ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের আগে লিঙ্গ-পরিবর্তনের প্রবণতা সরকার স্বীকার করেনি। অবশেষে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সরকার লিঙ্গ-পরিবর্তনকারীদের স্বীকার করে নেয় ও তাঁদের শল্যচিকিৎসার অনুমোদন দেয়। ২০০৮ সালের মধ্যে ইরান বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি এ জাতীয় শল্যচিকিৎসা করে। একমাত্র থাইল্যান্ডই শুধু তাঁদের চেয়ে এগিয়ে থাকে। যাঁদের সাহায্য প্রয়োজন তাঁদেরকে সরকার অর্ধেক টাকা দেয় শল্যচিকিসাত্র জন্য ও তা জন্ম সনদেই লেখা থাকে। ১৯৬৩ সালে ইরানের আয়াতুল্লাহ রহোল্লাহ খোমেইনি তাঁর লেখা এক গ্রন্থে বলেন যে, লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলামবিরোধী নয়। সে সময় আয়াতুল্লাহ ছিলেন যুগান্তকারী, শাহবিরোধী বিপ্লবী এবং তাঁর এই ফতোয়া সে সময়ের রাজকীয় সরকার কোনো আমলে নেয়নি ও তাঁদের এই বিষয়ে কোনো নীতি ছিল না। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইরানে নতুন ধর্মীয় সরকার আসে যাঁরা লিঙ্গ-পরিবর্তনকে পুরুষ সমকামী ও স্ত্রী সমকামীদের একই সারিয়ে দাঁড় করিয়ে এটা নিষিদ্ধ করে ও এর জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান ঘোষণা করে। লিঙ্গ পরিবর্তনের স্বপক্ষে প্রথম প্রচারণা চালান ফেরেয়দুন নামের একজন পুরুষ, যিনি মেয়ে হয়ে যান লিঙ্গ-পরিবর্তন করে। নতুন নারী-জীবনে তিনি মারইয়াম হাতুন মোল্কারা নাম ধারণ করে। বিপ্লবের আগে তিনি মেয়ে হয়ে যান, কিন্তু তিনি শল্যচিকিৎসার কোনো চেষ্টা করেননি। পরে তিনি ধর্মীয় অনুমোদন চান। ১৯৭৫ সালে থেকে তিনি আয়াতুল্লাহ কাছে বার বার চিঠি লিখতে থাকেন যিনি ওই বিপ্লবের নেতা ছিলেন ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিপ্লবের পর তিনি চাকরিচ্যুত হন ও তাঁকে জোর করে হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হতে থাকে। তিনি কারারুদ্ধও হন। পরে তিনি মুক্তি পান তার পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ও লবিং চালাতে থাকেন নেতাদের কাছে। তিনি খোমেইনির সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন তাঁর রক্ষীরা তাঁকে থামান ও মারতে থাকেন। পরে আয়াতুল্লাহ তাঁকে এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টির বৈধতা দান করেন। এ ধরনের শল্যচিকিৎসার পক্ষে ফতোয়া হিসাবে চিঠিটিকে চিহ্নিত করা হয়।
উভলিঙ্গ মানবদের ইংরেজিতে অভিহিত করা হয় হার্মফ্রোডাইট বা ইন্টারসেক্স (আন্তঃলিঙ্গ) হিসাবে। উভলিঙ্গত্বকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়– (১) প্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (true-hermaphrodite) এবং (২) অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (pseudo-hermaphrodite)। প্রকৃত উভলিঙ্গ হচ্ছে যখন একই শরীরে স্ত্রী এবং পুরুষ যৌনাঙ্গের সহাবস্থান থাকে। তবে প্রকৃতিতে প্রকৃত উভলিঙ্গত্বের সংখ্যা খুবই কম। বেশি দেখা যায় অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব। যখন কোনো ব্যক্তি এক যৌনতার প্রাইমারি বা প্রাথমিক যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেয়, কিন্তু অপর যৌনতার সেকেন্ডারি বা গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে, তখন