–রক হাডসন, বেশ জমবে, মন্তব্য করল নন্দিতা।
ড্রেস সার্কেলে কর্ণারের দিকে দু’টো সীট নিয়েছে মৃগাংক। এয়ার কণ্ডিশনড় সিনেমা হল, আবছা মৃদু আলো, সিনেমা এখনো শুরু হয়নি। মৃগাংক ভাবছিল, নন্দিতা এখনো কেমন হাসিখুশি, এখনো চার্ম রয়েছে, বাসবীর মত খিটিয়ে যায়নি। অথচ বয়সে বাবীর চেয়ে বড়ই হবে। ওর শরীর থেকে কেমন একটা মৃদু মিষ্টি সুন্দর গন্ধ আসছে, ঘামের গন্ধ নয়। পরক্ষণেই মনে পড়, ওদেব অফিসটা এয়ার কণ্ডিশন, তাইত নন্দিতার চেহার এত ফ্রেশ, একটুও টাল খায়নি। তাছাড়া সঙ্গে বিলেতি সেন্টের শিশি রয়েছে, এইতো একটু আগে ব্লাউজে একটু মেখে নিল।
হলের আলো নিভে গেল ক্রমে। ট্রেলর ছবি শুরু হয়েছে। একটু আগেও দুজনে ফিসফিস করে কথা বলছিল, এখন অবশ্য ততটা বলছে না। মৃগাংক ভাবছিল, নন্দিতার শরীরটা এখনো পৃথিবীর গভীরের মত রহস্যময়। যৌবনের রেখাগুলি কেমন অদ্ভুতভাবে আকর্ষণ করে। মৃগাংক অনুভব করে ‘ব দেহের তাপ বাড়ছে। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে নন্দিতার একখানা হাত নিজের হাতে তুলে নিল, ফেলতে লাগল আলতোভাবে। নন্দিতা কোন আপত্তি করল না। পরনে স্লিভলেস ব্লাউজ। ওর অনাবৃত হাত বেয়ে, মৃগাংকর হাত উঠল কাঁধ পর্যন এলোমেলোভাবে। তারপর কাঁধ বেয়ে সাপের মত কোমরে নামল ওর হাত, আস্তে আস্তে বিলি কাটছে কোমরের কাছাকাছি অঞ্চলে কিন্তু নন্দিতা নির্বিকার। বরং ওর মুখে যেন একটা প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের হাসি। একটু পরে নন্দিতা নিচু হল, ওর হাতটা সরিয়ে দিল আলতোভাবে। ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল, তুমি আজ বড় দুষ্টুমি করছ, টি বয়। ও মৃদু হাসছিল।
সিনেমা ভাঙ্গল রাত্রি আটটা নাগাদ। নন্দিতা বলল, এবার তুমি বাড়ি ফিরবে তো।
—এখন বাড়ি ফিরে কী করব? আজ বাসবী: নেই, রাগ করে বাপের বাড়ি গেছে।
—ও বুঝলাম, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া, তাই আমাকে মনে পড়ল।
–না, ইয়ার্কি নয়, একেবারে ডিসগাস্টেড হয়ে গেছি। চল, কোথায়ও রাতের খাওয়াটা সেরে নেয়া যাক্।
পার্কস্ট্রিটে একটা রেস্তেরাঁর সামনে ওদের ট্যাক্সি থামল। রেস্তেরাঁর মুখেই একটা ভিখিরি। স্ট্রেঞ্জ, এখানেও ভিখিরি, দেশটাকে দেখছি এরাই খাবে। বিদেশিদের কাছে আর প্রেস্টিজ রইল না। মৃগাংকর চোখ সরু হল :
এয়ার কণ্ডিশনড রেস্তেরাঁ, ভেতরে কেমন অনুজ্জ্বল আলো, চারদিকে মোহময় পরিবেশ, বিলাস: নারী-পুরুষদের দল, রঙিন প্রজাপতির মত উড়ছে একটু দুরে উঁচু ফ্লোরে ক্যাবারে ড্যান্সার, সমস্ত শরীরে নামমাত্র পোশক দু’পিস। সঙ্গে মিউজিকের চড়া সুর। নাচ শুরু হয়েছে।
এপাশে একটা টেবিল বুক করল ওরা। ফ্রায়েড রাইস, চিকেন তন্দুরি, এছাড়া বিয়ার এক বোত।
–তোমার চলে তো, মৃগাংক জিজ্ঞেস করল।
রহস্যের হাসি হেসে ঘাড় নাড়ল নন্দিতা। খেতে খেতে অল্প-সল্প গল্প করছে, মাঝে মাঝে মৃগাংকর দৃষ্টি ক্যাবারে ড্যান্সারের দিকে, ওর দৃষ্টি যেন ঘোলাটে হয়ে আসছে। ঘোলা • চোখ দুটো নন্দিতার শরীরে কি যেন খোঁজ করছে। এক এক সময় ওর মনে হচ্ছে, নন্দিতাই বুঝি কাবারে নাচছে। এখন নন্দিতা উচ্ছল, হাসছে, ফুলছে, ক্যাবারে মেয়েটির মত ওর যৌবনের রেখাগুলি বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে মৃগাংকর চোখে। ওর মনের আদিম গুহায় নন্দিতাকে ঘিরে কয়েকটি কামার্ত চিন্তা আবর্ত সৃষ্টি করল।
মৃগাংক হঠাৎ ফস করে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা নন্দিতা, তুমি নাচতে পারো।
–হঠাৎ!
