স্টুয়ার্টের মতে, বিবর্তনের ধারার পুরুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে, শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই কম-বেশি অবিশ্বস্ত হওয়ার প্রবণতা রয়ে গেছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, ওই ২৭ ধরনের পুরুষের মধ্যে কোনো কোনো ধরনের পুরুষের অবিশ্বস্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। সুতরাং সম্পর্কে জড়ানোর আগে নারীদের ভাবতে হবে–কোন্ ধরনের পুরুষের সঙ্গে তিনি যাচ্ছেন। স্টুয়ার্টের এই ২৭ ধরনের পুরুষের মধ্যে একটি হল সুযোগসন্ধানী। অর্থাৎ, কারও সঙ্গে শরীরী প্রেমের কোনো সুযোগই এঁরা ছাড়তে চান না। পরিণতি কী হবে–সেটাও তাঁরা ভেবে দেখেন না। আর-এক জাতের পুরুষ আছে, যাঁরা দুর্বলতার সুযোগ নেন। এঁরা সবসময় পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে নিতে চান এবং নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পরিবারের সদস্য, বন্ধু, স্ত্রী বা সঙ্গিনীর কাছ থেকে দুর্বলতাকে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করেন। স্টুয়ার্ট অবশ্য বলেছেন, সমীক্ষায় তিনি বহু পুরুষ দেখেছেন, যাঁরা এখনও সঙ্গিনীর প্রতি সৎ, বিশ্বস্ত, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন।
আমাদের ধনতান্ত্রিক ভোগবাদী দুনিয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ক্রমেই পেতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। তাই প্রাপ্তির কোটা পুরোপুরি পুরণ না-হলেই মনের মধ্যে জমে ওঠা ক্ষোভের বিক্ষুব্ধ বাষ্প অসহিষ্ণু করে তোলে আমাদের। সেই অসহিষ্ণুতার অস্থিরতায় খেয়ালই থাকে না যে, আমার দেওয়ার কোটায় আর একজনের অপ্রাপ্তির ব্যথা বেদনা রয়ে গেল কি না।
বহুগামিতা পুরুষজাতির একচেটিয়া অধিকার নয়। বহুগামিতা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান আবেদন। নারীর প্রকাশ কম, কারণ সামাজিক ও ধর্মীয় নিগড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। পুরুষের ক্ষেত্রেও সামাজিক ও ধর্মীয় নিগড় থাকলেও পুরুষ সেটা অনেক ক্ষেত্রে জয় করতে পেরেছে। জয় করেছে ঠিকই, তাই সবাইকে বলে বেড়ানোর সাহস পুরুষের নেই। কারণ বহুগামী নারীদের যেমন সমাজ ঘৃণা করে, তেমনি বহুগামী পুরুষকেও সমাজ ঘৃণা করে।
যাই হোক, আমরা এখন দেখব পুরুষরা কেন যৌনকর্মীর কাছে যায়। নারী গবেষক জুলি বিনডেল ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত পুরুষদেরদের যৌনকর্মীর কাছে যাওয়া কারণ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন। ‘The Guardian’ প্রকাশিত “Why men use prostitutes” প্রবন্ধে লিখেছেন—(১) শৈশবের নিঃসঙ্গতা এবং আত্মীয়স্বজন বিশেষ করে মহিলাদের সঙ্গে সেভাবে মিশতে পারার কৌশল না-জানার কারণেও ভিতরে ভিতরে বহুদিনের জিইয়ে রাখা কষ্ট থেকে অনেকেই যৌনকর্মীদের কাছে যায়। এ ব্যাপারে লেখক বলেন–“একজন আমাকে তাঁর শৈশবের নির্মমতা, অবহেলা এবং অন্যদের সঙ্গে বিশেষ করে মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করার ব্যাপায়ে অক্ষমতার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করা অ্যালেক্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি একজন যৌনকর্মীর সঙ্গে সহবাস করে তেমন কিছুই পান না তাঁর শুধু শূন্যতায় অনুভুত হয়। কিন্তু তিনি জানেন কীভাবে একজন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হয় তাঁর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে হয়। (২) গণিকাবৃত্তি রোধে তেমন আইন না থাকা বা থাকলেও তাঁর সঠিক বাস্তবায়ন না থাকা টাকার বিনিময়ে সেক্সকর্ম করা অনেক দেশেই আইনের চোখে দোষনীয়। এটাকে খারাপ। চোখে দেখা হয় বিভিন্ন দেশে। গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে মাত্র ৬ % পুরুষ টাকার বিনিময়ে যৌনকর্মী ব্যবহারের কারণে গ্রেপ্তার হয়। এই কাজ না করার ব্যাপারে সে ধরনের আইন এবং আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নের