হিজড়া দুনিয়ার প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রত্যেক গুরু-মায়ের কাজের কিছু নির্দিষ্ট এলাকা থাকে। এই এলাকায় তিনিই হলেন হিজড়াদের ‘বস’। হিজড়া মহল্লায় একজন গুরু-মায়ের অধীনে কতজন শিষ্য থাকবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে যেসব শিষ্যরা মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে তাঁরা হল ‘সাধারণ শিষ্য’। একই গুরু-মায়ের সাধারণ শিষ্যেরা একে অন্যের গুরু-বোন। গুরু-মায়ের অবর্তমানে তাঁর সম্পত্তির সমান অংশ পায় শিষ্যেরা। তবে অনেক সময় মৃত্যুর আগেই গুরু-মা তাঁর সমস্ত সম্পত্তি কোনো একজন শিষ্যকে উইল করেও দিয়ে যান।
হিজড়াদের জীবনজীবিকা
সাধারণত দেখা যায় গুরু-মার তত্ত্বাবধানে থেকেই সমস্ত হিজড়াদের কাজ করতে হয়। কমন সোসাইটিতে যখন একটা মানুষ হিজড়া হয়ে ওঠার কারণে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে, ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নের মধ্যে পড়ে যায়, তখন এই গুরু-মাই যেন সাক্ষাৎ দেবদূত। এই দেবদূতরাই তাঁদের আশ্রয় দেয়, জীবনজীবিকা দেয়, মুক্তি দেয়, রক্ষা করে। গুরু-মার মতো সহনশীল ও দায়িত্ববান মানুষরা যদি না থাকতেন তাহলে সমস্ত তৃতীয় লিঙ্গদের হয়তো আত্মহননের পথ বেছে নিতে হত। যাই হোক, এই হিজড়া সোসাইটিতে নাম লেখানোর পর গুরু-মা তাঁদের জীবনজীবিকার সন্ধান দেন। জীবিকার একটা অংশ গুরু-মাকে দিতে হয়, বাকি অংশ হিজড়ার। হিজড়ার সেই অংশ থেকে একটা অংশ সন্তান হিসাবে বাবা-মাকে পাঠান।
স্বাভাবিক মানুষদের মতো হিজাড়ারাও নানাবিধ পেশায় যুক্ত থাকে, যদিও সীমিত ক্ষেত্র। দেখা যাক— (১) বাচ্চা নাচানোই এদের প্রধান জীবিকা। সাধারণত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে নবজাতকের জন্মের কথা ওরা জানতে পারে। তারপর একদিন দলবল নিয়ে হাজির হয় নবজাতকের বাড়িতে। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে শুরু হয় নাচা-গানা। বাচ্চা নাচানোর পর ওরা যে টাকাপয়সা ও অন্যান্য দ্রব্য দাবি করে, তা বেশিরভাগ সময়ই জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রাপ্য দাবি না-মিটলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে নবজাতকের পরিবারকে হেনস্থা করতে থাকে। এই ঔদ্ধত্য ও দুর্বিনীত আচরণ শেষপর্যন্ত বাক্-বিতণ্ডা এবং হাতাহাতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। বাচ্চা নাচিয়ে যে অর্থ উপার্জন হয় তার অর্ধেক গুরু-মা ও অর্ধেক শিষ্যারা পায়। অবশ্য কোনো কোনো অঞ্চলে উপার্জিত অর্থের এক-চতুর্থাংশ শিষ্যেরা পায়। তবে সব হিজড়াই যে জুলুমবাজি করে একথা বলা যায় না। আমার বাচ্চাকে যে হিজড়াদের দল নাচাতে এসেছিল তাঁরা জুলুমবাজি তো দূরের কথা, কোনো দাবি করেনি। সামর্থ্য অনুযায়ী যা দিয়েছিলাম সেটাই নিয়েছিল। (২) গুরু মায়েরা