ক্যাথরিনা এবং তাঁর ছেলেবন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, নিজেদের সম্পর্কের বাইরে সাময়িক যৌন সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে তাঁরা একে অপরকে বাধা দেবেন না। ক্যাথরিন অবশ্য জানেন, এভাবে যে পরীক্ষা তাঁরা করেন, সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটা কোনো মজার ব্যাপার নয়। তিনি বলেন, “আমার কাছে এই উন্মুক্ত সম্পর্কের অর্থ এই নয় যে, আমি যা খুশি তা-ই করতে পারব।’’ যেহেতু তাঁদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আর কোনো সীমান্ত নেই, তাই তাঁকে নিজের কৃতকর্মের জন্য দায় নিতে হয়। ফলে তিনি এমন কিছু করতে পারেন না, যা তাঁর নিজের এবং তাঁদের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে পরকীয়াও একটি সম্পর্ককে উন্মুক্ত করে দেয়। তবে সেক্ষেত্রে যে এভাবে প্রতারণা করছেন, তাঁর সঙ্গী বা সঙ্গিনী বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে চান না। “পরকীয়া বা উন্মুক্ত সম্পর্ক যা-ই হোক না কেন, যুগলের মধ্যে সেটা সংকট তৈরি করতে পারে। আবার এই সংকটের কারণে একটি সম্পর্ক বৃদ্ধিও পেতে পারে।”—বলেন ভোঙ্ক।
সেক্স থেরাপিস্টের কথা হচ্ছে, “একগামিতাই যেমন সম্পর্কের একমাত্র অর্থবহ ধারণা নয়, আবার একগামিতার ধারণা ব্যর্থও হয়নি। ফলে একটি যুগল কোন্ ধরনের সম্পর্ক গড়বেন, সেটা দিনের শেষে। তাঁদেরই নির্ধারণ করতে হবে, অন্য কেউ সেটা ঠিক করে দিতে পারবে না। কেননা, যৌনতা অবশ্যই একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।” বলেন ভোলফ।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মাত্র ৩ % প্রাণী সামাজিকভাবে একগামী। ১০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে তিন প্রজাতির প্রাণী মাত্র ১ জন সঙ্গী নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে। মানুষ যথারীতি সেই ৩ শতাংশের মধ্যে পড়ে না। পৃথিবীতে এই মুহূর্তে নারী-পুরুষের সেক্স রেশিও ১ : ১। অর্থাৎ প্রতি ১ জন নারীর বিপরীতে ১ জন পুরুষ। ঠিক এই মুহূর্তে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যায় হিসাব করলে ১০১ জন পুরুষের বিপরীতে নারী আছে ১০০ জন।
বহুগামিতা অনেক রকমের আছে, কোনটা স্রেফ মানসিক এবং কোনটা আবার দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে বাস্তব জীবনে। মানসিক বহুগামিতায় পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আক্রান্ত। এমন কোনো মানুষ খুঁজলে পাওয়া যাবে না, যিনি নিজের সঙ্গী ব্যতীত অন্য নারী বা পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বা যৌনতার কথা ভাবেননি, যদি সে যৌনক্ষমতারহিত না হন। বাস্তব জীবনের চারপাশে থাকা মানুষ তো বটেই, এমনকি নায়ক-নায়িকাদের নিয়েও কাজ করে বেডরুম-ফ্যান্টাসি। হ্যাঁ, বিবাহিত মানুষদের মাঝেই বরং এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে বাস্তবের বহুগামিতা থেকেই জন্ম নেয় সম্পর্কের প্রতারণা, বিবাহে পরকীয়া, মন আর সংসারের ভাঙন। কেউ কেউ এই বহুগামিতায় ধরা পড়েন, কেউ পড়েন না। তবে এমন কাজ করার মতো মানুষ সমাজে ভুরি ভুরি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীতে কেন প্রায় প্রতিটি মানুষই বহুগামী কিংবা বহুগামিতার কথা ভাবেন? জবাব লুকিয়ে আছে হয়তো আমাদের