তাকে অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব বলে। সাধারণত ছয় ধরনের অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব দৃশ্যমান –(১) কনজেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH), (২) এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিনড্রোম (AIS), (৩) গোনাডাল ডিসজেনেসিস, (৪) হাইপোস্পাডিয়াস, (৫) টার্নার সিনড্রোম (xo) এবং (৬) ক্লাইনেফেল্টার সিনড্রোম (XXY)। উভলিঙ্গত্বের বিভিন্ন প্রপঞ্চের উদ্ভব বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
রূপান্তরকামী পুরুষ এমন এক ব্যক্তিত্ব যাকে জন্মের সময় স্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের লিঙ্গ বৈকল্পিক মানুষ (রূপান্তরকামীরা সহ) ট্রান্সজেন্ডার শব্দের অন্তর্ভুক্ত। অনেক রূপান্তরকামী পুরুষ অস্ত্রোপচার বা হরমোন রূপান্তর বা উভয়ভাবেই তাঁদের শরীর এমনভাবে পরিবর্তিত করেন যাতে তাঁদের গঠন তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে অভিন্ন হয় বা লিঙ্গ অস্বস্তিকে হ্রাস করে।
গবেষণা দেখায় গেছে যে বেশিরভাগ রূপান্তরকামী পুরুষরা বিপরীতকামী হয়ে থাকেন (যার অর্থ তাঁরা নারীদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন) মূলত রূপান্তরকামী পুরুষ শব্দটি এমন মহিলা থেকে পুরুষ রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ব্যবহার করা হত, যাঁরা হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা বা লিঙ্গ পুনর্নির্মাণ অস্ত্রোপাচার বা উভয়ই করিয়ে থাকতেন। রূপান্তরের সংজ্ঞাটিকে মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের তত্ত্বগুলি বা স্বগ্রহণযোগ্যতার পদ্ধতিগুলিকে অন্তর্গত করার মাধ্যমে প্রসারিত করা হয়েছে। যাঁরা রূপান্তরকামী হিসাবে চিহ্নিত হন তাদের অনেকে লিঙ্গ অস্বস্তির শিকার হতে পারেন।
কয়েকটি পদক্ষেপগুলিই রূপান্তরের অংশ হতে পারে। যেমন –(১) সামাজিক রূপান্তর: নিজস্ব পছন্দসই নাম এবং সর্বনাম ব্যবহার করা, লিঙ্গ উপযুক্ত পোশাক পরিধান করা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সাধারণত কর্মক্ষেত্রে/বিদ্যালয়ে স্বরূপ প্রকাশ। (২) লিঙ্গ পুনর্নির্মাণ চিকিৎসা: হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা (এইচআরটি), অথবা অস্ত্রোপাচার (এসআরএস)। (৩) আইনি বিবৃতি: দলিলগুলিতে নাম এবং (কখনও কখনও) লিঙ্গ চিহ্ন পরিবর্তন করা। অবশ্য কিছু রূপান্তরকামী পুরুষ বিপরীতকামী মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কে থাকেন, আবার কিছু রূপান্তরকামী পুরুষরা কুইয়ার মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কে থাকেন। কারণ কুইয়ার মহিলারা বেশিরভাগ সময় অন্তরঙ্গ সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির লিঙ্গ এবং যৌন শারীরবৃত্ত বিষয়ে কম চিন্তিত হন। লেসবিয়ান সম্প্রদায়ের সঙ্গে রূপান্তরকামী পুরুষদের ইতিহাস থাকতে বা বিস্তৃত লিঙ্গ বৈচিত্র্যের গ্রহণযোগ্যতার কারণে তাঁরা এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরও ভালোভাবে মেলামেশা করতে পারেন। কিছু রূপান্তরকামী পুরুষ লেসবিয়ান হিসাবে চিহ্নিত হন, যাদের “বুচ লেসবিয়ান’ বলা হয়। এটা বুঝতে পারার আগে যে তাঁরা আসলে রূপান্তরকামী।