দালাল মারফৎ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সুশ্রী ‘নাগিন’ হিজড়াদের পাঠিয়ে থাকে। দালালরা এদের নিয়ে তোলে ওইসব অঞ্চলের কিছু ব্যক্তির কাছে, যারা মাস্টারজি’ নামে পরিচিত। এই মাস্টারজিদের তত্ত্বাবধানে নাগিনরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হিন্দি ফিল্মি দুনিয়ার চিত্তবিনোদক নৃত্য পরিবেশন করে। এইভাবে যে অর্থ উপার্জন হয় তার সিংহভাগই মাস্টারজির পকেটে চলে যায়। গুরু-মায়েরও দালালদের মাধ্যমে এই অর্থের একটা বড় অংশ লাভ করেন। (৩) মূল্য না দিয়ে বাজার থেকে সবজি-তরিতরকারি জোর করে তুলে নেয়। এই ‘তোলা’ তোলা ব্যবস্থা বহু বছর ধরে চলে আসছে। আজকাল দূরপাল্লার ট্রেনে ও বাসেও এঁদের তোলা তুলতে দেখা যায়। সবাই জোর করে তোলা তোলে না। অনেকেই আছেন মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তাতেই আশীর্বাদ করে। (৪) আন্তর্জাতিক চোরাচালানের সঙ্গেও হিজড়ারা যুক্ত থাকে। বিভিন্ন স্মাগলার ডনদের আন্ডারে কিছু গ্যাংলিডার আছে। সেই গ্যাংলিডারদের একটা বড়ো অংশই হিজড়া। (৫) হিজড়াদের একটা অংশ দেহ ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে অর্থ ও যৌনসুখের আশায়। সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষায়, “হিজড়াদের একমাত্র জ্বালা-যন্ত্রণা-প্রতিহিংসার বিষয় হল– নরনারীর ‘স্বাভাবিক জীবন’।” গণিকাপল্লি সত্যিকারের মেয়েদের হারিয়ে ‘পারিক’ হিজড়াদের চাহিদা বেড়েছে। কম বয়সি হিজড়ারা কলগার্ল হিসাবেও যৌনপেশায় লিপ্ত থাকে। হিজড়া মহল্লার বাইরে সমকামী অ্যাকটিভ পুরুষের কাছে হিজড়াদের বেশ চাহিদা আছে। এঁরা নারীর স্থলাভিষিক্ত পুরুষ যৌনকর্মী। মুম্বাই শহরে হিজড়াদের উপর বিশেষ অনুসন্ধান চালিয়ে ডাঃ ঈশ্বর গিলাডা এক সমীক্ষায় বলেছেন –সেখানকার প্রায় ৬০ শতাংশ হিজড়া বেঁচে থাকার তাগিদে বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে হিজড়ারা চায় তাঁরা আর পাঁচজনের কাজ করে জীবন চালায়। মানুষ তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দিক। তাঁদের বক্তব্য– “এখন যে কাজ করি তাতে হয়তো কোর্মা-পোলাও-বিরিয়ানি খেতে পারি। তখন রোজগার অল্প হলেও ডাল-ভাত আলু সেদ্ধ খাব। তবু বুঝব ন্যায্য কামাইয়ে খাই।” বাংলাদেশ সরকার হিজড়াদের ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল বটে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা হিজড়া হাতের তালু পর্যন্ত পৌঁছোয়নি।
হিজড়াদের যৌনকর্ম