সুষ্ঠু পদক্ষেপ না-থাকার কারণেই অধিকাংশ পুরুষ এসব কাজ করছে বলে গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়। এই গবেষণা চলাকালে সাক্ষাৎকার দেওয়া একজন বলেন—“যদি কোনো নেগেটিভ কিছু ঘটত, তাহলে আপনাকে পুনরায় বিবেচনা করতে শেখাত। আইনটি এখন বাস্তবায়ন হয়নি। এর ফলাফল হিসাবে যদি নেগেটিভ কিছু ঘটতে থাকে তাহলে তা অবশ্যই আমাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখবে।” গবেষণায় সাক্ষাৎকার দেওয়া অন্য আর-একজন বলেন—“যদি এই কাজ করার জন্য আমাকে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হত তাহলে আমি কখনোই এ কাজ করতাম না। এই দেশে পুলিশরা পুরুষদের সঙ্গে সুন্দর আচরণই করে যৌনকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হবার পরও।” (৩) স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে বোঝাঁপড়ার অভাব থেকে অনেক পুরুষই মহিলাদের সঙ্গে একটি সত্যিকারের সম্পর্ক তৈরি করতে চায় এবং ব্যর্থ হয়ে প্রায় সময়ই হতাশ হয়ে পড়ে। আর সে সম্পর্কের বিকাশ সাধন করতে পারে না। এ ব্যাপারে গবেষণায় সাক্ষাৎকার দেওয়া একজন বলেন—“এটা শুধুমাত্র একটা যৌনকর্ম, কোনো আবেগ-প্রেম নয়। এটা গ্রহণ করতে হয় প্রস্তুত থাকতে হবে, নয়তো একেবারে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁরা স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ডের মতো নয়।” এই গবেষণায় বব নামক একজন আরও পরিষ্কারভাবে বলেন যে, তাঁরা টাকার বিনিময়ে যৌনকর্মীর সঙ্গে সহবাস করে, যাতে তাঁরা নিজেকে এনকাউন্টার থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বব বলেন—“দেখুন, পুরুষরা নারীকে (যৌনকর্মী) টাকা দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করে, কারণ এক্ষেত্রে সে যা খুশি তাই করতে পারে বা যাকে খুশি ব্যবহার করতে পারে। অধিকাংশ পুরুষই যৌনকর্মীদের কাছে এজন্য যায় যে, তারা তাদের সাথে এমন আচরণও করতে পারে বা পেতে পারে যা সত্যিকারের ভালো মহিলারা পছন্দ বা সহ্য করতে পারবে না।” (৪) অন্য নারীদের ধর্ষিতা হওয়া থেকে বাঁচাতে গবেষক জুলি বিনডেল বলেন, এই গবেষণার পর একটা আশ্চর্যজনক ফলাফল পাই যে, অধিকাংশ পুরুষই মনে করেন যে তাঁরা যদি টাকার বিনিময়ে যৌনকর্মীর কাছে না-যেত, তাহলে তাদের যৌন তাড়না মেটাতে প্রয়োজনে তাঁদেরকে অন্য নারীদের ধর্ষণ করতে হত। এমনকি একজন আমাকে বলেই ফেললেন যে—“কখনও তুমি কাউকে ধর্ষণ করতে পারো, কাজেই তাঁর পরিবর্তে যৌনকর্মীর কাছে যাওয়া ভালো।” গবেষক জুলি বিনডেল তাঁর আর্টিকেলে এই বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেন—“সেক্সের জন্য মরিয়া হয়ে উঠা একজন পুরুষ যে এই খারাপভাবেও যৌনকর্ম সাধন করতে চায়, তাঁর যৌনকর্ম করার ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা–হলে সে কাউকে ধর্ষণ করতে পারে।” জুলি বিনডেল বলেছেন, “অভিজ্ঞতা থেকে আমার একটা বিষয় মনে হয়েছে যে, প্রত্যেক পুরুষই একজন পটেনশিয়াল ধর্ষক।” (৫) আর-এক শ্রেণির পুরুষ আছে, তাঁরাও যৌনপল্লিতে যান। তাঁরা হলেন ইমপোটেন্ট পুরুষ, যৌন অক্ষম পুরুষ। কেন-না যৌনপল্লিতে পৌঁছে গিয়ে যৌনকর্মীকে ন্যায্য মূল্য চুকিয়ে দিলেই একটা নারীর নগ্ন শরীর পেয়ে যায় সে। শরীর না উঠলে কী হয়, মন তো নারী-শরীর চায়। যৌনপল্লির নারীকে যৌনসুখ দেওয়ার কোনো দায় থাকে না কোনো পুরুষেরই। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয় না। যৌনকর্মীদের টাকা দিলেই হল। টাকা পেলে যৌনকর্মীদেরও কোনো দাবি নেই, দাবি থাকেও না। ভালোবাসার নারীকে যৌনসুখ দিতেই হয়। ধর্মপত্নীকে যৌনসুখ দিতেই হয়। তাঁরা মানবে কেন? কিন্তু ইমপোটেন্ট পুরুষের তো সেটা দিতে অপারগ। ইমপোটেন্ট যুবকরা যেমন যৌনপল্লিতে যায়, তেমনি লোল-চামড়ার দাঁত ফোকলা যৌন-অক্ষম বৃদ্ধরাও যৌনপল্লিতে যায়। চতুর বৃদ্ধরা অবশ্য যৌনবর্ধক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল সেবন করে যায়, যাতে দণ্ড সোজা করে যৌনকর্মটা করে বাহবা দেখাতে পারে।