(http://www.india.com/news/india/list-of-black-money holders-in-swiss-bank-accounts-leaked-by-wikileaks-182160/)
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ভারতের কোনো কাজে লাগবে? এত হাজার হাজার কোটি টাকা সব দেশ থেকে বিদেশে চলে গেল!! দেশ সর্বস্বান্ত হল। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি আর মুদ্রাস্ফীতির জন্য কে বা কারা দায়ী? আর একটা মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে সশ্রম কারাদণ্ড দিলে কত কোটি টাকা খরচা হয়ে যেত? জেলে আসামীদের রেখে দিলে যদি আপনার ট্যাক্সের টাকা খরচা হয়ে যায়, তাহলে তো লাখো লাখো জেলবন্দি সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের হত্যা করে ফেলা উচিত। শুধু যে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরাই জেলবন্দি থাকে তা তো নয়, বহু অভিযুক্ত বিনা বিচারে জেলখানাগুলিতে বছর বছর ধরে পচছে। টাকা লাগে না? টাকা লাগে বলে মৃত্যুদণ্ড বা হত্যা করা কোন যুক্তিতে? প্রাণদণ্ড বহাল রাখা মানবাধিকারের পরিপন্থী। এই দণ্ড বিচারক ও জুরি মহোদয়দের ব্যক্তিগত নীতিবোধ, আবেগ-অনুভূতি, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, জন্মগত সংস্কার-পরম্পরা এবং পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী প্রযুক্ত হয়। কখনো-কখনো তাঁদের ভুল সিদ্ধান্তের ফলে নির্দোষ মানুষও এমন দণ্ড পায়। কোনো-কোনো ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ সাপেক্ষে এই দণ্ড বিহিত হয়। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে খুব কম খুনিই দ্বিতীয়বার খুন করে। কিন্তু ফাঁসুড়েরা একাধিকবার খুন করে। খুন করে রাষ্ট্রের নির্দেশে। অনেকেক্ষেত্রেই এইসব ফাঁসুড়েরা হয় সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা। প্রাসঙ্গিক কারণেই, আমি এমনই এক ফাঁসুড়ের কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই, যিনি নিজেই একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। বঙ্গবন্ধুর খুনী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর যে কয়েকটা নাম খুব বেশি আলোচিত হয়েছে তার মধ্যে একটি নাম শাহজাহান। শাহজাহানের পুরো নাম কাদের মোহম্মদ শাহজাহান ভূঁইয়া। জেলখানার ভিতর তাকে ‘জল্লাদ শাহজাহান’ নামেই চেনেন সবাই। এই শাহজাহান জেলখানার ভিতরে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের অনেকগুলি বসন্ত। জল্লাদ শাহজাহান দীর্ঘ ৩৬ বছর যাবৎ কারাবন্দি অবস্থার আছেন। রাষ্ট্রের নির্দেশে এ পর্যন্ত ৪৫ জনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবে শাহজাহান ভূঁইয়া খুবই ভালো প্রকৃতির ছিলেন। পারতপক্ষে কারোর উপকার ছাড়া ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন না। তিনি প্রচণ্ড বন্ধুপাগল ছিলেন। একবার তার গ্রামে নারীঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। তাতে দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। তাকে নিয়ে গ্রামে বিচার সালিশ বসে। সেই বিচারে তাকে অপরাধী প্রমাণ করে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্রতা শুরু। তিনি অপমান সহ্য করতে না-পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নেবেন। নারীঘটিত ওই ঘটনার পর শাহজাহান ভূঁইয়া বাংলাদেশের একজন বহুল পরিচিত সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। তা ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করার পর থেকে যে-কোনো অপারেশনে তার চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাদারিপুর জেলায়। আর তা ছিল শাহজাহান ভূঁইয়ার জীবনের শেষ অপারেশন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাবে। রাতভর মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হলেও পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। শাহজাহান ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন। পথে পুলিশ তাকে আটক করে এবং তার গতিময় জীবনের সমাপ্তি ঘটে। শুরু হয় বন্দিজীবন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং ৩৪টি হত্যা মামলা। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এরপর ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে তার ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১০০ বছর মকুব হয়ে ৪৩ বছরের জেল হয়। জেল থেকে বের হওয়ার তারিখ শাহজাহানের জেল কার্ডের উপর লেখা আছে ‘ডেট অব রিলিজ ২০৩৫’।
যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন তখন তার বয়স হবে ৮৫ বছর। কী লাভ হবে তখন কারাগার থেকে বের হয়ে? এ জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন জল্লাদের খাতায় নাম লেখাতে। তিনি জানতেন একটা ফাঁসি দিলে দুই মাস চার দিনের সাজা কমে। এভাবে যদি সাজা কিছুটা কমে! জেলারের অনুমতি নিয়ে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসাবে গফরগাঁওয়ে নুরুল ইসলামকে ফাঁসি দেন। ওটাই ছিল শাহজাহানের জীবনে কারাগারে কাউকে প্রথম ফাঁসি দেওয়া। তাঁর যোগ্যতা দেখে আট বছর পর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রধান জল্লাদের আসন প্রদান করে। আর প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে প্রথম ফাঁসি দেন তিনি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের পর এখন পর্যন্ত সাড়ে চার শতাধিক মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক হাজারের বেশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন শতাধিক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়াও দেশের আরও ১৪টি কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ আছে।