–না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
খাওয়া-দাওয়ার পালা চুকলে রেস্তেরাঁর বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এল দুজনে।
–এবার, জিজ্ঞেস করল মৃগাংক।
—চল, আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে, নন্দিতা হাসছে, রহস্যময় ওর হাসি।
–চল, নন্দিতা ওকে দুর্নিবারভাবে টানছিল, ওর আকর্ষণ এড়ানো মৃগাংকর পক্ষে এই মুহূর্তে দুষ্কর।
পার্কস্ট্রীট থেকে একটা হলদে কালো ট্যাক্সি ছুটল পাম এভেনিউর একটা ফ্ল্যাট লক্ষ করে। ট্যাক্সির অন্ধকারে মৃগাংক বারকয়েক জড়িয়ে ধরল নন্দিতাকে, চুমু খেল, শিখ ড্রাইভারের গোপন লোভাতুর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে।
ট্যাক্সি থেকে নেমে নন্দিতা বলল, এখান থেকেই বিদায় নেবে, বসবে না একটু। দ্বিরুক্তি না করে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে নামল মৃগাংক।
নন্দিতার ফ্ল্যাট ছোট হলেও বেশ ছিমছাম, সাজানো গোছানো। কিছুটা বিলাস বহুলই বলা চলে। নন্দিতার শোবার ঘরে ঢুকল ওরা।
প্লিজ, বোস একটু, এক্ষুণি আসছি বলে নন্দিতা পাশের ঘরে গেল। এবার মৃগাংক ঘরের সবকিছু দেখতে লাগল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ঘরের একপাশে হালফ্যাশানের শোবার খাটে ডানলোপিলোর নরম বিছানা। আর একপাশে একটা ওয়ারড্রোব ও ড্রেসিং টেবিল, সবই ঝকঝকে, তকতকে। ঘরের দেয়ালে কয়েকটা ক্যালেণ্ডার, সবই বিদেশি মেয়েপুরুষের ছবিওয়ালা। ঘরের আলো মৃদু নীল। এই আলোয় সবকিছুই কেমন মায়াময় মনে হয়। মৃগাংক ঘুরে ফিরে এইসব দেখে বিস্মিত হচ্ছিল মনে মনে। নন্দিতা আগের মত নেই, অনেক পালটেছে। আশ্চর্য, সামান্য কয়েকটা বছরে এত পরিবর্তন। এমন সময়ে নন্দিতা ঘরে ঢুকল, ধীরে ধীরে লঘু পদক্ষেপে। অবাক হল মৃগাংক। ওর পরনে হালকা পিংক কালারের নাইটি, লেসের। তার নীচে আর কিছু নেই। নাইটির স্বচ্ছলতা ভেদ করে ওর চোখ আনারস রংয়ের শরীর দেখতে পেল। নন্দিতা এখন মৃগাংকর খুব কাছে, এত কাছে যেখান থেকে মেয়েদের শরীরের গন্ধ পাওয়া যায়। হালকা গোলাপ ফুলের গন্ধ। নন্দিতা ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আলতোভাবে ওর কাঁধে হাত রাখল। চোখের কালো তারা নাচিয়ে প্রশ্ন করল, কেমন। লাগছে? ডু আই লুক চার্মিং? তারপর এক ধরনের হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল। মৃগাংকর মনে হল, ওর যেন নেশার মত হয়েছে। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত রঙিন মোহময়। নন্দিতা এবার আরো কাছে। মৃগাংকর সমস্ত শরীরে কেমন ঝিনঝিনে ভাব। মহুয়ার। গন্ধে পাগল ভালুকের মত উত্তেজনায় ওর শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। এইসব। মুহূর্তে নিজেকে যুক্তি দিয়ে সংযত করে রাখা যায় না। মৃগাংকও পারল না। প্রচণ্ড আবেগে সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরল নন্দিতাকে, নন্দিতার নরম পায়রার মত উষ্ণ শরীরকে। ঘরের মৃদু নীল আলো নিভেছে। নন্দিতা ও মৃগাংক নরম বিছানার অন্ধকারে। শরীরের ভাজে ভঁজে কিছুটা খেলা। হঠাৎ মৃগাংকর কী যেন মনে হল। কপালে কয়েকটা কুঞ্চিত রেখার সারি। কেমন একটা অপরাধবোধ নোঙর ফেলতে চাইছে ওর মনে। কিন্তু নন্দিতা ওকে বাঘিনির মত জাপটে ধরেছে। আর থামবার কোনো উপায় নেই। ক্ৰমে মৃগাংক নিজেকে হারিয়ে ফেলল। ওর নিঃশ্বাস এখন ঘনতর। ক্রমে একসময় বাঘিনি শান্ত হল, ঝড়ের পরে শান্ত সকালের মত।