এর মধ্যে বাসটা সবে কাকুড়গাছি এসে থেমেছে। দিব্যেন্দুর পিছন দিক থেকে এক ভদ্রমহিলা ধীরে ধীরে গেটের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য ঠিক দিব্যেন্দুর সিটের পাশে এসে দাঁড়ায়। ওর শাড়ির আঁচলটা অজান্তেই দিব্যেন্দুর কোলের ওপর। দিব্যেন্দু আলতো ভাবে হাত দেয় আঁচলে। আঁচলের শেষ প্রান্তে একটু পোড়ার চিহ্ন, বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে। দিব্যেন্দু দু-আঙুলের মাঝখানে নিয়ে আঙুল দিয়ে পোড়াজায়গাটা ঘষে। একটু একটু করে আঁচল সরে যাচ্ছেনাগালের বাইরে। চকিতে হাত সরিয়ে নিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে দিব্যেন্দু ভদ্রমহিলার যাওয়ার পথে। আনমনে ভাবে দুব আগের কথা। নীতা দিব্যেন্দুর সামান্য ঝগড়াতে নীতা শাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল। পারেনি দিব্যেন্দু নিভিয়েছিল ছুটে এসে। ছ্যাৎ করে ওঠে বুকের ভিতর। আচমকা হাতের আঙুলে নজর পড়তেই দেখে দু-আঙুলের ফাঁকে শাড়ির পোড়া অংশ। ছম্ করে সিট ছেড়ে উঠে পড়ে মাঝপথে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। ফিরতি বাসে উঠে পড়ে। সারা রাস্তা কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে দিব্যেন্দু। অজানা আতঙ্কে কেমন যেন সিঁটিয়ে যায়। হঠাৎ মনে পড়ে কদিন আগেও গ্যাস ওভেনের আগুনে নীতার শাড়ির আঁচল।
চৌমাথা, চৌমাথা কন্ডাক্টরের হাঁকডাকে ভাবনার স্রোতে বাধা। ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে দিব্যেন্দু। দ্রুত বাড়ির পথ ধরে।
কলিং বেলের আওয়াজে ভিতর থেকে নীতা হাঁকে—কে? আমি, দরজা খোলো।
অসময়ে দিব্যেন্দুর গলার আওয়াজে ছুটে আসে নীতা। সদ্যস্নাতা, এলোচুল। স্লিভলেস ব্লাউজ, পরনে আকাশ নীল শাড়ি, কপালে মেরুন টিপ। তাড়াতাড়ি গ্রিল গেটখুলে সামনে দাঁড়ায় দিব্যেন্দুর। হঠাৎ গলার নিচে হাতটা বাড়িয়ে–
–কী গো, শরীর খারাপ করেনি তো?
–না, না।
—তাহলে অসময়ে অফিস না গিয়ে চলে এলে।
কথা সরে না দিব্যেন্দুর।
নীতার চোখে চোখ। কী যেন খোঁজার প্রয়াস। দিব্যেন্দু আলতো করে নীতার শাড়ির আঁচলটা হাত দিয়ে স্পর্শ করে। একটু একটু করে টেনে আনে নিজের বুকের কাছে। আরো কাছে। ভালো করে আঁচলের প্রতিটি ইঞ্চি জরিপ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস। ফেলে। নীতা বলে ওঠে–কী হল, চোখ মুখ লাল কেন। না, কিছু না। ঘরে চলো।