কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর মনে করেন, সন্ত্রাসবাদীদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত নয়। শশী থারুর ট্যুইট করে বললেন, “এটি একটি বিলুপ্তপ্রায় শাস্তি। এইসব দোষীদের কোনও ছুটি না-দিয়ে সারাজীবন জেল বন্দি করে রাখা উচিত।” শশী বলেন, “একসময় সমাজে এই ধারণা ছিল যে কেউ কাউকে খুন করলে তাকে মৃত্যুর সাজাই দিতে হবে। আমরা এযুগে দাঁড়িয়ে কেন সেই পন্থা অবলম্বন করব? আমরা যখনই মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করি, তখন আমরা ওদের জায়গাতেই পৌঁছে যাই। ওরা খুনি। তাই বলে আমাদের উচিত নয় ওদের মতো ব্যবহার করা।” মুম্বই বিস্ফোরণে দোষী সাব্যস্ত ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পর দুঃখপ্রকাশ করে টুইট করেছিলেন শশী থারুর। সেই প্রসঙ্গে এদিন এই কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “আমি কোনও নির্দিষ্ট মামলার বিরুদ্ধে একথা বলিনি। মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিরুদ্ধে বলেছি।” থারুর জানান, ইতিমধ্যেই ১৪৩টি দেশে মৃত্যুদণ্ড উঠে গিয়েছে। অন্য ২৫ টি দেশে আইনে থাকলেও তা প্রয়োগ করা হয় না। মাত্র ৩৫ টি দেশে এই আইনের প্রয়োগ রয়েছে।
অপরাধবিজ্ঞানী ও সমাজতাত্ত্বিক পণ্ডিতরা মনে করেন, সুসংগঠিত সুস্থিত সমাজব্যবস্থায় কিছু সংখ্যক মানুষ কেন অসুস্থ-অস্বাভাবিক-অসামাজিক মানসিকতায় সমাজবিরোধী অপরাধে প্রবৃত্ত হয় এবং কঠোর শাস্তির বিধান ও দৃষ্টান্ত থাকলেও কেন অপরাধ থেকে নিবৃত্ত হয় না? মানুষের সামাজিক অস্তিত্বে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় চিন্তাভাবনা এবং নানান মানসিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া কার্যকর থাকে। এসব বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান ও অপরাধবিজ্ঞানে গবেষণা চলছে। আর্থ-সামাজিক প্রভাব, অপরাধমনস্কতা, বংশানুক্রমিক বা জিনগত প্রবণতা– মানসিক ও শারীরিক প্রক্রিয়ার দ্বারা অপরাধীর সংশোধন প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। প্রাচীন ভারতে এবং অন্যান্য দেশেও সমাজতাত্ত্বিক ও দার্শনিক আদর্শে মানুষ নামক প্রাণীটির সম্পর্কে দু-রকম ভাবনা নিবদ্ধ। মনু দণ্ডের আলোচনায় বলেছেন– দণ্ড ছাড়া সমাজ অচল। কারণ সবদিক বিচারে একেবারে খাঁটি মানুষ বিরল। “দুর্লভো হি শুচির নরঃ”।
মানুষ জৈবিক কারণে (ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও যৌনতাড়নায়) এবং সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিতাড়িত হয়ে অনেকসময় অপরাধে প্ররোচিত হয়। অর্থাৎ সামাজিক বৈষম্য এবং বিরুদ্ধ অবস্থায় অসহিষ্ণু হয়ে মানুষ অপরাধে প্রবৃত্ত হয়। সুতরাং তাঁদের মতে অপরাধ তথা অপরাধী দুই-ই সমাজের সৃষ্টি। অতএব মৃত্যুদণ্ড দিয়ে হত্যার পথ থেকে সরে গিয়ে সমাজব্যবস্থাকে সার্বজনীন কল্যাণ এবং সুসংহত আদর্শের অনুকূল করে গড়ে তুলতে পারলে সমাজ থেকে অনেক অপরাধই লুপ্ত হয়ে যাব। চাই একটা সাম্যের সমাজ। সাম্যের সমাজ তৈরি করতে পারলে অপরাধমুক্ত পৃথিবী উপহার দেওয়া সম্ভব।
পজিটিভিস্ট স্কুল, যেমন –Lombroso, Ferri, Goring অপরাধীদের আচার ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁদের মতে, প্রত্যেকটি কার্যের কারণ আছে। সমাজ-পরিবেশ মানুষের অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং অপরাধ না করার ইচ্ছাশক্তিকে দূবল করে দিতে পারে। সেইজন্যে অপরাধের সমস্ত দায় স্বাধীন ইচ্ছার অজুহাতে অপরাধীর কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া যথার্থ নয়। রাষ্ট্রকেই সেই অপরাধের নৈতিক দায়িত্ব নিতে হবে। অতএব অপরাধীর শিরচ্ছেদ করে নয়, মানবিক ব্যবহার করতে হবে।