আমাদের সমাজে লিঙ্গভিত্তিক দুই প্রকারের হিজড়া দেখতে পাই। যেমন– নারী হিজড়া ও পুরুষ হিজড়া। নারী হিজড়ারা পুরুষের সঙ্গেই যৌনকর্ম করতে চায়। একজন সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষা করে থাকে। সেই স্বপ্নের পুরুষটির সঙ্গে সারাজীবন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন সবার পূরণ হয় না। কিন্তু বেশিরভাগ পুরুষরাই তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করে। ভালোবাসার অভিনয় করে তাঁদের শরীর ভোগ করে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশের আপন নামের জনৈকা মেয়ে হিজড়া দাবি করেন “একজন মেয়ে পুরুষকে যতটা সুখ দিতে আমরা তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুখ দিতে পারি”। তিনি বলেন– “আমার শরীরের সব পার্টস ন্যাচারাল। আমার উপরতলা ও নীচতলা কোনোটাই কৃত্রিম নয়। আমার স্তন সিলিকনের নয়, অরিজিনাল। কারণ আমি একজন মেয়ে হিজড়া।” আপন বেশ্যাবৃত্তি করে অর্থ রোজগার করে না। দোকান কালেকশনই তাঁর মূল জীবিকা। ভালোবেসে এক রিকশাচালককে বিয়ে করেছিলেন। সেই রিকশাচালক বেশ কিছুদিন তাঁর সঙ্গে ঘরসংসার করে পালিয়ে যায়। আপন বলেন –“মানুষের যৌন চাহিদা থাকাটা স্বাভাবিক চাহিদা। আমারও আছে। কিন্তু সেই চাহিদা মেটাতে বহুগামিতায় যাব না। মনের মানুষ পেলে তাঁকে আমার সব উজাড় করে দেব।” আপনকে নিয়ে বাংলাদেশের ইউটিউবারদের কৌতূহলের সীমা অন্তহীন। ছবিতে যেমন দেখছেন ঠিক সেইভাবেই ইউটিউবারদের সামনে ক্লিভেজ প্রদর্শন করে বার্তালাপ চালিয়ে যান। এমনভাবে কেন বসেন, পুরুষদের প্রলুব্ধ করতে? এহেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন– “আমি সবসময় বড়ো গলা ব্লাউজ পরি। তা ছাড়া আমি একটু মোটাসোটা বলে খুব গরম লাগে।”
ফুলকলি হিজড়াও বাংলাদেশে থাকেন। বিয়ের স্বপ্ন দেখলেও তিনি বাস্তববাদী। উনি জানেন তাঁর বিয়ের স্বপ্ন থাকলেও কোনো পুরুষ কখনোই তাঁকে বিয়ে করবে না। তাঁর বড় কারণ হিজড়ারা কখনোই সন্তান জন্ম দিতে পারে না। সব পুরুষই বাবা হতে চায়। তাই সেক্স ভোগ করি। বিনিময়ে অর্থ নিই। হিজড়া সমাজে থাকলেও নিজের বাড়িতে বাবা-মাকে টাকা পাঠাই। ফুলকলি জানান– “আমি একটি ছেলেকে পছন্দ করতাম। একে অপরকে ভালোবাসতাম। একদিন বিয়ে কথা ভেবে ছেলেটি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা তাঁরা জানাল, আমি তো কোনোদিন সন্তান দিতে পারব না। তাহলে কেন ছেলেটার জীবন নষ্ট করব!” জীবন নিয়ে হতাশ ফুলকলি বলেন– “আমার শরীর দেখে কারোর লোভ লাগতেই পারে। কারণ আমার শরীরের মেয়েদের চেয়ে কিছু কম নেই। বাস্তবে তো আমাদের নিয়ে শোয়া আর একটা কলাগাছকে নিয়ে শোয়া একই ব্যাপার। সাধ আছে সাধ্য নেই। আমার ভিতরে আবেগ আছে, বাইরে শরীর আছে। এমন শরীর যা যৌনতা ছাড়া সৃষ্টি করতে পারে না। পুরুষ মানুষদের কাছে আমরা হলাম ‘ওয়ান টাইম ইউজড, টু টাইম ডাস্টবিন। মাঝেমাঝে মনে হয় আমার জীবনে আমি কী পেলাম। মনে হয় গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই। চাই না এই দুনিয়ায় থাকতে। আল্লাপাক যদি আমাকে পরের জন্মে নারী বা পুরুষ হিসাবে জন্ম দিত তাহলে আমি আল্লাহর কাছে অনেক হ্যাপি হতাম। কিন্তু শুনেছি আত্মহত্যা করা মহাপাপ। আমি এভাবে মরব না। ধুকে ধুকে মরব। যত দিন যাবে আমি তিলে তিলে মরব। আমি প্রতিদিন রাত হলে কাঁদি। আল্লাকে বলি, আল্লা তুমি আমাকে নিয়ে যাও।”
