বীকৃত। ব্যক্তির মনে কেমন করে কোনো নির্দিষ্ট যৌন অভিমুখিতার সঞ্চার হয় সেই ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন জিনগত, হরমোনগত এবং পরিবেশগত কারণ একত্রে যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণের জন্য দায়ী। জীববিদ্যানির্ভর কারণগুলিকে বেশি সমর্থন করা হয়। এর অন্তর্গত হল জিন, জ্বণের ক্রমপরিণতি, এই দুই প্রভাবের মেলবন্ধন অথবা এই সব কিছুর সঙ্গে সামাজিক প্রভাবের মেলবন্ধন। যৌন-অভিমুখিতা নির্ধারণে যে সন্তানপালন বা শৈশবের অভিজ্ঞতার কোনো ভূমিকা আছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আচরণের প্রভাবক হিসাবে এক পরিবেশে থাকার ভূমিকা মহিলাদের ক্ষেত্রে নগণ্য এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে শূন্য। কেউ কেউ সমকামী যৌনাচরণকে অপ্রাকৃতিক মনে করলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে সমকামিতা মানব যৌনতার একটি সাধারণ ও প্রাকৃতিক প্রকার মাত্র এবং অন্য কোনো প্রভাবকের অস্তিত্ব ছাড়া এটি মনের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। অধিকাংশ মানুষের অভিজ্ঞতায় যৌনতার ব্যাপারে সচেতন পছন্দের কোনো ভূমিকা থাকে না। যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
একজন সন্তান সে নারী হবে না পুরুষ হবে, সে মুখ্য ভূমিকা পালন করে হরমোন। শরীরের ভিতর সব কারসাজি করে টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন। অর্থাৎ মানুষের নারী হওয়ার জন্য দায়ী ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং পুরুষ হওয়ার জন্য দায়ী টেস্টোস্টেরন হরমোন। এবার একটু দেখে নিই এই হরমোন কীভাবে কাজ করে বা প্রতারণা করে।
টেস্টোস্টেরন : টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের। মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ প্রাণীর শুক্রাশয়ে এটি উৎপন্ন হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয় এবং নারীর ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়, যদিও স্বল্প পরিমাণ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এটি প্রধান পুরুষ হরমোন, যা শুক্রাশয়ের লিডিগ কোশ (Leydig Cell) থেকে উৎপন্ন হয়। পুরুষের জন্য টেস্টোস্টেরন প্রজনন অঙ্গ যেমন শুক্রাশয় (Testis) বর্ধনের পাশাপাশি গৌণ বৈশিষ্ট্য যেমন মাংসপেশি, শরীরের লোম বৃদ্ধি করে। পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। সাধারণত এন্ড্রোজেন প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর সংবলিত টিস্যুর বৃদ্ধি সাধন করে। টেস্টোস্টেরনের প্রভাবকে লৈঙ্গিক (virilizing) এবং অ্যানাবলিক (Anabolic) এই দু-ভাগে ভাগ করা যায়।
মাংসপেশি বৃদ্ধি, হাড়ের ঘনত্ব (density) বৃদ্ধি, হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে উদ্দীপনা করা এসব অ্যানাবলিক কাজ। যৌন অঙ্গের পূর্ণতা প্রদান করা, বিশেষ করে ফিটাসের শিশ্ন এবং শুক্রথলি তৈরি এবং জন্মের পরে (বয়ঃসন্ধিকালে) কণ্ঠস্বর গাঢ় হওয়া, দাড়ি এবং বগলের চুল বৃদ্ধি এসব এন্ড্রোজেনিক কাজ। এসবের অনেক কিছুই পুরুষের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য। শৈশবের পরে এন্ড্রোজেন লেভেল বৃদ্ধির লক্ষণীয় প্রভাব দেখা যায় ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই। যেমন– বয়স্ক-টাইপ শরীরের গন্ধ, বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজায়, উচ্চতায় বৃদ্ধি, গোঁফ ও দাড়ি গজানো, পুরুষালী কণ্ঠস্বর হয়।
প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে বয়ঃসন্ধিকালীন প্রভাব দেখা যায়। ছেলেদের এই প্রভাব সচরাচর একটু দেরিতে হয়, কিন্তু মেয়েদের রক্তে মুক্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ অনেক দিন থেকে বেশি মাত্রায় থাকলে এমনটি দেখা যায়। সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া। এটি ব্রণের কারণ হতে পারে। ভগাংকুর (Clitoris) বর্ধিত হওয়া। শ্রোণীদেশের চুল নিচে উরু এবং উপরে নাভী পর্যন্ত বিস্তৃত। মুখমণ্ডলে চুল (জুল্পি, গোঁফ, দাঁড়ি)। মাথার চুল কমে যাওয়া, বুকে, বৃন্তের চারপাশে, নিতম্বের চারপাশে লোম, পায়ে পশম বা লোম, বগলে চুল, মুখের উপরস্থ ফ্যাট কমে যাওয়া, পেশি বৃদ্ধি, গাঢ় কণ্ঠস্বর, পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি, কাঁধ প্রসারিত, বুকের পাঁজর ফুলে যাওয়া, হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তি এবং বৃদ্ধি রোহিত হওয়া।