‘কি গো, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?’
কাঞ্চন চোখ বুজে জবাব দিল, ‘হুঁ। তাকাব না, আমার নিজেকে ভয় করছে। আমার নিজেকে বড় দীন, বড় অসহায় মনে হল।‘
‘শোনো?’
‘কি?’ হঠাৎ রেখা দু-হাতে কাঞ্চনের ডান হাতটা ধরে বলল, ‘শোনো!’
কাঞ্চন অস্ফুটে বলল, ‘কি?’
‘এই মালাটা আমায় পরিয়ে দেবে?’
গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়ল। গাড়োয়ান ডাকল, ‘বাবু?’
‘কি?’
‘খিদিরপুর।’
রেখা প্রায় আর্তনাদ করে বলে উঠল, ‘দাও, পরিয়ে দাও।’
কঞ্চন বিমূঢ়ের মতো রেখাকে মালা পরিয়ে দিচ্ছিল, সেই সময় পরদাটা উঠেই আবার নেমে গেল। ঘাড় হেঁট করে দুজনে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ল। কাছেই ট্রাম-স্টপ। চৌরাস্তায় একটা পুলিশ। তাছাড়া জায়গাটা নির্জন।
রেখা ব্যাগ খুলে দুটো টাকা দিল। কাঞ্চন পকেট থেকে একটা আধুলি বের করে টাকাটা গাড়োয়ানের হাতে দিতেই সে চটে উঠে বলল, ‘সে কি? পাঁচ টাকার কম হবে না।’
কাঞ্চন ব্রুদ্ধ হয়ে বলল, ‘কেন? তুমিই তো বলেছিলে।‘
গাড়োয়ান বলল, ‘ফুর্তি করবেন, হোটেল ভাড়াভি দিবেন না?’
প্রায় ফিসফিস করে কাঞ্চন বলল, ‘কি বললে?’ জিভে তার কথা জড়িয়ে গেল। আর রেখা চমকে দুহাতে নিজের কান চেপে ধরতে যাওয়ায় মালাটা হাত থেকে রাস্তায় পড়ে গেল।
তারপর সম্পূর্ণ অপরিচিতের মতো দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে দ্রুত পায়ে তারা খানিকটা হেঁটেছিল। কিন্তু কাঁদে নি। কারণ একান্তে কাঁদবার মতো কোনো আশ্রয় তাদের জানা ছিল না।