তানজিমা বলেন “ছোটোবেলায় ছিলাম একরকম। অর্থাৎ একজন পুরুষ। তাই আমার নাম হয়েছিল নাহিদ। কিন্তু আমি পুরুষ শরীর জন্মালেও আমার মন ছিল একজন নারীর মতো। অর্থাৎ আমি মেয়েদের মতো কাজকাম করতাম। বাড়ির মা-মাসিরা যে ধরনের কাজ করতেন, আমারও সেই কাজ করতে ভালো লাগত। ছোটোবেলায় আমি মেয়েদের মতো পুতুল খেলতাম। মেয়েদের মতো সাজগোজ করতাম। মেয়েদের মতো হাঁটাচলা করতে পছন্দ করতাম। আমার ভালো লাগত। আমার মা বলত– বাবা, এগুলো তোমার কাজ না। এগুলো মেয়েদের কাজ। ছেলেরা যে ধরনের কাজ করে যে ধরনের কাজ করে তুমি সেগুলো করো। কিন্তু আমি অপারগ ছিলাম। আমার বাবা-মা যখন স্কুলে ভর্তি করে দিল, তখন রাস্তায় অনেকে বলত ‘মাইগ্যা হাঁইটা যাচ্ছে। স্কুলে গেলে ছেলেরা বলত, “তুই তো হাফ লেডিজ। মেয়েদের কাছে গিয়ে বস’। মেয়েদের কাছে গিয়ে বসলে মেয়েরা বলত, ‘তুই তো হাফ লেডিজ। ছেলেদের কাছে গিয়ে বস’। আমাকে নিয়ে সবাই হাসি-ঠাট্টা করত। আমার খারাপ লাগত। অনেক মেয়েরা অবশ্য কাছে টেনে নিত। সবাই এরকম বলত না। একদিন রাতে আমার বাবা-মায়ের কয়েকটা কানে এলো। আমার বাবার একটা মুদির দোকান আছে। বাবা মাকে বলছেন, দোকানের লোকেরা এসে বলে ভাই আপনার তো দুটো সন্তান। আপনার বড় ছেলেটা ঠিক আছে। কিন্তু ছোটো ছেলেটা কেমন মেয়েদের মতো। হিজড়াদের মতো চলাফেরা। হিজড়াদের মতো দেখতে। হিজড়াদের মতো কণ্ঠ। এ কথা যখন বাবা মাকে বলছে, তখন দুজনেই কাঁদছিল। আমার বাবা-মায়ের কান্না শুনে আমার খারাপ লেগেছিল। আমি যত বড়ো হচ্ছিলাম আমার ভিতর ততই মেয়েলিপনাটা বেড়ে উঠছিল। আমার প্রতিবেশীরা আমাকে নিয়ে আমার বাবা-মাকে কটুকথা শোনায়। আমার দাদা মামুনকে সবসময় কষ্ট পেত আমার গজন্যে। তাঁর বন্ধুরা বলত, “তোর ভাইকে দেখতে মেয়েদের মতো। তখন আমার দাদা খুব লজ্জা পেত। আমার কাছেও খারাপ লাগত। আজকে আমার জন্যে আমার বাবা-মার চোখে জল। আমার দাদার জন্যে আমার বাবা-মার চোখে জল আসেনি। আমার জন্যে কেন আমার চোখে জল আসবে? হয়তো আমার বাবা-মা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করবে। এটা ভেবে দেখলাম আমার এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া উচিত। তখন ওখানকার মুন্নি নামে হিজড়ার কাছে জানতে পারলাম বর্তমান নান গুরু এনজি হুররামের কথা। শুনেছি উনি খুব ভালো। উনি থার্ড জেন্ডারদের আশ্রয় দেন, তাঁদেরকে বাঁচার জন্য ভালো একটা পথ দেখায়। তখন আমি মুন্নি আপার কাছ থেকে নান গুরুর ফোন নম্বরটা নিয়ে রাখি। পরে যোগাযোগ করে নিই। তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন। এক ভোররাতে বাবা মাকে একটা চিঠি লিখে আমি চলে আসি। লিখেছিলাম, ‘আমি চলে গেলাম। ভবিষ্যতে যদি বেঁচে থাকি অবশ্যই কথা