প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরও কয়েক দশক সমগ্র ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কন্ডোম ব্যবহারে সামাজিক ও আইনগত বাধা থেকেই যায়। মনস্তত্ত্ব চর্চার প্রবর্তক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এই মর্মে সমস্ত প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন যে, সেগুলির ব্যর্থতার হার ছিল সুউচ্চ। ফ্রয়েড বিশেষভাবে কন্ডোম ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। কারণ তিনি মনে করতেন কন্ডোম যৌন উত্তেজনা প্রশমিত করে দেয়। কোনো কোনো নারীবাদীও কন্ডোম সহ সব রকমের পুরুষনিয়ন্ত্রিত জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরোধিতা করতে থাকেন। ১৯২০ সালে চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ল্যামবেথ কনফারেন্সে সকল প্রকার ‘Unnatural means of conception avoidance’-এর বিরোধিতা করা হয়। লন্ডনের বিশপ আর্থার উইনিংটন-ইনগ্রাম অভিযোগ করেন যে, গলি ও উদ্যানগুলিতে বিশেষ করে সপ্তাহান্ত ও ছুটির দিনগুলিতে ব্যবহৃত কন্ডোম ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
যদিও ইউরোপীয় সামরিক বাহিনীগুলি রোগ প্রতিরোধকল্পে নিজ সদস্যদের কন্ডোম সরবরাহ করত। এমনকি যেসব দেশে সাধারণের মধ্য কন্ডোমের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল, সেইসব দেশেও সেনাবাহিনীতে কন্ডোম ব্যবহার করা যেত। ১৯২০-এর দশকে আকর্ষক নাম ও চকচকে মোড়ক ব্যবহার কন্ডোম ও সিগারেটের মতো পণ্য বিক্রির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায়িক কৌশল হয়ে ওঠে। মানপরীক্ষাও প্রচলন লাভ করে। চাপহীনতা পরীক্ষা করার জন্য অন্যান্য সব পদ্ধতির সঙ্গে কন্ডোমে হাওয়া ভরেও পরীক্ষা করা হত। ১৯২০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী কন্ডোমের বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে যায়।
১৯৩০ সালে অ্যাংলিকান চার্চের ল্যামবেথ কনফারেন্সে বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে জন্মনিরোধক ব্যবহারে অনুমোদন জানানো হয়। ১৯৩১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ চার্চেস একটি অনুরূপ বক্তব্য জানায়। রোমান ক্যাথলিক চার্চ এর প্রতিক্রিয়ায় ‘Casti Connubii’ নামে একটি এনসাইক্লিকাল (সমগ্র বিশ্বে রোমান ক্যাথলিক বিশপদের প্রেরিত পোপের চিঠি) জারি করে সকল প্রকার জন্মনিরোধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে রোমান ক্যাথলিক চার্চের কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এই চার্চ অদ্যাবধি এই অবস্থান থেকে সরে আসেনি। ১৯৩০-এর দশক থেকেই কন্ডোমের উপর থেকে আইনি বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে থাকে। তবে ফ্যাসিবাদী ইতালি ও নাৎসি জার্মানিতে কন্ডোমের উপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করা হয় (যদিও রোগ প্রতিরোধে কন্ডোমের ব্যবহার তখনও অনুমোদিত ছিল)। মহামন্দার সময় সৃক্সিডের কন্ডোম জনপ্রিয়তা অর্জন করে। স্ ডি সিমেন্ট-ডিপিং পদ্ধতিতে কন্ডোম প্রস্তুত করত। তরুক্ষীর কন্ডোমের তুলনায় এই জাতীয় কন্ডোমে দুটি অধিক সুবিধা পাওয়া যেত। প্রথমত, সিমেন্ট-ডিপড কন্ডোমের সঙ্গে তৈলমিশ্রিত লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যেত এবং দ্বিতীয়ত পুরোনো রবারের কন্ডোম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ছিল, যা সেই মন্দার বাজারে অনেকের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সুবিধাজনক প্রতিপন্ন হয়। ১৯৩০-এর দশকে মানের দিকটিতেও গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেদেশে বিক্রিত কন্ডোমের মান নিয়মিত করতে শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কন্ডোম শুধুমাত্র মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেনা জওয়ানদের মধ্যে বিতরণই করা হয় না, বরং চলচ্চিত্র, পোস্টার ও লেকচারের মাধ্যমে কন্ডোমের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হতে থাকে। ইউরোপীয় ও এশীয় সকল পক্ষের সামরিক বাহিনীগুলি যুদ্ধ চলাকালীন আগাগোড়াই সেনাবাহিনীতে কন্ডোমের সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল। এমনকি জার্মানিতে ১৯৪১ সালে সকল নাগরিকের কন্ডোম ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গেলেও সেনা জওয়ানদের কন্ডোম ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়। অন্যদিকে কন্ডোম সহজলভ্য ছিল বলে সেনারা যৌনসঙ্গম ছাড়াও অন্যান্য কাজে কন্ডোম ব্যবহার করতে শুরু করে। এই রকম কিছু ব্যবহার অদ্যাবধি প্রচলিত রয়েছে।
যুদ্ধের পরেও কন্ডোমের বিক্রি বাড়তে থাকে। ১৯৫৫-১৯৬৫ সময়কালের মধ্যে আমেরিকার প্রজননশীল জনসংখ্যার ৪২ শতাংশই জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ডোমের উপর নির্ভর করতেন। ১৯৫০-১৯৬০ সময়কালের মধ্যে ব্রিটেনে ৬০ শতাংশ বিবাহিত দম্পতি কন্ডোম ব্যবহার করতেন। ১৯৬০ সালে বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি জন্মনিয়ন্ত্রণের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় পন্থায় পরিণত হয়। কিন্তু কন্ডোম শক্তিশালী দ্বিতীয় বিকল্প হয়ে থেকেই যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশানাল ডেভেলপমেন্ট উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা সমাধানার্থে কন্ডোম ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। ১৯৭০ সালের মধ্যে ভারতে লক্ষাধিক কন্ডোম প্রতি বছর ব্যবহৃত হতে থাকে। (সাম্প্রতিক দশকগুলিতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে: ২০০৪ সালে ভারত সরকার পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে বিতরণার্থে ১.৯ বিলিয়ন কন্ডোম ক্রয় করে।)
১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে মানের ব্যাপারে কড়াকড়ি করা হয়। কন্ডোম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনি বাধাগুলিও বহুলাংশে অপসারিত হয় এই সময়। ১৯৭৮ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রথম আইনসম্মত কন্ডোম বিক্রি হয়। অবশ্য কন্ডোমের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আইনি বাধা কিছু থেকেই যায়। ১৯৫০-এর দশকের শেষভাগে আমেরিকার ন্যাশানাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রডকাস্টার্স জাতীয় টেলিভিশনে কন্ডোমের বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নীতি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল।