যৌনকর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশেও অনেক কাজ হচ্ছে। যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা, জীবন ও জীবিকার অধিকার বিষয়ে এক গণশুনানিতে যৌনকর্মীদের জীবন ও জীবিকার অধিকার প্রশ্নে রাষ্ট্রকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তাঁদের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল’ না হয়ে সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ চারটি সংগঠন এই গণ-শুনানির আয়োজন করে। আয়োজক হিসাবে ছিল মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন সংহতি, সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক ও সোয়াসা। রাষ্ট্রকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত করে মোট ১০টি সিদ্ধান্ত ও দুটি সুপারিশ করা হয়েছে গণশুনানিতে।
মিজানুর রহমান বলেছেন–“যে-কোনো ধরনের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করুন। প্রয়োজনে কমিশন আইনি লড়াইয়ে আপনাদের থাকবে।” সাতজন যৌনকর্মীর অভিজ্ঞতা শোনার পর তিনি বলেছেন–“এ ধরনের অনুষ্ঠানে বিচারকের ভূমিকায় এসে আমি মর্মাহত, লজ্জিত। এনাফ ইজ এনাফ। রাষ্ট্র তুমি সংযত হও।” সারা দেশ থেকে আসা যৌনকর্মী ও যৌনকর্মীদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলোর উপস্থিতিতে এই গণশুনানিতে পুনর্বাসন সমস্যা, পুলিশি হামলা আর পাড়া-মহল্লার সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও হয়রানি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন যৌনকর্মীরা। তাঁরা বলেছিলেন–“পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার শিকার হয় তাঁরা। কোথাও বিচার চাইতেও যেতে পারে না। উলটে তাঁদেরকেই চুরি, ছিনতাই, পাচার সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়। ভোটের অধিকার যখন আছে, তখন রাষ্ট্র আমাদের মৌলিক অধিকার পূরণে বাধ্য।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বিচারক হিসাবে যে সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান, তা হল–পুনর্বাসন না-করা পর্যন্ত পেশা হিসাবে যৌনকর্মকে স্বীকৃতি দিতে হবে, পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে, যৌনপল্লির পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, আদালত ও বিচারকদের আরও সংবেদনশীল হতে হবে। যাঁরা নির্বাচনে দাঁড়ান তাঁরা প্রতিনিধি হিসাবে যেন যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় মনোযোগী হন। পাশাপাশি যৌনকর্মীদের আইনি সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন। করতে হবে।”
যৌনপেশায় কিছু দিককে আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’। আর এমন প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সরব হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। ইরান চুক্তি থেকে শুরু করে অনেক চলমান ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ মূল বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না-হয়েই অন্যের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে নিজের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে তাই এই সংক্রান্ত প্রস্তাবিত নীতির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অ্যামনেস্টি মনে করে–শরীর বিক্রির পেশায় যেসব মেয়েরা যুক্ত তাঁদের অধিকার রক্ষা রাষ্ট্র সব ধরনের দায়িত্ব নিক। এঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবে ‘অপরাধী’ বলে চিহ্নিত করা বন্ধ করুক।
তবে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত শোনা যাচ্ছে। কেউ অ্যামনেস্টির এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে যৌনকর্মীদের অবস্থার উন্নতির আশা করছেন। কেউ এই নীতির চরম বিরোধিতা করছেন। সেইসঙ্গে আছেন সনিয়া ডলিনসেকের মতো কিছু মানুষ, যাঁরা মনে করেন, অ্যামনেস্টি যৌনকর্মীদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত ভালো কাজ করেছে। যৌনকর্মীদের কাজ সম্পর্কে অ্যামনেস্টির নীতির পক্ষে অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন। কারমেন অ্যামিসিটিয়ে মনে করেন, যৌনকর্মীদের জন্য এটা ভালো দিন। কিউটক্যাট্রিয়য়ানা নামের আড়ালে এক টুইটার ব্যবহারকারী মনে করেন, বিরোধীরা এই প্রস্তাবের মর্ম বুঝতে পারছেন না। এর সাহায্যে নিপীড়ন, হিংসা, মানবপাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এইলিন স্মার্ট অভিযোগ করেছেন, অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যামনেস্টির নীতির ভুল মূল্যায়ন ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাঁর মতে, অবিলম্বে তা বন্ধ করা উচিত। ডনিয়া ক্রিস্টিন আবেগে আপ্লুত হয়ে অ্যামনেস্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বিরোধীরাও যথেষ্ট সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। রেচেল মোরান নামের এক প্রাক্তন যৌনকর্মী, লেখক ও ব্লগার নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে এই ভয়াবহ জগত সম্পর্কে নিজের সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, অ্যামনেস্টি তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি সমর্থন জানানোর ফলে যৌন ব্যাবসা ও মানব পাচারের কবল থেকে উদ্ধার পাওয়া অসংখ্য মানুষ তাঁর কাছে অশ্রুপাত করছেন। নারীবাদী সংগঠন ‘ফেমেন’-এর সুইডেন শাখা অ্যামনেস্টির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে লিখেছেন—“যেসব মানুষদের টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে, এখন তাঁদের অধিকার যৌনপেশার দালালদের চেয়েও কমে গেল। অ্যামনেস্টি যৌন ক্রেতা ও দালালদের ‘অ্যামনেস্টি’ ক্ষমা করে দিল। প্রায় একই সুরে অভিযোগ করেছেন আন্দ্রেয়াস পেটারসন। লার্স ওলি আবেগের সঙ্গে লিখেছেন—“বিদায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল। নারী অধিকারের জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তোমাদের সংগঠনের উপর আর আস্থা রইল না।”