জিকা ভাইরাস : সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এই রোগের জন্য সাধারণত মশা দায়ী। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি বলছে, যৌন মিলনের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
নাম ছিল বুলাদি। পদবির বালাই ছিল না মাঝবয়সি মহিলার। ১০৯৭ নম্বরে ফোন করলে কথা বলতেন তিনি। এক দশক আগে টিভি থেকে শুরু করে খবরের কাগজ কিংবা রেডিয়ো অথবা হোর্ডিং—সব ধরনের গণমাধ্যমে দেখা যেত বুলাদিকে। সরকারি এই অ্যানিমেটেড চরিত্রটি এইচআইভি আর এইডস সংক্রমণ নিয়ে অবিরাম সচেতনতার বার্তা বিলিয়ে চলতেন ১৯৯৮ সাল থেকে। গণিকালয়ে পৌঁছে যদি দেখত সঙ্গে কন্ডোম নেই, তাহলে যৌনকর্মীর কাছে না-গিয়ে বলা হচ্ছিল–“চলো, এক দান লুডো খেলি”। কিন্তু গত আট বছরে আর দেখা যায়নি তাঁকে। ২০০৮ থেকে আচমকাই গায়েব হয়ে গিয়েছেন ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’-র মোড়কে পেশ করা রাজ্য এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সমিতির (স্যাক্স) ওই দূতকে।
ন্যাকো (ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন)-র এক কর্তার বক্তব্য, সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ রাজ্যে ১.২৫ লক্ষ (দেশে ২১ লক্ষ) এইচআইভি পজিটিভ রোগী থাকার কথা। কিন্তু সরকারি খতিয়ান বলছে, এ যাবৎ মাত্র ৬২ হাজার রোগী চিহ্নিত হয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে ৫৬ হাজারকে আনা গিয়েছে সরকারি চিকিৎসার (অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি বা এআরটি) আওতায়। বাদ বাকি রোগীদের চিহ্নিত করে এআরটি-র আওতায় আনাই এখন প্রধান লক্ষ্য সরকারের। ওই কর্তার কথায়—নানা ফাঁকফোকরের কারণেই সব রোগীর নাগাল এখনও পাওয়া যায়নি। সেই ফাঁকগুলো মেরামত করে রোগী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াগুলো আরও জোরদার করতে চায় সরকার। হয়তো সেই কাজেই লাগানো হবে বুলাদিকে। স্যাক্সের প্রকল্প অধিকর্তা পৃথা জানান, ২০৩০-এর মধ্যে দুনিয়াকে এইচআইভি মুক্ত করার যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেইমতো সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য হল মা-বাবার শরীর থেকে সন্তানের রক্তে এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকানোনা। কিন্তু নিজেরাই এইচআইভি সংক্রামিত, সেই তথ্যই যদি মা-বাবা নিজেরা না–জানেন, তা হলে সন্তানের শরীরে সংক্রমণ ঠেকানো মুশকিল। তাই যাঁদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরা যাতে আইসিটিসি-তে (ইন্টিগ্রেটেড টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং সেন্টার) নিজে থেকে গিয়েই রক্তপরীক্ষা করান, তার প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। অবশেষে কন্ডোমের প্রবেশ মানুষের যৌনজীবনে এনে দিল উদ্দাম বিলব। কন্ডোম (Condom) প্রধানত যৌনসঙ্গমকালে ব্যবহৃত এক প্রকার জন্মনিরোধক বস্তু। এটি মূলত গর্ভধারণ ও গনোরিয়া, সিফিলিস ও এইচআইভির মতো যৌনরোগের প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি পুরুষদের উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরানো হয়। রেতঃস্থলনের পর কন্ডোম যৌনসঙ্গীর শরীরে বীর্য প্রবেশে বাধা দেয়। এর ফলে সরাসরি যোনি ও লিঙ্গের চামড়ার সংস্পর্শ হয় না। কন্ডোমের উপাদান দুই শরীরের মাঝে সূক্ষ দেয়াল তুলে ধরে।
আধুনিক যুগে কন্ডোম মূলত তরুক্ষীর থেকে প্রস্তুত করা হয়। তবে কনডম তৈরি ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিআরথিন, পলিইসোথ্রিন বা ল্যাম্ব ইনসেসটাইনও ব্যবহৃত হয়। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসাবেই কন্ডোম আবিষ্কারের প্রধান উদ্দেশ্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে যা ভয়ংকর যৌনরোগ প্রতিরোধের জন্য আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। কন্ডোম অত্যন্ত সুলভ, সহজে ব্যবহার্য, কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ও যৌনব্যাধি প্রতিরোধে সর্বাধিক কার্যকর।
কন্ডোম প্রায় ৪০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই কন্ডোম ব্যবহার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় জন্মনিরোধ পদ্ধতি। আধুনিক সমাজে কন্ডোমের ব্যবহার ব্যাপক মান্যতা লাভ করেছে। প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে কন্ডোমের ব্যবহার প্রচলিত ছিল কি না তা নিয়ে পুরাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ যথেষ্ট। প্রাচীন মিশর, গ্রিস ও রোমে গর্ভাধান রোধ নারীর দায়িত্ব হিসাবে পরিগণিত হত। এই সব দেশ থেকে সে সমস্ত সুলিখিত প্রাচীন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিবরণীগুলি পাওয়া গেছে, সেগুলিতে মূলত নারী-নিয়ন্ত্রিত গর্ভনিরোধ বস্তুগুলিরই উল্লেখ রয়েছে। পঞ্চদশ শতাব্দীর আগে কিছু শিশ্নাগ্র কনডমের ব্যবহারের কথা জানা যায়। এগুলি প্রধানত পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগকে ঢেকে রাখত। কন্ডোমের প্রচলন মূলত সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের মধ্যেই পরিলক্ষিত হত। চিনে শিশ্নাগ্র কন্ডোম তৈরি হত তৈলনিষিক্ত রেশমি কাগজ বা ভেড়ার অন্ত্র দিয়ে। জাপানে কন্ডোম তৈরি হত কচ্ছপের খোল বা জন্তুর শিং দিয়ে।
ষোড়শ শতাব্দীর ইতালিতে গ্যাব্রিয়েলে ফ্যালোপিও সিফিলিস রোগের উপর একখানি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন। সেই সময়কার লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ১৪৯০-এর দশকে সিফিলিস একটি ভয়ানক রোগের আকারে প্রকট হয়েছিল। রোগাক্রান্ত হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটত। ফ্যালোপিওর গবেষণা গ্রন্থটি কন্ডোম ব্যবহারের প্রাচীনতম অবিতর্কিত বিবরণ। এই বর্ণনা অনুযায়ী, একটি ক্ষৌমবস্তুনির্মিত খাপকে একটি রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হত এবং ব্যবহারের পূর্বে সেটি শুকিয়ে নেওয়া হত। বর্ণনা অনুযায়ী এক কাপড়টি কেবলমাত্র শিশ্নাগ্রভাগকেই ঢেকে রাখত এবং একটি রিবন দিয়ে এটিকে বেঁধে রাখা হত। ফ্যালোপিও দাবি করেন, ক্ষৌমবস্ত্রাকার খাপের একটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার ঘটিয়ে দেখেছেন যে এর মাধ্যমে সিফিলিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।