“crime was read for the first time not as the wickedness of individuals but as an indictment society”– সুতরাং সমাজ just নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোও ‘unjust’। আমেরিকার অন্যতম মৃত্যুদণ্ডপন্থী Ernest Vanden Haag বলেছেন, প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড বৈষম্যমূলক হতে পারে, অন্যায্য হতে পারে এবং তা হতে যে-কোনো শাস্তির ক্ষেত্রেই। তাই তার দ্বারা নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার প্রশ্নটি যুক্ত করা ঠিক নয়। প্রয়োগ ও তত্ত্বের বিভাজন করা প্রয়োজন। Haag স্বীকার করে নিচ্ছেন, মৃত্যুদণ্ডের বৈষম্যমূলক প্রয়োগ হয় এবং যা অন্যায় ও অন্যায্য।
ডেভিড আব্রাহামসেন অপরাধ ও অপরাধী প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন– একটি অপরাধ কর্ম অনেকগুলো কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত শর্তের উপর নির্ভর করে। যেমন যদি আমরা অপরাধ কর্মকে ধরি ‘c’, তাহলে সেই কাজের দুটি উপাদার কাজ করে– (১) ব্যক্তির অপরাধ প্রবণতা ঝোঁক (T) এবং (২) সমাজের আর্থ-সামাজিক অবস্থা (S)। এই দুইকে আবার যদি ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা (R) দিয়ে ভাগ করা যায় তাহলে অপরাধ কর্মটি বোঝা যাবে। অর্থাৎ
C= (T+S)/R
যেটা দাঁড়াল, সেটা হল অপরাধী অপরাধ করতে উদ্যত হয়, যখন সে আর্থ সামাজিক পরিবেশের নানা চাপ কতটা সহ্য করতে পারছে বা পারছে না, তার উপর নির্ভর করে।
কিছুদিন আগে ভারতে এক সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যুদণ্ডকে কেন্দ্র করে জনৈক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বললেন, যাঁরা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন তাঁরা আসলে দেশদ্রোহী। তিনি আরও বলেছিলেন, এদের মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিলে আমাদের ট্যাক্সের টাকা থেকে পুষতে হবে কেন? আমি বলি— ট্যাক্সের টাকা? কী হয় আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে? কোথায় খরচ হয়ে যায় সেই টাকা? সুইস ব্যাঙ্কে যে হাজার হাজার কোটি কালো টাকা যেসব মহামতিরা গচ্ছিত রেখেছেন তারা কি দেশপ্রেমী? এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা তাঁদের সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত আছে সেগুলি কোন্ টাকা? দেখবেন নাকি পাসবইগুলি? এইসব তথ্য WikiLeaks-এ ফাঁস হয়েছে। (১) Ashok Gehlot (২,২০,০০০ কোটি টাকা), (২) Rahul Gandhi (১,৫৪,০০০ কোটি টাকা), (৩) Harshad Mehta (১,৩৫,৮০০ কোটি টাকা), (৪) sharad Pawar (৮২,০০০ কোটি টাকা), (৫) Ashok Chavan (৭৬,৮৮৮ কোটি টাকা), (৬) Harish Rawat (৭৫,০০০ কোটি টাকা), (৭) Sonia Gandhi (৫৬,৮০০ কোটি টাকা), (৮) Muthuvel_Karunanidhi (৩৫,০০০ কোটি টাকা), (৯) Digvijay Singh (২৮,৯০০ কোটি টাকা), (১০) Kapil sibal (২৮,০০০ কোটি টাকা), (১১) Rajeev Gandhi (১৯,৮০০ কোটি টাকা), (১২) Palaniappan Chidambaram (১৫,০৪০ কোটি টাকা), (১৩) Jayaram Jaylalitha (১৫,০০০ কোটি টাকা), (১৪) Kalanithi Maran (১৫,০০০ কোটি টাকা), (১৫) HD Kumarswamy (১৪,৫০০ কোটি টাকা), (১৬) Ahmed Patel (৯০০০ কোটি টাকা), (১৭) JM Scindia (৯০০০ কোটি টাকা), (১৮) Ketan Parekh (৮,২০০কোটি টাকা), (১৯) Andimuthu Raja (৭,৮০০ কোটি টাকা), (২০) Suresh_Kalmadi (৫,৯০০ কোটি টাকা)।