জীবনেই–(১) বহুগামিতার প্রথম ও প্রধান কারণটিই হচ্ছে যৌন আকর্ষণ। ভিন্ন ভিন্ন যৌনসঙ্গী পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা থেকেই মানুষ বহুগামিতায় লিপ্ত হন। অনেকেই আছেন যাঁরা বাস্তবজীবনে লিপ্ত হতে না-পারলেও মানসিকভাবে লিপ্ত হন। পৃথিবীতে পর্নোগ্রাফির বাজার সুলভ হওয়ায় এটাও একটা কারণ। (২) জীবনের পরিস্থিতিও একটা বড়ো কারণ বহুগামিতার পিছনে। অনেক কিছুই ঘটে আমাদের জীবনে, যার ফলে একাধিক সম্পর্কে জড়িত হতে বাধ্য হয়ে যায় মানুষ। প্রেম হোক বা দাম্পত্য, একটি সম্পর্ক চিরকাল নাই-ই টিকতে পারে, আর সেটাই বেশি স্বাভাবিক। যারা সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেন, তাঁরা আসলে সৌভাগ্যবান। (৩) বহুগামিতার আর-একটা বড়ো কারণ হচ্ছে লিঙ্গ পার্থক্য। স্বভাবতই নারী ও পুরুষ উভয়কে প্রকৃতি বা জিনগতভাবে পৃথকভাবে তৈরি করেছে। পুরুষ যেখানে সর্বদা চায় উন্মুক্ত, দায়িত্বহীন জীবন। তেমনি বেশিরভাগ নারী ঠিক তার বিপরীতে চায় সংসার, সন্তান ও নিরাপত্তা। এই ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার কারণে নারী-পুরুষের বনিবনা না-হওয়ার বিষয়টিও চিরন্তন। ফলে বহুগামিতায় ঝুঁকে পড়ে। (৪) সম্পর্ক একঘেঁয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও বহুগামিতার দিকে মানুষকে ঠেলে দেয়। একই সম্পর্কে দীর্ঘদিন চলার পর স্বভাবতই হারিয়ে ফেলে নতুনত্ব। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরোনো সম্পর্কে নতুনত্ব ধরে রাখার বিষয়ে যত্নশীল হন না জুটিরা। এর ফলেও সম্পর্কে বহুগামিতার ফাঁদ খুলে যায়। (৫) এছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে। যেমন স্বামী বা স্ত্রীর যৌনতার অনীহা, অন্যের সঙ্গে তুলনা, ঈর্ষা, ঝগড়াটে স্বভাব বা কাউকে নিজের জন্য যোগ্য মনে না করা ইত্যাদি। তবে দিনশেষে কঠিন সত্য এটাই যে প্রাণী হিসাবে মানুষ বহুগামী, তা সে মানসিকভাবেই হোক কিংবা বাস্তব জীবনে। খুব মানুষই আছেন এই ব্যাপারটির বাইরে। (One Love? Don’t Think So: 4 Gaping Flaws With The Concept Of Monogamy’—Mia Bates)
কাতারের দোহা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মার্টিন স্টুয়ার্ট এক গবেষণায় ৫০০ পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এঁদের মধ্যে তিনি ২৭ ধরনের পুরুষের খোঁজ পেয়েছেন। তাঁর ধারণা হয়েছে, বিবর্তনের ধারাই আসলে পুরুষকে প্রতারক করে তুলেছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বলেছেন, জীবনে কখনো-না-কখনো তাঁরা স্ত্রী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা এ কাজটি করেছেন তাঁদের বর্তমান সঙ্গিনীর সঙ্গেই। আর তাঁদের সবাই এমন আচরণের পেছনে কোনো না-কোনো যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। প্রশ্নটি তখনই ওঠে যখন কোনো নারী হঠাৎই আবিষ্কার করেন যে, তাঁর স্বামী বা প্রেমিক অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন এবং ক্রমাগত মিথ্যে বলে যাচ্ছেন। “আমরা আজ যে আচরণ করছি–অনেক ক্ষেত্রে তার শেকড় প্রোথিত সুদূর অতীতে–আমাদের আদি পুরুষের মধ্যে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়–আদি পুরুষেরা কেন বহুগামী হতেন? বিবর্তনবাদ অনুযায়ী, এর একটি উত্তর হতে পারে প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদ।”