হবে দেখা হবে। আমি চাই আমার নান গুরু ওরফে সজীবকে আল্লাহ হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখুক। তাঁর মতো একটা মানুষ আমার জীবনটা পুরোটাই চেঞ্জ করে দিয়েছে। সে না-থাকলে হয়তো আমি আজ এ জায়গায় থাকতাম না। সমাজে আমার একটা পরিচয় হয়েছে ভালোভাবে থাকা ভালোভাবে মানুষের সামনে যাওয়া এটা আমার হত না। সে দুই মাস আমাকে কোনো কাজ করতে দেয়নি নিখরচায় আমার ভরণপোষণ করেছে আমার নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছে। কোনো ভালো জায়গায় গেলে সে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার দুই বছর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাঁরা প্রথমে আমাকে চিনতে না পারলও পরে চিনেছে যে আমিই তাঁদের ছোটো সন্তান। কারণ আমার লুকটাই তো বদলে গেছে। বাচ্চা বকসিস ও বিয়েবাড়ি বিনোদন দিয়ে আমি যা রোজগার করি তার একটা অংশ আমার বাবা-মাকে পাঠাই সন্তান হিসাবে।
এবার তানিশা হিজড়ার কথা বলব। তানিশা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও সে ভারতে এসে আধুনিক চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে স্তনের বৃদ্ধি ঘটিয়েছেন। তানিশ জানিয়েছেন স্তন তাঁর আগে থেকেই ছিল। তবে কিঞ্চিৎ ছোটো থাকায় একটু বড়ো করিয়ে নিয়েছেন আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য। আকর্ষণ বাড়ানোর দুই চোখে লেন্সও পরেন। তানিশা বলেন, “একটা মেয়ে একটা ছেলেকে যতটা সুখ দিতে পারে আমি তাঁদের চেয়ে ১২ গুণ সুখ দিতে পারি।” জন্ম হয়েছিল পুরুষ হিসাবে। তখন নাম ছিল তানবির। নান গুরুর কাছে শিষ্যা হওয়ার পর নাম হয় তানিশা। উনিশ বর্ষীয়া লাজুক তানিশা নিজেকে মেয়ে হিজড়া বলে দাবি করেন। বাংলাদেশ থেকে দিল্লিতে এসে দেড় বছর থেকে তাঁর স্তন তৈরি করান। এই খরচ তিনি সংগ্রহ করেছেন ভারতের এক নাইট ক্লাবে ডান্স করে। কোনো পুরুষের সঙ্গে সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন। একটা মেয়ে যা দিতে পারবে তার চেয়ে অনেক বেশি দিতে পারবেন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু বাচ্চা দিতে পারবেন না, এটাই আক্ষেপ।
পুরুষ হিজড়ারা পায়ুকামের (Sodomy) মাধ্যমে যৌনতা করে। দুই সমকামী পুরুষের মধ্যে একজন মেয়েদের মতো Passive বা নিষ্ক্রিয় যৌনসঙ্গী হন। এরা সকলেই পায়ুমিলনে অভ্যস্ত। এই পায়ুপথই (Anal canal) নারীর যৌনাঙ্গের (Vagina) সমতুল মনে করে থার্ড জেন্ডারের মানুষরা। যদিও অনেক কমন জেন্ডার বা বিপরীতকামীদের মধ্যেও পায়ুমৈথুনে অভ্যস্ত। শুধু রোজগারের জন্যই এইসব হিজড়ারা সমকামী কোনো ব্যক্তির সঙ্গে পায়ুমিলনে লিপ্ত হয় না, অবদমিত যৌনক্ষুধাকে তৃপ্ত করার জন্যও এঁরা সমকামে লিপ্ত হয়। মূত্রছিদ্র দিয়ে এক ধরনের রস নিঃসরণের (Urethral Smear) মধ্য দিয়ে এঁদের যৌনসুখের চরম তৃপ্তি বা অর্গাজম অনুভূত হয়।