সিফিলিস : গনোরিয়ায় মতো সিফিলিসের জীবাণুও মা থেকে নবজাতকের দেহে ঢুকতে পারে। চিকিৎসা না করালে সিফিলিস থেকে দীর্ঘমেয়াদে জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সিডিসি। সিফিলিসের লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে যন্ত্রণা ও চুলকানিবিহীন ক্ষত হতে পারে, দ্বিতীয় পর্যায়ে মুখ, যোনি কিংবা মলদ্বারে ব্যাশ বা ক্ষত হতে পারে। শেষ পর্যায়ে প্যারালিসিস থেকে অন্ধত্ব, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
জেনিটাল হার্পিস : যৌনকাজে সক্রিয় যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্তদের অনেকের শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায় না। অর্থাৎ কারও শরীরে এই রোগের লক্ষণ না-থাকলেও তিনি সঙ্গীর দেহে এটি ছড়িয়ে দিতে পারেন। লক্ষণগুলো হল–যৌনাঙ্গ, মলদ্বার ও মুখে একটি বা দুটি ফোস্কা পড়তে পারে। সেগুলো ভেঙে গিয়ে ব্যথা হতে পারে। সেই ব্যথা সারতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
এইচআইভি/এইডস : যাঁদের সিফিলিস, গনোরিয়া ও হার্পিস আছে তাঁদের ভবিষ্যতে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ রোগগুলো একইরকম যৌন আচরণের জন্য হয়ে থাকে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম দুটি কারণ হল কন্ডোম ছাড়া যৌনমিলন এবং একাধিক ও অপরিচিত কারও সঙ্গে মিলন। তবে এইচআইভিতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি বা কোনো এইডস রোগীর রক্ত আপনার শরীরে ঢুকলেও এই রোগ হয়। এইডস (Acquired Immuno Deficiency Syndrome) বা অর্জিত প্রতিরক্ষার অভাবজনিত রোগলক্ষণসমষ্টি হচ্ছে এইচ.আই.ভি. (Human Immunodeficiency Virus) তথা মানব প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস’ নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগলক্ষণসমষ্টি, যা মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা তথা অনাক্রম্যতা হ্রাস করে। এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষপর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘটাতে পারে।
এইচ.আই.ভি. সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই সর্বদা এইডস হয় না। শুরুতে ক্ষেত্রবিশেষে ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এরপর বহুদিন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এইচ.আই.ভি. ভাইরাসের আক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র বা অনাক্রম্যতন্ত্র দুর্বল হতে থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ সংক্রামক ব্যাধি যেমন যক্ষ্মায় যেমন আক্রান্ত হতে পারেন, তেমনই সুযোগসন্ধানী সংক্রামক ব্যাধি এবং অবুদ বা টিউমারের শিকার হতে পারেন, যেগুলি কেবলমাত্র সেসব লোকেরই হয়, যাঁদের দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র (বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) কাজ করে না। এইচ.আই.ভি. সংক্রমণের এই পর্যায়টিকেই এইডস বলা হয়। এই পর্যায়ে প্রায়শই রোগীর অনিচ্ছাকৃতভাবে ও অত্যধিক পরিমাণে ওজন হ্রাস পায়।
যেহেতু একবার সংক্রামক এইচ.আই.ভি. শরীরে ঢুকলে তাকে পুরোপুরি দূর করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, তাই এইচ.আই.ভি. সংক্রমণ হলে এইডস প্রায় অনিবার্য। তবে বিনা চিকিৎসায় এইডস পর্যায়ে পৌঁছোতে যদি লাগে গড়ে দশ বছর, তবে চিকিৎসার দ্বারা তাকে আরও কিছু বছর পিছিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ‘HAART নামে এইডসের যে সমন্বিত ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, তা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ লোক এইচ.আই.ভি দ্বারা আক্রান্ত ছিল এবং ওই বছর এইডসের কারণে ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। তবে ২০১৬ সালে ২০১৫ সালের তুলনায় নতুন এইচআইভি সংক্রমণের সংখ্যা ৩ লক্ষ কম ছিল। বেশির ভাগ এইডস আক্রান্ত রোগীই সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাতে বাস করে ১৯৮০-র দশকের শুরুতে রোগটি চিহ্নিত করার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বব্যাপী এইডস রোগে মোট আনুমানিক ৩ কোটি ৫০ লক্ষ লোক মারা গেছে। এইডসকে বর্তমানে একটি মহামারী ব্যাধি হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বিশ্বের বিশাল এক আয়তন জুড়ে বিদ্যমান এবং যা সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এইচআইভি ভাইরাসটি সম্ভবত ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে বা বিংশ শতকের শুরুর দিকে পশ্চিম-মধ্য আফ্রিকাতে উৎপত্তিলাভ করে। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি সর্বপ্রথম রোগটি শনাক্ত করে এবং তার পরে ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে এই রোগের কারণ হিসেবে এইচআইভি ভাইরাসকে শনাক্ত করা হয়। সিডিসির (রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র, যুক্তরাষ্ট্র সরকার) ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এইচ.আই.ভি. আক্রান্তের ৭০ শতাংশই সমকামী এবং উভকামী পুরুষ।
ক্লেমিডিয়া : পুরুষ ও নারীর উভয়েরই এটি হতে পারে। নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতায় স্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে ক্লেমিডিয়া। এই রোগের একবার চিকিৎসা হলেও পরবর্তীতে আবারও এটি হতে পারে। এমনটি হল নারীদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক অথবা অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মূত্রত্যাগের সময় জ্বলাপোড়া হতে পারে। পুরুষের বেলাতেও প্রায় একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।
শ্যানক্রয়েড : শ্যানক্রয়েডের ফলে যৌনাঙ্গে যন্ত্রণাদায়ক ঘা দেখা দেয়। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি বেশি দেখা যায়। এর সঙ্গে যৌনকর্মীদের একটি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ দেখা গেছে যাদের শ্যানক্রয়েড হয়েছে তাঁরা কোকেন ব্যবহার করেছেন কিংবা গণিকালয়ে গেছেন। উপযুক্ত চিকিৎসা না-হলে রোগাক্রান্তদের পুরুষাঙ্গের ছিদ্র সরু হয়ে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।